চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ৩নং খানকানাবাদ ইউনিয়নের পূর্ব ডংরা এলাকার জমি নিয়ে পূর্ব বিরোধের জেরে একটি মিথ্যা হত্যা মামলা সাজিয়ে একটি পরিবারকে পুরুষ শূন্য করে সম্পদ আত্মসাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেছে ভূক্তভোগী একটি পরিবার।
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ৩নং খানকানাবাদ ইউনিয়নের পূর্ব ডংরা এলাকার জমি নিয়ে পূর্ব বিরোধের জেরে একটি মিথ্যা হত্যা মামলা সাজিয়ে একটি পরিবারকে পুরুষ শূন্য করে সম্পদ আত্মসাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেছে ভূক্তভোগী একটি পরিবার। ২৪ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বেলা বারোটায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস. রহমান হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ভূক্তভোগী পরিবার এই অভিযোগ করেন। লিখিত বক্তব্যে হুমাইরা সুলতানা বলেন, “বাঁশখালীর ডোংরা এলাকার বি.বি. চৌধুরী রোডস্থ চার রাস্তার পূর্ব-উত্তর রাস্তার পাশে আমার শ্বশুর মৃত আবুল কালামের জমি রয়েছে। যা উত্তোরাধিকার সূত্রে আমার শ্বাশুড়ি, আমার স্বামী লিয়াকত আলী এবং তাঁর ভাই শওকত আলী, নবাব আলী ও বোনের মালিকানা রয়েছে। আমার শ্বশুরের মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরতে আমার স্বামী লিয়াকত ও ভাসুর শওকত বিদেশে কর্মরত থাকাবস্থায় স্থানীয় মোহাম্মদ শরীফ ও তার পরিবার উক্ত জমিতে একতলা ভবন নির্মান করে। বিগত কয়েক মাস পূর্বে আমার শ্বাশুড়ির মৃত্যুতে পরিবারের সকল ভাই-বোন একত্রিত হলে উক্ত জমি উদ্ধারে সামাজিক ভাবে শালিস বিচারের আবেদন করে। পরবর্তিতে এই বিষয়ে স্থানীয় ইউপি মেম্বার দিদার সহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে একাধিক শালিস বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মোহাম্মদ শরীফ গং এর পক্ষে তাদের খালাত ভাই মোস্তাফিজ মধ্যস্ততাকারী হিসেবে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। সর্বশেষ গত ১৬ ডিসেম্বর উভয় পক্ষের সার্ভেয়ার এনে জমি পরিমাপ করে চিহ্নিত করার বিষয়ে স্বিদ্ধান্ত হয়। একই সাথে সালিশকারদের পক্ষ থেকে আরো একটি নিরোপেক্ষ সার্ভেয়ার উপস্থিত থেকে জমি পরিমাপের সিদ্ধান্ত হয়। গত ৬ ডিসেম্বর এই সিদ্ধান্তের উভয় পক্ষের সম্মতিতে একখানা লিখিত কাগজ সাক্ষরিত হয়েছে।”তিনি বলেন, “সেই মোতাবেক আমার স্বামী, ভাসুর আর দেবরের পক্ষে একজন সার্ভেয়ার যার নাম আব্দুল হাফেজকে নিয়ে জমির স্থলে উপস্থিত হয়। যথা সময়ে সালিশকার ও মধ্যস্ততাকারি ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার দিদার ও আনোয়ার উপস্থিত হন। এসময় নিহত মোহাম্মদ শরিফ তার দুই ভাই, ভাই পো ও তাদের পক্ষের মধ্যস্থতাকারি মোস্তাফিজ উপস্থিত হলেও তারা কোন সার্ভেয়ার নিয়ে উপস্থিত হন নাই। এমতাবস্তায় প্রতিপক্ষের মধ্যস্ততাকারী রাতে মোহাম্মদ শরীফ গংদের সাথে আলাপ করে পরবর্তি তারিখ জানাবে বলেন। এই পরিস্থিতিতে সালিশকারেরা সেদিনের মতন শালিস মুলতবি করে আমার স্বামী ও ভাসুর আমাদের পক্ষের সার্ভেয়ার আব্দুল হাফেজকে নিয়ে নিজ ঘরে ফিরে আসেন। সার্ভেয়ার সহ অন্যান্যরা আমাদের ঘরে দুপুরের খাবার খেয়ে যার যার গন্তব্যে চলে যান। দুপুর বেলা জানতে পারি মোহাম্মদ শরিফ ঘটনাস্থলে তার একতলা ভবনের পাশে মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছেন। পরবর্তিতে স্থানীয়দের মারফত জানা গেছে মোহাম্মদ শরিফ সেখানে পড়ে যাওয়ার পর নিজে স্থানীয় কামালকে ডেকে তাকে বাসায় পৌছে দিতে বলেন। এসময় কামাল অদূরে মোহাম্মদ শরীফের ভাই হাসান শরীফকে দেখে তাকেও ডেকে নেন। এসময় পার্শ্ববর্তি দোকানের মালিক জাহাঙ্গীর ও মোঃ মিয়া এগিয়ে আসেন। পুরো সময় এই তিনজন ব্যক্তি এবং মোঃ শফিরের ভাই হাসান শরিফ ছাড়া কেউ উপস্থিত ছিল না। উল্লেখ্যে দোকানদার জাহাঙ্গির মোহাম্মদ শরিফ গংদের বিরোধপূর্ণ ভবনেরই একটি দোকানের ভাড়াটিয়া। একাধিক ভিডিওতে উল্লেখিত তিনজন ও নিহতের ভাই হাসান শরীফ বিষয়টি স্বিকারও করেন। উদ্ধারকারীদের ভাষ্য মতে মাটিতে পড়ে থাকা মোহাম্মদ শরীফ এসময় জামা আপড়ে পায়খানা প্রসাব করে দিয়েছিলেন। স্থানীয় ৩ জন একাধিক ভিডিওতে বলেছেন মাটিতে পড়ে থাকা মোহাম্মদ শরীফ তাদেরকে তাকে বাসায় পৌছে দিতে বলেন এবং তার পকেটে থাকা টাকার কথা বলেন যে টাকা পরবর্তিতে মোহাম্মদ শরিফের ভাই হাসান শরীফ নিজ জিম্মান নিয়েছিলেন। এছাড়া মোহাম্মদ শরীফ আর কোন কথা কিংবা তাকে কেউ মেরেছে মর্মে অভিযোগ উক্ত তিনজন প্রত্যক্ষদর্শীর সামনে বলেননি। অসুস্থ মোহাম্মদ শরীফকে প্রথমে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক এস এ রাসেলের কাছে নিয়ে গেলে তিনি রোগীর কোন প্রেসার পাচ্ছেন না বলে জানিয়ে দ্রুত তাকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। পরবর্তিতে একটি গণমাধ্যমে উক্ত পল্লী চিকিৎসক রাসেল বলেন, আমি রোগীর দেহে কোন আঘাতের চিহ্ন দেখিনি। রোগীর প্রেসার পাচ্ছি না দেখে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেই। এই ঘটনার পর মোহাম্মদ শরীফের ছেলে প্রবাসে থাকা ছেলে মো: আসিফ চৌধুরী ফেসবুকে তার বাবার সুস্থতার জন্য দোয়া কামনা করে স্টাটাস দেয়। সেখানে একজন কমেন্টসে তার বাবার কি হয়েছে জানতে চাইলে রিপ্লেতে মোঃ আসিফ চৌং লিখেন স্টক করছে। একই ব্যক্তি আবার কমেন্টসে জিজ্ঞাস করেন কখন। প্রতি উত্তরে মোঃ আসিফ চৌং খেন বিকেলে। সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে হুমাইরা সুলতানা বলেন, “ঘটনার পর একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী ও শালিশকারেরা বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলেছেন, ১৬ ডিসেম্বর কোন পক্ষের মাঝে মারামারি, হাতাহাতি তো দূরের কথা কোন প্রকার ঝগড়া পর্যন্ত হয়নি। যেখানে আমার স্বামী ভাসুরসহ আমাদের পক্ষের কাউকে ঘটিনার সময় ঘটনাস্থলে বা আশেপাশে কেউ দেখেনি মর্মে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা সাক্ষি দিয়েছে সেখানে আমার শ্বশুরের জমি আত্মসাৎ করার জন্য আমার স্বামী, ভাসুর, দেবর ও একজন নিকট আত্মিয়ের নামে হয়রানি মূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। একটি ভিডিওতে যেখানে মোহাম্মদ শরীফ স্থানীয় কামালকে ডেকে তাকে একটু বাসায় পৌছে দেয়ার কথা বলেছেন মর্মে স্বিকারোক্তি পাওয়া গেছে এবং পরবর্তিতে সেই কামালের ডাকে মোহাম্মদ শরিফের এক ভাই হাসান শরিফ ও স্থানীয় মো: মিয়া ও মোহাম্মদ শরীফের ভাড়াটিয়া জাহাঙ্গির ছাড়া আশেপাশে কেউ ছিলনা বলা হচ্ছে সেখানে মামলার এজাহারে মোহাম্মদ শরিফকে আমার স্বামী, ভাসুর ও আত্বিয়রাসহ কয়েকজনে মিলে মারধরের মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। যেখানে মোহাম্মদ শরীফকে টেক্সিতে তুলে দেয়ার সময় তিনজন স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন সেখানে তাদের কথা গোপন করে মামলা সাজাতে পরিবারের সকল সদস্য এসে মোহাম্মদ শরিফকে উদ্ধার করেছে মর্মে মিথ্যা তথ্য দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছি আমার স্বামী ও পরিবারে অন্যান্য সদস্যদের বিরুদ্ধে এই মিথ্যা মামলা দায়েরের নেপথ্যে কোন দুষ্ট চক্র কাজ করছে। তারা আমাদের জিম্মি করে জমি ও অর্থ আত্মাসাতের মতন পরিকল্পনা করতে পারে। তবে আমাদের বিশ্বাস পুলিশের নিরোপেক্ষ তদন্ত এবং নির্ভুল পোস্ট মোর্টেমের ফলাফল এলে পুরো সাজানো মিথ্যা মামলাটি মিথ্যা বলেই প্রমানিত হবে৷ এই আশাতেই আপনাদের মাধ্যমে পুলিশ প্রশাসন ও মেডিকেল ফরেন্সিক বিভাগের কাছে ন্যায় বিচারের স্বার্থে সুষ্ঠ ও নিরোপেক্ষ তদন্ত কামনা করছি।” এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, সাইমা আকতার, রিনা আকতার, মোঃ জালাল উদ্দিন প্রমুখ।