দেড় কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে ৭ ইউনিয়নের কয়েক লাখ মানুষ। এই পথ পাড়ি দিতে যেখানে ৩ থেকে ৪ মিনিট লাগার কথা, কিন্তু সেখানে আধা ঘণ্টায়ও অতিক্রম করা যায় না এ পথ। তার একটাই কারণ সড়কের নাজুক অবস্থা। পুরো রাস্তাটি জুড়েই রয়েছে ছোট-বড় খানা-খন্দকে ভড়া। প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোট-বড় নানা দুর্ঘটনা। দীর্ঘ দিন যাবত কোন সংস্কার না কারার কারণে রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই এ সড়ক দিয়ে চলাচল করছে সাধারণ মানুষ। বলছিলাম ভোলা সদর উপজেলার আলীনগর মাদ্রাসা বাজার এলাকা থেকে বাপ্তা ইউনিয়নের মিয়াজি বাড়ী পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সড়কের কথা। এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করে। সড়কটি বর্তমানে বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। সড়ক নয়, যেন মরণ ফাঁদ। এই সড়কটি দ্রুত সংস্কার করে সাধারণের চলাচলের উপযোগী করার দাবী জানিয়েছেন স্থানীয়সহ সকলেই।
জানা গেছে, ভোলা সদর উপজেলার আলীনগর মাদ্রাসা বাজার এলাকা থেকে বাপ্তা ইউনিয়নের মিয়াজি বাড়ী পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সড়কটি সর্বশেষ বছর তিনেক আগে সংস্কার করা হয়েছিল। বিগত স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ আমলে নাম মাত্র সংস্কার করে টাকা উত্তোলন করে নিয়েছে সেই সময়ের ঠিকাদাররা। আওয়ামীলীগের প্রভাবে সেই সময় কেউ কোন কথা বলতে পারেনি। সঠিকভাবে কাজ না করায় মাস কয়েক পড়েই রাস্তায় দেয়া কার্পেটিং উঠে গেছে এমন চিত্র দেখা গেছে। তার কিছুদিন যেতে না যেতেই রাস্তাটি তার পুরনো চেহারায় ফিরে যায়। দেড় কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় নানা খানা-খন্দকে পরিণত হয়েছে। যার কারণে প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোট-বড় নানা দুর্ঘটনা। দীর্ঘ দিন যাবত কোন সংস্কার না কারার কারণে রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই এ সড়ক দিয়ে চলাচল করছে সাধারণ মানুষ।
গতকাল দুপুরে এই সড়কের আগারপোল এলাকার এক স্থানে একটি গর্তে মালবাহী ট্রাক আটকে গেছে। ট্রাকের লোকজন এবং স্থানীয় বাসিন্দারা মিলে সেই আটকে পড়া ট্রাকটিকে তুলতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। দীর্ঘ ১ ঘণ্টা চেষ্টা করেও ট্রাকটিকে তুলে না পেরে অবশেষে মালামাল আনলোড করে তারপর সড়কের সেই ভাঙ্গা গর্ত থেকে কোনমতে ট্রাকটিকে উদ্ধার করা গেছে।
আরো জানা গেছে, এই সড়ক দিয়ে ভোলা সদর উপজেলার বাপ্তা, আলীনগর, চরসামাইয়া, উত্তর দিঘলদী, দক্ষিণ দিঘলদী, ভেদুরিয়া, ভেলুমিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ যাতায়াত করে থাকে। সড়কটি বর্তমানে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। শুস্ক মৌসূমে রাস্তাটি ধুলোয় আচ্ছাদিত থাকে। বর্ষা মৌসূমে ঠিক তার উল্টো চিত্র। সড়কের বিভিন্ন স্থানে খানা-খন্দকের কারণে ওইসব স্থানে পানি জমে থাকে। এই খানা-খন্দক আর কাঁদা মিশ্রিত পানি মাড়িয়েই ৭ ইউনিয়নের কয়েক লাখ মানুষ প্রতিদিন তাদের নিত্যদিনের প্রয়োজনে জেলা শহরের গিয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তাই এই জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কটি দ্রুত সংস্কার করে সাধারণের চলাচলের উপযোগী করার দাবী জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা, এই সড়কে বিভিন্ন পরিবহণে চলাচলকারী ভুক্তভোগী যাত্রী সাধারণগণ।
