রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার মৈশালা (পালপাড়া) গ্রামে গৃহবধূ দীপা রানী পালের (২২) আলোচিত রহস্যজনক আত্মহত্যার ঘটনায় ১৩ দিন পার হলেও এখন পর্যন্ত অভিযুক্ত কোন আসামি গ্রেফতার হয়নি। আসামিদের দ্রুত গ্রেফতারপূর্বক সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৪ জুন) দুপুরে মৈশালা পালপাড়া নিজ বাসভবনে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে দীপার পরিবার তার মৃত্যুকে আত্মহত্যা নয়, বরং পরিকল্পিত ধর্ষণ ও আত্মহত্যার প্ররোচনা বলে দাবি করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে দীপার পরিবার দাবি করে, ঘটনার আগের দিন রাতে দীপাকে কৌশলে বাড়ি থেকে ডেকে নেয়া হয় এবং রাতে তার সঙ্গে অমানবিক কিছু করা হয়। যার প্রেক্ষিতে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হন।
সংবাদ সম্মেলনে দীপার স্বামী সিঙ্গাপুরপ্রবাসী মিঠুন পাল বলেন, “১১ জুন রাতে আমার স্ত্রী বাড়ির সকলের অগোচরে বাড়ি থেকে বের হয়। পরে রাত আনুমানিক ১ টার সময় আমার মোবাইলে একজন কল দিয়ে বাড়ির বাইরে আসতে বলে। আমি বাড়ির বাইরে বের না হয়ে ফোনেই তাদের সাথে কথা বলতে চাই। কিন্তু তারা ফোনে কোন কথা না বলে ফোন কেটে দেয়। পরদিন (১২ জুন) সকালে পার্শ্ববর্তী মৈত্রডাঙ্গী এলাকার তিন যুবক শাহাদত ওরফে সাহাই, সালাম ও মাসুদ তাকে ফেরত নিয়ে আসে। এসময় তারা বলেন, আমার স্ত্রী রেল স্টেশনে বসেছিল তারা দেখতে পেয়ে নিয়ে আসে। ফেরার পর তার শরীর স্বাভাবিক ছিল না এবং সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিল। হাতের শাঁখা, কানের দুল ও সিঁথিতে সিঁদুর ছিল না। এর কিছুক্ষণ পরেই সে ঘরে ঢুকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে। ঘটনার বিবরণে আমার স্ত্রী মৃত্যুর আগে জানিয়েছিল রাতে কয়েকজন তাকে কালুখালী একটি বাড়িতে নিয়ে যায় এবং তার প্রতি জোর জবরদস্তি চালায়। তারা তার কাছ থেকে নগদ ১৪ হাজার টাকা ও কানের দুল ছিনিয়ে নেয়। তার কথাতে বোঝা গিয়েছিল ওই রাতে ওরা তার সঙ্গে খারাপ (শারীরিক) সম্পর্ক করেছে। বিধায় ফিরে এসে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়। এ ঘটনায় আমার শ্বশুর বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।"
তিনি আরও বলেন, ‘সাগর খান’ নামের এক যুবকের সঙ্গে ফেসবুকে তার স্ত্রী'র নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং যাদের কারণে সে আত্মহত্যা করেছে তাদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন দীপার পরিবার।”
এসময় দীপার শাশুড়ি বলেন, আমার বৌমার সাথে আমার কোন দ্বন্দ্ব ছিলো না। আমরা মিলেমিশেই একসাথে সংসার করে আসছিলাম। যাদের কারণে আমার পরিবার তছনছ হয়ে গেল, আমার দুই নাতী ছেলে এতিম হলো আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্য স্বজনরাও উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা দাবি করেন, একজন মা কীভাবে দুই শিশুসন্তান রেখে এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে? নিশ্চয়ই এর পেছনে কোন কারণ রয়েছে। পুলিশের কাছে আমাদের দাবি প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করে দ্রুত দোষীদের আইনের আওতায় আনা হোক।
পাংশা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, “এ ঘটনায় জড়িত আসামিরা বর্তমানে পলাতক রয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আশা করি অচিরেই আসামিদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হবে পুলিশ।"
উল্লেখ্য, গত ১১ জুন রাতে দীপা রানী কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বের হন এবং ১২ জুন সকালে তিন যুবক তাকে বাড়িতে পৌঁছে দেন। পরে তিনি ঘরে ঘুমাতে যান এবং সেখান থেকেই তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার পর থেকে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।