গণমাধ্যম হচ্ছে সমাজের দর্পণ। এর স্বাধীনতা ও দায়বদ্ধতা—দুটিই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সাংবাদিকরা কতটুকু স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন, সেটি জাতির গণতান্ত্রিক পরিমাপেরও প্রতিফলন।
শনিবার (১১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে আয়োজিত ‘গণমাধ্যম সংস্কার: চ্যালেঞ্জ ও নীতি প্রস্তাবনা’ শীর্ষক পলিসি ডায়ালগে আলোচকরা এসব কথা বলেন।
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সাংবাদিক সমিতি এ নীতি সংলাপের আয়োজন করে।
সংলাপে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ বলেন, ‘আমরা এমন একটি পরিবর্তিত গণমাধ্যম দেখতে চাই, যেখানে একজন সাংবাদিক কোনও পক্ষের চাপ ছাড়াই ঘটনার গভীরে গিয়ে সত্য তুলে ধরতে পারবেন— যেখানে অনুসন্ধানই হবে সত্যের সমাহার, আর দায়িত্ববোধই হবে সাংবাদিকতার মূল শক্তি।’
ঢাকা পোস্টের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘অনলাইন গণমাধ্যম আজ বাংলাদেশের তথ্যপ্রবাহের মূল স্রোতে পরিণত হয়েছে। তবে এই খাতটি যেমন দ্রুত বেড়েছে, তেমনি একাধিক চ্যালেঞ্জও তৈরি হয়েছে। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো তথ্যের সত্যতা ও যাচাই-বাছাই নিশ্চিত করা।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাংবাদিকদের নিরাপত্তা, তথ্যের গোপনীয়তা, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাব—সব মিলিয়ে এখন একটি ভারসাম্যপূর্ণ নীতি প্রয়োজন, যাতে গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, আবার একই সঙ্গে জবাবদিহিতার আওতাতেও থাকে।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের জোনাল এক্সিকিউটিভ অফিসার জুলকার নায়ন বলেন, ‘সাংবাদিকদের ন্যায্য বেতন ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে মানসম্পন্ন সাংবাদিকতা টিকে থাকতে পারে না। গণমাধ্যমের টেকসই উন্নয়নের জন্য এটা এখন সময়ের দাবি।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মিনহাজ উদ্দিন বলেন, ‘সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পূর্বশর্ত। ভয় বা চাপের মধ্যে থেকে কখনও সত্যিকারের সাংবাদিকতা সম্ভব নয়। সরকারকে এ বিষয়টি অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।’
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) সরকার মোহাম্মদ শামসুদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশে এখনও ডিফেন্স জার্নালিজমকে একটি বিশেষায়িত ক্ষেত্র হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়োজন আছে। সাংবাদিকদের এই বিষয়ে প্রশিক্ষণ, তথ্যপ্রাপ্তির সুযোগ ও নীতিগত সহায়তা নিশ্চিত করা জরুরি।’
ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘ইসলামে সত্য প্রকাশ ও ন্যায়ের প্রতি প্রতিশ্রুতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গণমাধ্যমও যদি এই নীতিকে অনুসরণ করে, তাহলে সমাজে জবাবদিহিতা, ন্যায্যতা ও মানবিক মূল্যবোধ নিশ্চিত করা সম্ভব।’
প্যানেল ডিসকাশনের সমাপনী বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতার মূল ভিত্তি। সাংবাদিকের ব্যক্তিগত মত, রাজনৈতিক ঝোঁক বা প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থ কখনোই সংবাদ উপস্থাপনে প্রভাব ফেলতে পারে না। সত্যকে যাচাই করে নিরপেক্ষভাবে তুলে ধরা হলো পেশাদার সাংবাদিকতার মূলনীতি।’
অনুষ্ঠানে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সাংবাদিক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা রাজিউর রহমান, সভাপতি কালাম মুহাম্মদ, সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম পরশ সহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।