পটুয়াখালীতে নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা বাড়ছে

এম আমির হোসাইন প্রকাশিত: ২২ জানুয়ারী , ২০২৪ ১১:০২ আপডেট: ২২ জানুয়ারী , ২০২৪ ১১:০২ এএম
পটুয়াখালীতে নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা বাড়ছে
পটুয়াখালী-৪ আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে নেতাকর্মীদের মধ্যে শুরু হওয়া উত্তেজনা নির্বাচনের ১৫ দিন পার হলেও এখনও থামছে না। নির্বাচন পরবর্তী কলাপাড়ার মহিপুর থানার কয়েকটি ইউনিয়নে ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। এ এলাকায় প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মী মারধরের শিকার হয়েছে। ভয়েঅনেকে ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। আত্মগোপন করেছেন ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতা। ভুক্তভোগীরা মামলা করতেও সাহস পাচ্ছেন না।

পটুয়াখালী-৪ আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে নেতাকর্মীদের মধ্যে শুরু হওয়া উত্তেজনা নির্বাচনের ১৫ দিন পার হলেও এখনও থামছে না। নির্বাচন পরবর্তী কলাপাড়ার মহিপুর থানার কয়েকটি ইউনিয়নে ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। এ এলাকায় প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মী মারধরের শিকার হয়েছে। ভয়েঅনেকে ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। আত্মগোপন করেছেন ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতা। ভুক্তভোগীরা মামলা করতেও সাহস পাচ্ছেন না।


কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত আওয়ামী লীগ নেতারা। হতাশা দেখা দিয়েছে মাঠ পর্যায়ের সাধারণ কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে। গত ১৯ জানুয়ারি সন্ধ্যায় লতাচাপলী ইউনিয়নের ডংকুপাড়া গ্রামের বটতলা নামক স্থানে প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হন বরিশাল বিএম কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আসাদ মোল্লা। নৌকার প্রতীকের কর্মী আব্দুর রহিম মুসুল্লী ও তার ছেলে রাব্বী মুসুল্লী কুপিয়ে আসাদকে জখম করেন। গুরুতর আহত আসাদ বর্তমানে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। ফারুক মোল্লার ছেলে আসাদ মোল্লা। লতাচাপলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি   চেয়ারম্যান আনছার উদ্দিন মোল্লা এবং কুয়াকাটা পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল বারেক মোল্লার ভাতিজা সে। এ ঘটনায় আসাদ মোল্লার মামা নাসির গাজী বাদী হয়ে মহিপুর থানায় ৪ জনের নামে একটি মামলাও করেছেন। মহিপুর থানার ওসি আনোয়ার হোসেন তালুকদার বলেন, শুক্রবার রাতেই থানায় মামলা হয়েছে। তদন্তের পর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


 অপরদিকে একই সময় আলীপুর থ্রি পয়েন্ট এলাকায় হামলার শিকার হন ইসমাইল ফরাজী নামে এক যুবক। নৌকার কর্মীরা হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে তার দুই হাঁটু থেঁতলে দিয়েছে বলে জানা গেছে। বর্তমানে ইসমাইল ফরাজী বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তিনি লতাচাপলী ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের পান্না ফরাজীর ছেলে। এর আগে নির্বাচনের পরদিন আলীপুর চৌরাস্তায় নৌকার কর্মীদের হামলার শিকার হন মোশাররফ মোল্লা। তাকেও হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হয়। সপ্তাহখানেক বরিশাল শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরেছেন তিনি। তার হাঁটুসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে ক্ষত ভালো হলে দু’পায়ে অপারেশনের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন চিকিৎসক। মোশাররফ মোল্লা লতাচাপলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান আনছার উদ্দিন মোল্লা এবং কুয়াকাটা পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল বারেক মোল্লার ছোট ভাই।


