রোগীদের সুস্থতার ক্ষেত্রে নার্সদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিধায় নার্সদের মানোন্নয়নে সরকারের আরো বিনিয়োগ করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের সামগ্রিক জনস্বাস্থ্য ব্যয় জিডিপির অন্তত ৫ শতাংশ এবং মোট বাজেটের প্রায় ১৫ শতাংশে উন্নীত করার প্রস্তাবকেও সমর্থন ও স্বাগত জানান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. শাহাদাত হোসেন। বুধবার চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের নার্সিং অনুষদের উদ্যোগে “Workshop on Teaching Methodology & Assessment" শীর্ষক তিন দিনব্যাপী এক কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। কর্মশালা শেষে মেয়র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে মতবিনিময় সভায় অংশ নেন মেয়র। সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হলে মেয়র সমস্যাগুলো সমাধানে উদ্যোগ নেয়ার আশ্বাস দেন।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. ওমর ফারুক ইউসুফের সভাপতিত্বে সমাপনী দিনে কর্মশালায় মূখ্য আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন নার্সিং অনুষদের ডিন ডা. মেহেরুন্নিছা খানম ও রিসোর্স পার্সন হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সেন্টার ফর মেডিকেল এডুকেশনের অধ্যাপক ডা. আবদাল মিয়া ও ডা. আফরোজা হক, সহযোগী অধ্যাপক, মেডিকেল এডুকেশন, চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ।
বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ও বিএমডিসি এর সদস্য ডা. খুরশীদ জামিল চৌধুরী, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তসলিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মো. জসিম উদ্দিন, সার্জারী অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মো. মাসুদ করিম, ডেন্টাল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মো. রহিম উল্ল্যা চৌধুরী, মেডিকেল টেকনোলজি অনুষদের ডিন ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম চৌধুরী। অনুষ্ঠানে আরো উপস্হিত ছিলেন চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ডা. মুসলিম উদ্দিন সবুজ, চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল ডেন্টাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আকরাম পারভেজ চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. টিপু সুলতান, ডা. এস এম সারোয়ার আলমসহ বিভিন্ন নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ রেজিস্ট্রার ডা. হাসিনা নাসরীন, উপ কলেজ পরিদর্শক ডা. আইরিন সুলতানা সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, “রোগীর সঙ্গে প্রথম যোগাযোগকারী ব্যক্তি হিসেবে নার্সদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রোগী মেডিকেল এসে যাকে প্রথমে দেখে উনি হচ্ছেন নার্স । সুতরাং যতই সমস্যা থাকুক না কোনো মুখে হাসি থাকতে হবে এবং খুব আনন্দের সাথে রোগীটাকে রিসিভ করতে হবে। রোগীদের সাথে পজেটিভলি চমৎকারভারে কথা বললে রোগীরা সুস্থ হওয়ার মনোবল পাবে। আপনি জানেন সে ক্যান্সারের রোগী কিন্তু এই আপনি যদি তাকে পজেটিভ সার্পোট করতে পারেন তাহলে এই দুই একটা কথায় রোগীর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিবে।
“একজন নার্স যদি হাসিমুখে, সহানুভূতির সাথে রোগীকে গ্রহণ করেন এবং তাকে আশ্বস্ত করেন, তবে রোগী মানসিকভাবে অনেকটাই সুস্থতা অনুভব করে। মুখ গম্ভীর বা হতাশ দেখালে রোগী মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। তাই নার্সদের সবসময় হাস্যোজ্জ্বল, সহানুভূতিশীল এবং আত্মবিশ্বাসী আচরণ বজায় রাখা উচিত। শুধুমাত্র ওষুধ প্রয়োগ নয়, রোগী বা তার স্বজনদেরকে ওষুধের প্রয়োজনীয়তা এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন করাও নার্সদের দায়িত্ব। রোগীকে মানসিকভাবে আশ্বস্ত করা, সঠিকভাবে ব্লাড প্রেসার চেক করা এবং ইনজেকশন প্রয়োগের সময় সন্তর্পণে বোঝানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
তিনি আরো বলেন, “বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের নার্সিং সেবার মানের দিকে তাকালে দেখা যায়, কেরালা, ব্যাঙ্গালুরু, শ্রীলঙ্কা কিংবা থাইল্যান্ডের নার্সরা অত্যন্ত প্রশিক্ষিত ও দক্ষ। অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলতে চাই, আমাদের দেশেও দক্ষ নার্স গড়ে তোলা সম্ভব, যদি আমরা তাদের সঠিক প্রশিক্ষণ, দিকনির্দেশনা এবং প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা দিতে পারি। চট্টগ্রামে একটি আন্তর্জাতিক মানের নার্সিং ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অধীনে থাকা বিভিন্ন মেডিকেল প্রতিষ্ঠান এই উদ্যোগে সহায়তা করবে।