কাপ্তাইয়ে সরকারি ডিপ টিউবওয়েল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ১৯ মে , ২০২৫ ১৫:২৪ আপডেট: ১৯ মে , ২০২৫ ১৫:২৪ পিএম
কাপ্তাইয়ে সরকারি ডিপ টিউবওয়েল  বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ

বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সরকার নলকূপ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করলেও এর সুফল পাচ্ছে না অসচ্ছল নিরীহ জনগণ। নানা অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি আর দুর্নীতির চিত্র সময় সংবাদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।  অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা নলকূপ বিতরণে উপকারভোগীর তালিকা প্রস্তুত করলেও এগুলো অধিকাংশই বিএনপি দলীয় সচ্ছল ব্যক্তিদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে , যা প্রতিটি ডিপ টিউবওয়েল  ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবহার করার জন্য কার্যক্রম চলছে। ৬০টি বিতরণকৃত  ৬০ টি গভীর নলকূপের মধ্যে  ৪২টি ডিপ টিউবওয়েল অপেক্ষাকৃত অপ্রয়োজনীয় স্থানে স্থাপন করা হচ্ছে। ফলে কাপ্তাই উপজেলা পাঁচটি ইউনিয়নের বেশির ভাগ গরিব বাসিন্দারাদের ভাগ্যে জুটেনি নলকূপ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার খাওয়ার পানির সমস্যা দূরীকরণে কাপ্তাই উপজেলায় বসবাসকারীদের জন্য আপাতত যে ৬০ টি  সরকারি নলকূপের বরাদ্দ দিয়েছে তাহা উপকারভোগ করতে পারছে না খেটে খাওয়া  সাধারণ গ্রামবাসীরা। প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের পছন্দের বিএনপি'র কতিপয় সচ্ছল ব্যক্তিদের নামে  নলকূপ বরাদ্দের কারণে বঞ্চিত হচ্ছে হতদরিদ্ররা। এতে উপজেলার অনেক এলাকায়  সরলমনা মানুষেরা ক্ষুব্ধ ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়ে গেছে। অনুসন্ধানে আরো জানা যায়,  গত ৮ মাসের সময় কাল থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাপ্তাই উপজেলার জন্য ৬০টি টিউবওয়েল বরাদ্দ দিয়েছে, যা পরবর্তীতে বিতরণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে অনুসন্ধানে যাদের নাম ও দলিয় পরিচয় জানা গেছে তারা হলেন, ১। রাকিব হোসেন বাবু,  ২।মোঃ হারুন রশিদ - সহ-সভাপতি- কাপ্তাই উপজেলা বিএনপি,৩।মোহাম্মদ ইয়াছিন মামুন - সাধারণ সম্পাদক, কাপ্তাই  উপজেলা বিএনপি, ৪।  আবু হাসান চৌধুরী- সাংগঠনিক সম্পাদক, রাইখালী বিএনপি, ৫।উথোয়াইমং মারমা-সাংঠনিক সম্পাদক কাপ্তাই  উপজেলা বিএনপি,৬।নুরুল হক-কাপ্তাই উপজেলা  কৃষকদলের সভাপতি, ৭।  নুর মোহাম্মদ বাবু - কাপ্তাই  উপজেলা  জিয়া সাংস্কৃতিক সংসদ এর সভাপতি ৮ রিপা আক্তার,গৃহনী, ৯।আব্দুল মতিন সহ-সভাপতি, চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন বিএনপি, ১০। জয়নাল আবেদীন- সাংঠনিক সম্পাদক, সাবেক চিৎমরম  ইউনিয়ন বিএনপি, ১১।বেলাল  কাপ্তাই,  বিএনপি সমার্থক, ১২। বেলায়েত হোসেন, বিএনপি সমর্থক, কাপ্তাই পিডিবি'  সিবিএ সাধারণ সম্পাদক, ১৩।মোঃ আমিন, রাইখালী বিএনপি সমর্থক, ১৪।নুরুল আমিন , চন্দ্রঘোনা বিএনপি সমর্থক, ১৫।   মোঃ জুয়েল -বাবুল রাইখালী,১৬। শান্তি তনচংগ্যা ওয়াগ্গা ১৭। রুপায়ন তনচংগ্যা-মহাজনপাড়া  ওয়ান্না, ১৮। মাকসুদা বেগম - বারঘোনিয়া, ১৯।  