স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ জানুয়ারি রাতে ফলাফল ঘোষণার পর থেকে ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত পটুয়াখালী-৪ আসনের মহিপুর থানার লতাচাপলী, মহিপুর, ধুলাসার, ডালবুগঞ্জ ইউনিয়ন ও কুয়াকাটা পৌর এলাকায় অন্তত অর্ধশত হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অনেক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এছাড়া নির্বাচনে ঈগল প্রতীকের সমর্থকসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলতে পারছেন না। এমনকি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার মতো ঘটনাও ঘটেছে। অন্যদিকে পরিবহন কাউন্টার ও শ্রমিক সংগঠনগুলোতে এসেছে নতুন নেতৃত্ব। নির্বাচনের পর লতাচাপলী ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ মাহবুবুর রহমান তালুকদারের আলীপুরের নির্বাচনী অফিস ভাংচুর এবং প্রদীপ ও স্বপন নামে দু’জন সংখ্যালঘুর বাড়িতে হামলা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া আলীপুরের বাজার পাহারাদার আব্দুর রহিম, ভ্যানচালক হাচান প্যাদা, মুরগি ব্যবসায়ী আলী হোসেন, মাছ ব্যবসায়ী সোহাগ, ইউপি সদস্য মিজান মুসুল্লী হামলার শিকার হয়েছেন। অপু গাজী ও আবু বক্কর মল্লিক এখনো দোকান খুলতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান আনছার উদ্দিন মোল্লাসহ আওয়ামী লীগের কয়েক নেতা।



এ বিষয়ে লতাচাপলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান আনছার উদ্দিন মোল্লা বলেন, প্রতিনিয়ত আমার হাত, পা কেটে ফেলার বিভিন্ন হুমকি-ধমকি আসছে। আমি চাই এই প্রতিহিংসার রাজনীতি বন্ধ হোক। সুষ্ঠু ধারায় রাজনীতি চলুক। লতাচাপলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. সিদ্দিকুর রহমান বিশ্বাস বলেন, নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার বিষয়গুলো উপজেলা নেতাদের অবহিত করা হচ্ছে তারা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। এদিকে কুয়াকাটা পৌর আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় থাকা সত্ত্বে ও নৌকা প্রতীকের নির্বাচনী অফিসে পৌর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সাইনবোর্ড টাঙিয়েছেন পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার। কিন্তু মেয়র আনোয়ার হাওলাদার এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদও পাননি বলে জানা গেছে। ফলে কুয়াকাটা পৌরসভায় দু’টি দলীয় কার্যালয় হওয়ায় বিভ্রান্তিতে পড়েছেন পৌর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এ ব্যাপারে কুয়াকাটা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল বারেক মোল্লা বলেন, পৌর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কোণঠাসা করার জন্য বর্তমান মেয়র নির্বাচনী অফিসকে দলীয় কার্যালয় বানিয়েছেন, যা সম্পূর্ণ দলের গঠনতন্ত্র পরিপš’ী। তিনি জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা, এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের দলীয় সদস্যপদ পাননি। বিষয়টি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আলমগীরকে অবহিত করা হয়েছে। কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোতালেব তালুকদার বলেন, কুয়াকাটায় আওয়ামী লীগের কার্যালয় একটি। মেয়র আনোয়ার হাওলাদার যেটিতে কার্যালয় করেছেন সেটি নির্বাচনী অফিস। নির্বাচন পরবর্তী যারা সহিংসতা করছে তাদের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে কঠোর ব্যব¯’া নেয়া হবে। নির্বাচনী পরবর্তী কিছু বি”িছন্ন ঘটনা ঘটেছে স্বীকার করে মহিপুর থানার ওসি আনোয়ার হোসেন তালুকদার বলেন, নির্বাচনী পরবর্তী সহিংসতা রোধে মহিপুর থানা পুলিশ সবসময় সতর্ক আছে। যারা সহিংসতা করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যব¯’া গ্রহণ করা হবে। উল্লেখ্য, পটুয়াখালী-৪ সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে টানা দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন অধ্যক্ষ আলহাজ মহিববুর রহমান মহিব। তাকে দুর্যোগ ব্যব¯’াপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। মহিব’র প্রতিদ্বন্ধী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীক নিয়ে সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ মাহবুবুর রহমান তালুকদার। হেভিওয়েট এ দুই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা জড়িয়ে পড়েছেন নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায়।

এই বিভাগের আরোও খবর

Logo