স্থানীয় বাসিন্দা লোকমান, নুরুল হক, মোছাদ্দেক, মাহফুজ, সুমন, লিটনসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, এই সড়কটি দীর্ঘ বছর যাবত সঠিকভাবে সংস্কার না করায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে যায়। মাঝে মধ্যে সংস্কার করা হলেও তার মান থাকে খুব নিন্ম মানের। ঠিকাদাররা তাদের ইচ্ছে মত কাজ করেই অফিস ম্যানেজ করে টাকা উত্তোলন করে নিয়ে যায়। আমরা চাই এই জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কটি মজবুতভাবে সংস্কার করে দ্রুত সাধারণ মানুষের চলাচলের উপযোগী করা হোক।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী মুনছুর এবং নানু, ইসমাইল বলেন, এই রাস্তাটি দীর্ঘ দিন যাবত অবহেলিত। বর্তমানে বর্ষা মৌসূমে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এই সড়কে চলাচলকারী মানুষ সিমাহীন দুর্ভোগ নিয়ে বাধ্য হয়ে চলাচল করছে। তাছাড়া এই সড়কে অসুস্থ্য কোন রোগীকে নিয়ে জেলা শহরের ডাক্তার দেখাতে গেলে সেই রোগী আরো অসুস্থ্য হয়ে যায়। তাই সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাগবে রাস্তাটি দ্রুত সংস্কারের দাবী জানাচ্ছি।
নুরনবী, নুরুল ইসলাম, মাইনুদ্দিন নামে বোরাক চালকগণ বলেন, এই রাস্তাটি দিয়ে বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষ চলাচল করে। আমরা যারা গাড়ী চালাই, তারা এই রাস্তা ঢুকলেই জীবনের মায়া ত্যাগ করি। কারণ রাস্তা এতটাই খারাপ যে কোন সময় গাড়ী উল্টে যেতে পারে। কয়েকদিন পূর্বে একটি অটো রিকশা উল্টে গিয়ে বেশ কয়েকজন যাত্রী আহত হয়েছে। গাড়ী খাদে পড়ে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়। বিকল্প রাস্তা আছে, কিন্তু তা অনেক ঘুরা পথ, তাই বাধ্য হয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের এই রাস্তায় চলতে হয়। রাস্তাটি দ্রুত সংস্কার করার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী জানাচ্ছি।
মনির নামের অপর রিকশা চালক বলেন, এই রাস্তটি দিয়ে প্রতিনিয়তই বড় বড় মালবাহী গাড়ী চলে। কিন্তু এই রাস্তাটিতো এই সমস্ত গাড়ী চলালচলের উপযুক্ত না। যদি এই রাস্তা দিয়ে বড় বড় মালবাহী গাড়ী চলতে হয়, তা হলে মজবুত আকারে তৈরী করতে হবে। তা না হলে রাস্তা সংস্কারের কিছু দিন বা কয়েক মাস পড়েই ওই বড় বড় গাড়ীর লোডে নষ্ট হয়ে যায়। তাই কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবী জানাচ্ছি এই রাস্তাটি দিয়ে যেন কোন বড় গাড়ী ঢুকতে না পারে। রাস্তা খারাপ থাকায় প্রতিনিয়তই ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। এতে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ভেঙ্গে যায়। যার কারণে অনেক অর্থ খরচ হয়।
এ ব্যাপারে এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী ইব্রাহীম খলিল বলেন, “ভোলা-খেয়াঘাট-দরগাহ রোড-কালিনাথ রায়ের বাজার বাইপাস সড়ক” সংস্কার নামে ১৩ কিলোমিটারের রাস্তা সংস্কারের জন্য আড়াই কোটি টাকার একটি প্রস্তাবনা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। যে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে তার মধ্যে আলীনগর মাদ্রাসা বাজার হয়ে মিয়াজি বাড়ী পর্যন্ত সড়কটিও রয়েছে। বরাদ্দ পেলে দ্রুত সড়ক সংস্কার করা হবে। তখন জনসাধারণের দুর্ভোগ লাঘব হবে।
তিনি আরো বলেন, বাইপাস সড়কগুলো যে মানের তৈরী করা হয় সেখান দিয়ে ছোট ছোট পরিবহণের সাথে বড়জোর ৫ থেকে ১০ টনি যানবাহন চলাচল করতে পারার কথা। কিন্তু সেটা না মেনে করে বড় বড় মালবাহী (২০ থেকে ২৫ টনি) গাড়ীগুলো তাদের নিজেদের তেল খরচ বাঁচানোর জন্য ৩ কিলোমিটার পথ না ঘুরে আলীনগর মাদ্রাসা বাজার হয়ে মিয়াজি বাড়ীর সামনে দিয়ে দরগাহ রোড ব্যবহার করে। বড় গাড়ীর বেশি লোডের কারণে রাস্তা যে দীর্ঘ সময় মজবুত থাকার কথা, তা না থেকে দ্রুতই নষ্ট হয়ে যায়। তাই এই সড়কগুলোতে বড় বড় মালবাহী ট্রাকগুলো ঢুকতে দেয়া যাবে না। তা হলেই সড়ক দীর্ঘ সময় ধরে মজবুত থাকবে। এর জন্য ইউনিয়ন পরিষদের লোকজনকে এই বিষয়ে আরো সজাগ থাকতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।