হাজী কামাল উদ্দিন - কলাবাগান,২০। সুজয় বিকাশ চাকমা -ভাইবোন ছড়া, ২১। গুড়াছড়ি কারবারী পাড়া/অংমারমা/অংসাচিং, ২২। শহিদুল ইসলাম-কলাবাগান চন্দ্রঘোনা,২৩। মাহমুদা আক্তার -সাদেকেরঘোনা চন্দ্রঘোনা,বিএনপি সমর্থক, ২৪। চিংনু মারমা -নারাণগিরিমুখ, ২৫। রেহানা বেগম -ঘনিয়াখোলা রাইখালী, ২৬। ক্যাচিংহ্লা মারমা -চিৎমরম বিএনপি সমর্থক, ২৭। মোঃ হোসেন-ফকিরাঘোনা - চন্দ্রঘোনা, ২৮। জামাল উদ্দিন -চৌধুরী কলোনী চন্দ্রঘোনা, জামায়াত ইসলামী সমর্থক, ২৯। কাঞ্চন বেগম বারঘোনিয়া চন্দ্রঘোনা-বিএনপি সমর্থক ৩০। শামসুজ্জামান চৌধুরী বারঘোনিয়া বিএনপি সমর্থক, ৩১। বাহার মিয়া -বারঘোনিয়া চন্দ্রঘোনা, ৩২। আহসান উল্লাহ -ফকিরাঘোনা চন্দ্রঘোনা বিএনপি সমর্থক,৩৩।  আব্দুল্লা বিন ওয়ালিদ কোব্বাতের ঘোনা চন্দ্রঘোনা-বিএনপি সমর্থক, ৩৪। মোঃ রাব্বি সাদেকের ঘোনা চন্দ্রঘোনা -বিএনপি সমর্থক, ৩৫। শিপ্রা লোধ মিতিংঙ্গাছড়ি চন্দ্রঘোনা, ৩৬। ইমাম উদ্দিন- বাশঁ কেন্দ্র - কাপ্তাই  উউনিয়ন বিএনপির সদস্য, ৩৭। মোঃ  জাহাঙ্গী, ৩৮। জসিম/ইন্দু মিয়া ব্যাংছড়ি -বিএনপি সমর্থক, ৩৯। জসিম কামাল,ব্যাংছড়ি বিএনপি, ৪০। আরিফুল ইসলাম -চন্দ্রঘোনা বিএনপি সমর্থক , ৪১। মাহমুদুল হক - চিৎমরম জামাতে ইসলামী সমর্থক, ৪২।  ক্যাথোয়াই চিং মারমা - মুরালি পাড়া ওয়াগগা - বিএনপি সমর্থক। তালিকাভুক্ত এদের মধ্যে কেউ  সরকারি নির্ধারিত টাকা অফিসে যা জমা দিয়েছ, তার চেয়ে দ্বিগুণ টাকা নিয়ে কারো কারো কাছে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে।   এ ব্যাপারে কাপ্তাই উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী দপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী লিমন বর্মন জানান, নলকূপ বিতরণের তালিকা চূড়ান্ত করেছে উপজেলা জনস্বাস্থ্য বিভাগ সহকারী প্রকৌশলী শাহ আলম, তিনি মুঠোপণ বলেন, সাবেক ইউ এন ও ইউএনও জিসান বিন মাজেদ থাকাকালীন সময় সরকারের ভাবে এই বরাদ্দ আসে। তিনি ইউপি চেয়ারম্যানদের নিয়ে কলগুলোর বিতরণের তালিকা করে গেছেন।  তালিকা তালিকা অনুযায়ী   দেরিতে হলেও  বরাদ্দকৃত ডিপ টিউবওয়েল গুলো স্থাপনে   কাজ চলছে। অনুসন্ধানী তথ্যে জানা গেছে,  স্থানীয়ভাবে জানা যায়, সরকারি এ সহায়তার নিয়ম হচ্ছে প্রতি ৭টি পরিবারের জন্য একটি নলকূপ অথবা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় দেয়া হয়।স্থানীয় অধিবাসীরা জানান, সরকারি এসব গভীর নলকূপ ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গায় ও আবদ্ধ ঘরে বসানোর ফলে এর সুফল এলাকাবাসী পাবেনা। কলের এই বরাদ্দ থেকে  অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সরকারি এ সুবিধা নিজেদের মধ্যে নিয়েছে। এ ব্যাপারে  উপজেলা বিএনপি'র সভাপতি লোকমান আহমেদ ও কাপ্তাই  উপজেলা বিএনপি'র সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন মামুন বলেন নামের তালিকা অনুযায়ী সকলের মাঝে কল বিতরণ হলেও তবে অনিয়ম দুর্নীতি যাতে না হয় এ বিষয়ে  সজাগ দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। কাপ্তাই  উপজেলা সাবেক  নির্বাহী কর্মকর্তা জিসান বিন মাজেদ এর সত্যতা স্বীকার করে জানান, আমি নোয়াখালী থেকে বদলি হয়ে কাপ্তাই উপজেলায় যোগদান করি, তখন আমি নতুন হিসেবে সরকারের দেওয়া ডিপ টিউবওয়েল বরাদ্দ আসে তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়  যাদের প্রয়োজন কেবল তারাই বিশুদ্ধ পানির চাহিদা মেটাতে নলকূপ পাবে, তবে আমি কাপ্তাই থেকে চট্টগ্রামের রাউজানে বদলি হয়ে আশায় এর বিস্তারিত আর জানা নেই। জানা যায়, ঠিক ওই সময়কালে ঘটনাটি ঘটেছে তার উল্টো, এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, স্বজনপ্রীতি  ও অনিয়মের মাধ্যমে বিএনপি'র দলীয় কতিপয়  নেতাকর্মীদের নামে অধিকাংশ ডিপ টিউবওয়েল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।  এই অনিয়ম দুর্নীতির সাথে যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।  

এই বিভাগের আরোও খবর

Logo