সোনারগাঁয়ে ৩ দিনব্যাপি ঐতিহ্যবাহী বউ মেলা

নূর নবী জনি প্রকাশিত: ১৬ এপ্রিল , ২০২৫ ১২:৫৮ আপডেট: ১৬ এপ্রিল , ২০২৫ ১২:৫৮ পিএম
সোনারগাঁয়ে ৩ দিনব্যাপি ঐতিহ্যবাহী বউ মেলা
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে শুরু হয়েছে তিনদিন ব্যাপী বউ মেলা, প্রতি বছরের মতো এবারও বৈশাখের দ্বিতীয় দিনে বউ মেলা শুরু হয়

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে শুরু হয়েছে তিনদিন ব্যাপী বউ মেলা, প্রতি বছরের মতো এবারও বৈশাখের দ্বিতীয় দিনে বউ মেলা শুরু হয়।

মঙ্গলবার সকালে উপজেলা সংলগ্ন ভট্টপুর জয়রামপুর গ্রামের আদি বটবৃক্ষ ছায়াতলে এ মেলার শুরু হয়। মেলার প্রথম দিনে উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। এ মেলাকে সনাতন ধর্মাবলম্বীর অনেকে সিদ্ধেশ্বরী দেবীর মেলা ও বটবৃক্ষকে সিদ্ধেশ্বরী দেবী বলে আখ্যায়িত করেন। পুরানো এ বটবৃক্ষকে কেন্দ্র করে যুগ যুগ ধরে পালিত হয় এই বউমেলা। প্রায় দুইশত বছরের আদি বটবৃক্ষের নিচে সারিবদ্ধভাবে বিভিন্ন ফল-ফলাদির ঝুড়ি নিয়ে পূজা অর্চনার জন্য দাঁড়িয়ে থাকেন নববধূ থেকে শুরু করে দু’তিন সন্তানের জননীরা। তাদের সঙ্গে টুকটুকে রঙ্গিন ফুলেল সাজে দাঁড়িয়ে সনাতনী কুমারী মেয়েরা। সবার দৃষ্টি থাকে বটবৃক্ষের দিকে। সকাল গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দুপুর হওয়ার আগেই চারদিকে বাড়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীর অনুসারী আবাল, বৃদ্ধ, বনিতাদের কোলাহল। হিন্দুধর্মাবলম্বীদের পঞ্জিকা অনুযায়ী এ বছর বৈশাখের দ্বিতীয় দিনই পূজা-অর্চনার মধ্য দিয়ে এ মেলা শুরু হয়। বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে প্রতি বছর উপজেলা পরিষদের পাশে ভট্টপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এই ঐতিহাসিক বউমেলা বসে। মঙ্গলবার সকাল থেকে সিদ্ধেশ্বরী বটতলার পদতলে (সনাতন) হিন্দু সম্প্রদায়ের শত শত নর-নারীরা বৈশাখের দ্বিতীয় দিনে এ পূজায় অংশ নেন। দিনভর ছিল লোকজনের ভিড়। আগামী বৃহস্পতিবার শেষ হবে এ মেলা। স্থানীয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা জানান, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে এ বটবৃক্ষটি হয়ে উঠেছে পুণ্যের দেবতা। তাই হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে বটবৃক্ষটি সিদ্ধেশ্বরী দেবতা নামে সুপরিচিত। বিশেষ করে সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীরা সারা বছর অপেক্ষায় থাকে সিদ্ধেশ্বরী কালী তলার এ বউমেলার জন্য। এ বিশ্বাসেই এখানে বউমেলা অনুষ্ঠিত হয়। বৈশাখী ফলের ভোগ নিয়ে দলে দলে হিন্দু নারীরা হাজির হন বউমেলায়। পাশাপাশি দেবতার সন্তুষ্টির জন্য কবুতর ওড়ানো ও পাঠা বলি দেওয়া হয় বৃক্ষ দেবতার পদতলে। স্বামী সংসারের বাঁধন যেন অটুট থাকে এবং সারা বছর সুখ শান্তিতে যেন দাম্পত্য জীবন কাটে- এই কামনাতেই পূজার আয়োজন করেন হিন্দু নারীরা। মেলায় পূজা-অর্চনা ছাড়াও বাঙালি সংস্কৃতির প্রাচীন ঐতিহ্য খুঁজে পাওয়া যায়। এ মেলায় মৃৎ শিল্পীদের তৈরি নানা রঙয়ের টেপা পুতুল, হাতি, ঘোড়া, ময়না, টিয়া, বাঘ-ভাল্লুক, হাঁড়ি পাতিল পাওয়া যায়। মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প, কাঠ ও বাঁশের তৈরি লোকপণ্য ছাড়াও মেলায় পাওয়া যায় বাহারি মিষ্টান্ন সামগ্রী। সোনারগাঁয়ের বউমেলা বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী মেলাগুলোর মধ্যে একটি। সনাতন ধর্মাবলম্বীর অনেকের মতে, বউমেলায় পূজা-অর্চনা করলে পুরনো বছরের স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া বিবাদকে দুরে ঠেলে দিয়ে একজন বধূ স্বামী সোহাগিনী হয়ে উঠেন এবং নতুন বছরে স্বামীর সংসারকে ধন-ধান্যে ভরে তুলতে পারেন। এখানে অনেক ভক্তদের দেবীর নামে পাঠা ও কবুতর উৎসর্গ করতে দেখা যায়। অনেকের বিশ্বাস বটমূলের মাটি শরীরের মাখলে রোগবালাই থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। প্রেমে সফল ও দ্রুত বিয়ের কাজ সম্পন্ন হওয়ার জন্য এ স্থানের মাটি খুবই উপকারী মনে করে দিনটিতে সনাতন ধর্মাবলম্বীর লোকেরা মাটি সংগ্রহ করে থাকেন। সোনারগাঁয়ের বউমেলা বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী মেলাগুলোর মধ্যে একটি। বউমেলার আয়োজক কমিটির কর্মকর্তা নিলোৎপল রায় জানান, সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকা থেকে নারীরা এসে ভিড় করেন সিদ্ধেশ্বরী বটতলায়। এবারে পঞ্জিকা অনুযায়ী বৈশাখের দ্বিতীয় দিনে মঙ্গলবার সকালে আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে পূজা-অর্চনা হয়ে মেলা শুরু হয়। এসময় তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা রহমান জানান, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বউ মেলায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। মেলা উপভোগ করতে হিন্দু সম্প্রদায় ছাড়াও মুসলিম ধর্মের লোকজনও অংশ নিয়েছেন।

এই বিভাগের আরোও খবর

Logo