২০১২ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি নিখোঁজ হয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দুই শিক্ষার্থী আল-মুকাদ্দাস ও ওয়ালিউল্লাহ। মুকাদ্দাস-ওয়ালিউল্লাহ যথাক্রমে আল ফিকহ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ এবং দা’ওয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। এই ঘটনার এক যুগ পার হলেও সন্ধান পাওয়া যায়নি তাদের তাদের সন্ধান দাবিতে আজ মঙ্গলবার দুপুর ২ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধন করেছে আল ফিকহ এবং দা’ওয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এসময় দুই বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমরা অত্যান্ত দুঃখের সাথে বলতে হয় ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট চলে যাওয়ার পর আমরা ভেবে ছিলাম আমাদের ওয়ালিউল্লাহ ও আল মুকাদ্দাস ভাইকে ফিরে পাবো। কিন্তু তা না পেয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনতে হচ্ছে আমাদের। ২০১২ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারী তারা ঢাকার সাভার থেকে ফেরার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে সাদা পোশাক ধারী কিছু মানুষ তাদের ধরে নিয়ে গিয়েছিলো। আমাদের ধারণা তারা ছিল আওয়ামী দুর্বৃত্ত। ১ যুগ পার হলেও তারা এখনো তারা ফিরে আসেনি। ৫ আগষ্টের পর অনেক গুম হওয়া নেতাকর্মীরা ফিরলেও তারা এখনো ফিরে নি। আমাদের দাবি, আমাদের ভাইদের সন্ধান দিন নয়তো তাদের কবরের সন্ধান দিন। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি ঢাকায় যান মুকাদ্দাস। ৪ঠা ফেব্রুয়ারি রাতে তিনি ও তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু দাওয়াহ ও ইসলামী শিক্ষা বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার ওয়ালিউল্লাহর সঙ্গে রাজধানীর কল্যাণপুর থেকে হানিফ পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন। বাসটি সাভারের নবীনগর এলাকায় পৌঁছলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে ৮ থেকে ১০ জন লোক বাস থেকে মুকাদ্দাস ও ওয়ালিউল্লাহকে নামিয়ে নিয়ে যান। ওই বাসের সুপারভাইজারের বরাতে স্বজনেরা জানান, ৪ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত ১২টার দিকে নবীনগর এলাকায় বাস থামিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে কয়েকজন লোক তাঁদের বাস থেকে নামিয়ে নিয়ে যান। এ ঘটনার পর ৬ ফেব্রুয়ারি মুকাদ্দাসের নিখোঁজের ঘটনায় তাঁর চাচা আবদুল হাই রাজধানীর দারুস সালাম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ওয়ালিউল্লাহর নিখোঁজের ঘটনায় ৮ ফেব্রুয়ারি তাঁর বড় ভাই খালেদ সাইফুল্লাহ আশুলিয়া থানায় একটি জিডি করেন। এরপর নিখোঁজ দুই ছাত্রের পরিবার পুলিশ ও র্যাবসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে ধরনা দিয়েও সন্ধান না পেয়ে হাইকোর্টে দুটি রিট পিটিশন করেন। ওই বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি রিটের শুনানি হয়। শুনানি শেষে বিচারপতি আবদুল আউয়াল ও বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ তাঁদের কেন আদালতে সশরীর হাজির করা হবে না জানতে চেয়ে সরকারের প্রতি রুল জারি করেন। স্বরাষ্ট্রসচিব ও আইজিপিসহ ৯ কর্মকর্তাকে তিন সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। নির্ধারিত সময়ে ৯ কর্মকর্তা আদালতকে জানান, তাঁরা দুই ছাত্রের কোনো সন্ধান পাননি। এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৯ মে আপিল বিভাগের চেম্বার জজ বিচারপতি সৈয়দ মাহাবুব হোসেন হাইকোর্টের তলবের আদেশ স্থগিত করে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করতে নির্দেশ দেন। লিভ টু আপিলের শুনানি শেষে হাইকোর্টের আদেশ বাতিল করে রিট পিটিশনটি নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর বিচারপতি বজলুর রহমান ও বিচারপতি আকরাম হোসেন চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ কয়েকটি পর্যবেক্ষণসহ রিটটি খারিজ করে দেন।