নৈতিক মানবতা ও সুফি দর্শনের আলোকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও অনুষ্ঠিত হয়েছে গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারী মেধা বৃত্তি পরীক্ষা। মাইজভাণ্ডারী ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এবং দারুল ইরফান রিসার্চ ইনস্টিটিউট (ডিরি)-এর সহযোগিতায় ‘১২তম গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারী মেধা বৃত্তি পরীক্ষা ২০২৫’-এর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের ‘জুলাই বিপ্লব হল’-এ চট্টগ্রাম মহানগর কেন্দ্র-০২ (গরীবে নেওয়াজ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র)-এর বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বৃত্তিপ্রাপ্ত মোট ৮১ জন ও অনলাইনের ৯ জন কৃতী শিক্ষার্থীদের মাঝে এই বৃত্তি ও পুরস্কার প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ তৈয়ব চৌধুরী। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে এমন উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “শুধুমাত্র জিপিএ-৫ বা প্রাতিষ্ঠানিক সনদ অর্জনই শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হতে পারে না। শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য হলো একজন ভালো ও নৈতিক মানুষ হওয়া। মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফ শিক্ষার সাথে নৈতিকতার যে সংযোগ ঘটিয়েছে, তা বর্তমান সমাজ সংস্কারে অত্যন্ত জরুরি। এই বৃত্তি পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতার মনোভাব এবং মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করবে।”
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মাইজভাণ্ডারী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান, দারুল ইরফান রিসার্চ ইনস্টিটিউট (ডিরি)-এর ম্যানেজিং ট্রাস্টি ও গাউছিয়া আহমদিয়া মঞ্জিলের নায়েব সাজ্জাদানশীন সৈয়দ ইরফানুল হক মাইজভাণ্ডারী। তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হলো সুফি সভ্যতা বা নৈতিক মানব ধর্মকে ধারণ করে একটি মানবিক সমাজ গঠন করা।”
সরওয়ার কামাল ও মোহাম্মদ আরিফুল ইসলামের যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. নূ ক ম আকবর হোসেন, চবি’র ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো. মোরশেদুল আলম এবং ১২তম গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারী মেধা বৃত্তি পরীক্ষা ২০২৫-এর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও চবি’র ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল সরওয়ার, আঞ্জুমানে মোত্তাবেয়ীনে গাউছে মাইজভাণ্ডারী (শাহ্ এমদাদীয়া) কেন্দ্রীয় কার্যকরী সংসদের সমাজকল্যাণ সম্পাদক মহিউদ্দীন এনায়েত। মোটিভেশনাল স্পিকার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. শামসুদ্দীন শিশির শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান শেষে অতিথিরা কৃতী শিক্ষার্থীদের হাতে সম্মাননা ও পুরস্কার তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে আঞ্জুমানে মোত্তাবেয়ীনে গাউছে মাইজভাণ্ডারী (শাহ্ এমদাদীয়া) কেন্দ্রীয় কার্যকরী সংসদ, চট্টগ্রাম জেলা কার্যকরী সংসদ, চট্টগ্রাম মহানগর কার্যকরী সংসদ, চট্টগ্রাম মহানগরের আওতাধীন কোতোয়ালী, খুলশী, আকবরশাহ, ডবলমুরিং-সদরঘাট, বন্দরপতেঙ্গা ও পাহাড়তলী থানা কার্যকরী সংসদের কর্মকর্তাবৃন্দ, মাইজভাণ্ডারী ফাউন্ডেশন, দারুল ইরফান রিসার্চ ইনস্টিটিউট (ডিরি)-এর সদস্যবৃন্দ ও বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আঞ্জুমানে মোত্তাবেয়ীনে গাউছে মাইজভাণ্ডারী (শাহ্ এমদাদীয়া) চট্টগ্রাম মহানগর কার্যকরী সংসদ ও আওতাধীন থানা কার্যকরী সংসদের সার্বিক সহযোগিতায় এই অনুষ্ঠান সফলভাবেসম্পন্ন হয়।
উল্লেখ্য, গাউছুল আজম মাওলানা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী এঁর আদর্শ ও বর্তমান সাজ্জাদানশীন সৈয়দ এমদাদুল হক মাইজভাণ্ডারীর নির্দেশনায় আঞ্জুমানে মোত্তাবেয়ীনে গাউছে মাইজভাণ্ডারী (শাহ্ এমদাদীয়া) সমাজ সংস্কার ও নৈতিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৭ ও ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে দেশের ১৪টি জেলার ৩৩টি কেন্দ্রে ও অনলাইনে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ১০টি শ্রেণির প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে।
মাইজভাণ্ডারী তরিকার প্রবর্তক, গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারী মাওলানা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (ক.)-এঁর জন্মদ্বিশতবার্ষিকী উদযাপন ও আগামি ১০ মাঘ ২৪ জানুয়ারি ২০২৬-এ ১২০তম পবিত্র ওরশ শরীফ উপলক্ষ্যে এসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।