রাজশাহীর তানোর পৌরসভার তিনটি হাট-বাজারে টোল আদায়ের নামে ইজারাদারদের নৈরাজ্য ও চাঁদাবাজি প্রতিনিয়ত ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। চলতি অর্থবছরে সরকার নির্ধারিত টোল তালিকার তোয়াক্কা না করে স্বনির্ধারিত মূল্যে অতিরিক্ত টোল আদায় করা হচ্ছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছ থেকে। অথচ এই অব্যবস্থাপনা ও অতিরিক্ত টোল আদায় রোধে পৌর কর্তৃপক্ষ রয়েছেন নীরব ভূমিকায়। ফলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, প্রান্তিক কৃষক থেকে শুরু করে সাধারণ ক্রেতা পর্যন্ত আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তানোর পৌরসভার অধীনে মোট তিনটি হাট রয়েছে। দক্ষিণে কালিগঞ্জহাট হাট-বাজার: ৫৯ লক্ষ টাকা ইজারা নিয়েছেন স্থানীয় মহিদুল ইসলাম।
পৌর সদরে গোল্লাপাড়া হাট-বাজার: ২৪ লক্ষ টাকা ইজারা নিয়েছেন চাপড়া গ্রামের উজ্জল।
উত্তরে তালন্দ হাট-বাজার: ২৬ লক্ষ টাকা ইজারা নিয়েছেন একই গ্রামের সেকেন্দার আলী। সর্বমোট ১ কোটি ১৯ লক্ষ টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে। তবে প্রতিটি ইজারাদারকে এর সঙ্গে ২৫ শতাংশ ট্যাং-ভ্যাট জমা দিতে হচ্ছে। সূত্রমতে, এসব হাট প্রতি সপ্তাহে দুই দিন বসে। শুক্রবার ও মঙ্গলবার বসে গোল্লাপাড়া ও কালিগঞ্জহাট, আর রোববার ও বুধবারে বসে তালন্দ হাট। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, এসব হাট ইজারা নিয়েছেন বিএনপি-সমর্থিত নেতাকর্মীরা। ফলে ইজারাদারের লোকজন অতিরিক্ত টোল আদায়ে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কৃষক ও সাধারণ ক্রেতারা অভিযোগ করেছেন— সরকার নির্ধারিত টোল রশিদ প্রদানের নিয়ম থাকলেও ইজারাদারের চেলা-চামচারা রশিদ ছাড়াই দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ বেশি টোল আদায় করছেন। এ নিয়ে প্রতিবাদ করলেই শারীরিক ও মানসিক হেনস্থার শিকার হতে হয়।
মুদির দোকানদার মজিবুর রহমান বলেন, “সরকারি তালিকা অনুযায়ী প্রতি হাটে মুদির দোকানের টোল ১০ টাকা। অথচ আমাদের থেকে ৩০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। বেকায়দায় পড়ে বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত টাকা দিতে হচ্ছে। কালিগঞ্জহাট মাছ বাজারের টোল আদায়কারী মো. সফিক দম্ভভরে জানান, দোকানপ্রতি টোল ২০ টাকা নির্ধারিত থাকলেও আমি ৬০ টাকা করে আদায় করি। সরকারি তালিকা মেনে টাকা নিলে লোকসান হবে। আমরা সব খাত ম্যানেজ করেই বাজার ইজারা নেই।
পণ্য আনলোডের ক্ষেত্রে ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানের নির্ধারিত টোল ২০ থেকে ৫০ টাকা হলেও বাস্তবে আদায় করা হচ্ছে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত। ফলে প্রত্যেক পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে কয়েকগুণ। ক্রেতারা বলছেন, অতিরিক্ত খাজনার কারণে বাজারে দ্রব্যমূল্যও অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে।
কালিগঞ্জহাটের ইজারাদার মহিদুল ইসলাম বলেন, “আমি ৫৯ লক্ষ টাকায় হাট ইজারা নিয়েছি। এর সঙ্গে ২৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়েছে। সরকার নির্ধারিত মূল্যে টোল আদায় করলে বছরে ২০ লাখও উঠবে না। তাই সরকারি তালিকা মেনে খাজনা আদায় সম্ভব নয়।” একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন গোল্লাপাড়া হাটের ইজারাদার উজ্জল ও তালন্দ হাটের ইজারাদার সেকেন্দার আলী। এ বিষয়ে তানোর পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) লিয়াকত সানমান বলেন, “প্রত্যেক হাটে ১৪৩২ সালের সরকারি মূল্য তালিকা সাইনবোর্ডে প্রদর্শন করার নিয়ম রয়েছে। তবে বাস্তবে সেটা আছে কিনা জানা নেই। সরকারি চার্ট অমান্য করে অতিরিক্ত টোল আদায়কারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া সকল ইজারাদারকে সতর্ক করা হবে। তালিকা না মানলে ইজারা বাতিলের সিদ্ধান্তও আসতে পারে।
অতিরিক্ত টোল ও চাঁদাবাজির ফলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কৃষক ও ক্রেতারা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। স্থানীয়রা বিষয়টি দ্রুত তদন্ত করে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি ও জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।