অভয়নগরে নওয়াপাড়া টু আমতলা সড়ক বছর না পেরেতেই বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। ফলে সরকারের ২৬ কোটি টাকার অপচয় হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন এলাকাবাসী। সড়কটি ভেঙ্গে চুরে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আসছে বর্ষা মৌসুমে সড়কটির চরম বেহাল অবস্থা দেখতে হবে এমনটিই আশংকা এলাকাবাসীর।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তার অনেক জায়গায় ভেঙ্গে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কয়েক কিলোমিটার রাস্তা ফেটে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অভয়নগর উপজেলার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভাঙ্গাগেট-বাদামতলা-আমতলা ভায়া মরিচা নাউলী বাজার সড়কটি নির্মাণ করা হয়। নির্মাণ কাজের শুরু থেকেই নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চরম অবহেলা ও অনিয়মের প্রতিবাদও করে স্থানীয়রা। স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তর কাজটি বাস্তবায়নে নির্মিত রাস্তাটি দ্রুত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এলাকার মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোতের সৃষ্টি হয়েছে। কাজ শেষ হওয়ার বছরের শেষেই রাস্তা নষ্ট হওয়ায় কারণে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও পল্লী সংযোগ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের (আরবিআইপি) আওতায় সড়কটি ফেরিঘাটের মোড় থেকে আমতলা বাজার পর্যন্ত ২০ কিলো ৯০৪ মিটার উন্নয়ন কাজের ২০২১ সালে দরপত্র আহবান করা হয়। এ কাজে ব্যয় ধরা হয় ২৬ কোটি ৮ লাখ ২ হাজার ৯৩১ টাকা। কাজটি পায় ঢাকার ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এম এম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড। ওই বছরের ১১ এপ্রিল থেকে সড়কটির কাজ শুরু করে। গত ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর কাজের মেয়াদ শেষ হয়। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় পরে কাজের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত করা হয়। পরবর্তীতে পর বছরের ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু কাজে ত্রুটি থাকার সত্বেও সমাপ্তি দেখিয়ে বছরে ১৫ এপ্রিল ঠিকাদারকে চুড়ান্ত বিল প্রদান করা হয়েছে। সড়কটির প্রস্থ ১২ ফুট। কিন্তু দুই পাশে ৩ ফুট করে ৬ ফুট বাড়িয়ে সড়কটি ১৮ ফুট করা হয়েছে। এলাকাবাসী কাজের শুরুতেই ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগে কাজ কয়েকবার বন্ধ করে দেয়।
এ প্রসঙ্গে এলাকাবাসী জানান, শংকরপাশা-আমতলা সড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ নড়াইল জেলার ও গোপালগঞ্জ হয়ে ঢাকায় যাতায়াত করে। তাছাড়া নড়াইল, ফুলতলা এবং অভয়নগর উপজেলার চার ইউনিয়নের লোকজন নওয়াপাড়ায় ব্যবসা বানিজ্য ও মাবামাল বহন করেন।
উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের বুনো রামনগর গ্রামের ওমর সানি বলেন, রাস্তার কাজ শেষ হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে নষ্ট হয়ে গেলো। আমাদের যে কষ্ট তা থেকেই গেলো; সরকারের টাকাই গচ্ছা গেলো।
উপজেলার শ্রীধরপুর ইউনিয়নের শংকরপাশা গ্রামের শাহিব হোসেন মোল্যা বলেন, রাস্তার কাজ খুব নিন্মমানের করা হয়েছে। ইঞ্জিনিয়াররা কি দেখলো তা বুঝলাম না। কাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথে রাস্তা নষ্ট হয়ে গেলো।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এম এম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড প্রতিনিধি মুস্তাফিজুর রহমান বিপ্লবের মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।
অভয়নগর উপজেলা প্রকৌশলী নাজমুল হুদা বলেন, কাজ শেষ হওয়ার পরপরই রাস্তা খারাপ হওয়ার কথা না। এরপর তিনি আরো বলেন, রাস্তায় চলাচলের অনুপযোগি হলে লিখে দেন।
এ ব্যাপারে যশোর জেলার নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ মাহাবুবুর রহমান বলেন, ওই রাস্তা সম্পর্কে আমার জানা নেই। বিস্তারিত জেনে ব্যবস্থা নেয়া হবে।