অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করতে গিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর একজন তরুণ সাংবাদিক ও কলামিস্ট ওসমান এহতেশাম ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। একটি দুর্নীতি ও অনিয়মের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর অপরাধীরা নিজেদের বাঁচাতে তার বিরুদ্ধে পরিকল্পিত মিথ্যা মামলা দায়ের করে তাকে কারাবন্দী করেছে। এ ঘটনায় দেশের গণমাধ্যমকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং তার দ্রুত মুক্তির দাবি জানিয়েছেন।
ঘটনার সূত্রপাত, ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে দুর্নীতি ফাঁস, গত ৩০শে এপ্রিল,২০২৫ ইং তারিখ বুধবার দুপুরে চট্টগ্রামের ১৯ নম্বর দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে দুর্নীতি ও অনিয়মের অনুসন্ধান করতে যান সাংবাদিক ওসমান এহতেশাম ও তার সহকর্মী মো. জাহাঙ্গীর আলম।
জন্মনিবন্ধন সংশোধনের জন্য একজন ভুক্তভোগী নারীর কাছ থেকে ৭০০ টাকা ঘুষ নেওয়ার প্রমাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে তারা ওয়ার্ড অফিসের সচিব সমর কৃষ্ণ দে, এবং জন্মনিবন্ধন সহকারী মো. মনসুরুল আলম মানিকের মুখোমুখি হন। সেখানে মানিক ঘুষ গ্রহণের বিষয়টি স্বীকার করলে সচিবের উপস্থিতিতে ওই নারীকে টাকা ফেরত দেন। এই ঘটনার ভিডিও প্রমাণ সংগ্রহ করার সময় সচিব ও মানিক তাদের সহযোগী মো. আব্দুল বারেক, ফারুক, কবির ও সোহাগকে নিয়ে সাংবাদিকদের ওপর অতর্কিত হামলা চালান।
হামলাকারীরা সাংবাদিকদের ক্যামেরা ও স্ট্যান্ড ভেঙে ফেলে, নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। যদিও পরে পুলিশের সহায়তায় মোবাইল ফোন উদ্ধার করা সম্ভব হয়, কিন্তু অন্যান্য সরঞ্জাম এবং টাকা উদ্ধার হয়নি। এই হামলায় আহত সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলমকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়।
এই হামলার ঘটনাটি বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত হলে অভিযুক্ত কর্মকর্তারা নিজেদের গ্রেফতার এড়াতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। এর ফলস্বরূপ, প্রতিবেদনের জেরে, তাদেরই পরিকল্পিত মিথ্যা মামলায় , সাংবাদিককে
গ্রেফতার হয়। তাও গণমাধ্যম দিবসে গত ৩রা মে, ২০২৫ইং তারিখে দুই শতাধিক কিশোর গ্যাং সদস্য নিয়ে সাংবাদিক ওসমান এহতেশামের বাড়িতে গভীর রাতে হামলা চালানো হয়। হামলাকারীরা তার বাসা ভাঙচুর করে, আসবাবপত্র লুট করে এবং তাকে মারধর করে। এরপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
এখানেই শেষ নয়। পুলিশ তাকে বাকলিয়া থানা থেকে কোতোয়ালী থানায় হস্তান্তর করে, যেখানে একটি পুরোনো মিথ্যা মামলায় তাকে আসামি করা হয়। উল্লেখ্য, এই মামলাটি ছিল গত বছরের আগস্ট মাসে ঘটে যাওয়া ছাত্র আন্দোলনের সময় রিকশাচালক মুহাম্মদ রমজানকে মারধরের ঘটনা নিয়ে। সেই মামলায় মোট ৮৩ জনকে আসামি করা হয়েছিল, যার মধ্যে ওসমান এহতেশামকে ৬০ নম্বর আসামি দেখানো হয়। অথচ ঘটনার দিন ও সময়ে ৪ই আগস্ট, ২০২৪ ইং তারিখে তিনি বহদ্দারহাটে সংবাদ সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত ছিলেন, তার মোবাইলে ধারনকৃত ভিডিও ফুটেজ প্রসাধন করে। একই সাথে তার মোবাইল ট্র্যাকিং এবং সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ও নিশ্চিত যায় ওসমান এহতেশাম ঘটনার সময় কোথায় ছিলেন। দীর্ঘ আট মাস পর, এই পুরোনো ও বানোয়াট মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়, তাও আবার বাকলিয়া ওয়ার্ডের দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর।
বর্তমানে কারাবন্দী এই সাংবাদিকের দ্রুত মুক্তি চেয়েছেন দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মরত সাংবাদিকরা। তারা এই হামলা ও মিথ্যা মামলাকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর চরম আঘাত বলে মনে করছেন। চট্টগ্রামসহ সারা দেশের গণমাধ্যমকর্মীরা বলেছেন, রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী তদন্ত ছাড়া কাউকে গ্রেফতার না করার নির্দেশ থাকলেও একজন তরুণ সাংবাদিককে এভাবে গভীর রাতে বাড়িতে হামলা চালিয়ে গ্রেফতার করা চরম বেআইনি ও সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থী। এই ঘটনা প্রমাণ করে, যখন একজন সাংবাদিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে কলম ধরেন, তখন তাকে কিভাবে দমন করার চেষ্টা করা হয়। এই পরিস্থিতিতে ওসমান এহতেশামের মত সৎ ও সাহসী সাংবাদিকের পাশে দাঁড়ানো আমাদের সবার নৈতিক দায়িত্ব। তারা অবিলম্বে ওসমান এহতেশামের মুক্তি এবং তার বিরুদ্ধে দায়ের করা ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। এই দাবি পূরণ না হলে তারা কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন।