ফরিদপুরে জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে ঈশান স্টেটের কয়েকশো কোটি টাকার সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা তদন্তে দুদকের বিরুদ্ধে ধীরগতির অভিযোগ আনা হয়েছে।
ফরিদপুরে জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে ঈশান স্টেটের কয়েকশো কোটি টাকার সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা তদন্তে দুদকের বিরুদ্ধে ধীরগতির অভিযোগ আনা হয়েছে। অসাধুচক্রের পক্ষ অবলম্বন করে তাদের বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দিতেই মামলা তদন্তে দুদক গরিমসি করছে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে। বুধবার ফরিদপুর প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন সংশ্লিষ্ট মামলার বাদী ওই ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম মজনু।
এ সময়ে ঈশান গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আজগর হোসেন, ২ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. মোসলিম উদ্দিন, ৪ নং ওয়ার্ডের মেম্বার রেজাউল করিম বাচ্চু, ৮ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. ছব্দুল হোসেন, ৯ নং ওয়ার্ডের মেম্বার হিটলু খান, ইউনিয়ন মহিলা যুবলীগের সভাপতি নাজনীন বেগম অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত অভিযোগে শহীদুল ইসলাম মজনু বলেন, ফরিদপুরের ঈশান এস্টেটের মালিক জমিদার ঈশান চন্দ্র সরকারের কোন জীবিত ওয়ারিশ ছিল না। এই সুযোগে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের যোগসাজশে জালিয়াতি করে একটি ভুয়া ওয়ারিশ সনদ তৈরি করে ঈশান চন্দ্র সরকারের জমিদারির সাবেক কর্মচারীর উত্তরাধিকারীর সন্তানেরা। এরপর আদালতে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনে মামলা করে বিপুল সম্পত্তির মালিকানা লাভ করে। একই পন্থায় ভিপি 'খ' তালিকাভুক্ত অর্পিত সম্পত্তি ও এসি ল্যান্ড অফিসের মাধ্যমে নামপত্তন করে নেয়।
শহিদুল ইসলাম মজনু বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর জাল জালিয়াতির বিষয়টি তার নজরে এলে তিনি ঈশান চন্দ্র সরকারের পুত্রদের নামে তৎসময়ে সম্পাদিত বিভিন্ন দলিলপত্র সংগ্রহ করেন এবং সেখানে স্পষ্ট ভাবে দেখতে পান যে, ঈশান চন্দ্র সরকারের মাত্র ৩ পুত্র ছিলো। এরা হলেন, জ্যোতিশ চন্দ্র সরকার, ধীরেন্দ্রনাথ সরকার ও সুরেশ চন্দ্র সরকার। তার ভাই ইন্দু ভূষণের ছিল তিন ছেলে—সত্যভূষণ সরকার, ভক্তিভূষণ সরকার, শক্তি ভূষণ সরকার এবং স্ত্রী নীলিমা সরকার।পাকিস্তান আমলে ১৯৬২ সালের দিকে তাঁরা সবাই দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান। এরপর তাদের সমূদয় সম্পত্তি প্রথমে শত্রু সম্পত্তি ও পরবর্তীতে অর্পিত সম্পত্তি তালিকাভুক্ত করা হয়।
এদিকে ২০১২ সালে অর্পিত সম্পত্তি অবমুক্তি আইনের পর ঈশানের উত্তরাধিকার দাবি করে সম্পত্তি অবমুক্তির আবেদন করেন জনৈক উজ্জ্বল সরকার। তারা দাবির সপক্ষে ঈশান গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) তৎকালীন চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান চৌধুরী পংকজ স্বাক্ষরিত একটি ওয়ারিশ সনদ দাখিল করেন। তাতে ঈশানের ছয় ছেলে উল্লেখ করা হয়। যাদের একজন ক্ষিতিশ চন্দ্র সরকার। এই ক্ষিতিশের নাতি উজ্জ্বল সরকার, উৎপল সরকার ও উত্তম সরকার।
এ অবস্থায় ফরিদপুরের বিজ্ঞ স্পেশাল জেলা জজ আদালতে দঃবিঃ আইনের ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা মতে ২০২২ সালের ১২ অক্টোবর একটি নালিশী মামলা দাখিল করেন শহীদুল ইসলাম মজনু। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য দুদক, ফরিদপুরের নিকট প্রেরণ করেন। দুদক পিটিশন নং- ০৪/২২ কিন্তু দুদক অদ্যাবধি এই মামলার কোন তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে পারেনি। এমনকি আনুষ্ঠানিক ভাবে মামলার তদন্তও শুরু করেনি বলে মজনু অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, ফরিদপুরের ঈশান চন্দ্র সরকারের প্রায় ২০ একর সম্পত্তি ছিলো যার মূল্য প্রায় পাঁচশো কোটি টাকা। এই বিপুল সম্পত্তির অনেকগুলো এই চক্র ইতোমধ্যে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। এজন্য তিনি উজ্জ্বল সরকার সহ তার ৩ ভাই, মা, শ্বশুর ও শাশুড়ির ব্যাংক স্টেটমেন্ট তলবেরও জোর দাবি জানান। রাষ্ট্রীয় স্বার্থেই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তদন্ত সম্পন্ন করা দরকার।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দুদকের ফরিদপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রেজাউল করিম মামলা তদন্তে ধীরগতি বা গড়িমসির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, দুদককে একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তদন্ত কাজ সম্পন্ন করতে হয়। এছাড়া আরো অনেক মামলা সংক্রান্ত কাজের চাপও রয়েছে। এজন্য তদন্ত সম্পন্ন করতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যেই তদন্ত সম্পন্ন করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে পারবো।