রাজশাহী-১ আসনে আগাম নির্বাচনি তৎপরতা: বিএনপিতে গ্রুপিং, আওয়ামী লীগ নীরব, সক্রিয় জামায়াত ও জাতীয় পার্টি

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ৪ মে , ২০২৫ ১১:৩৩ আপডেট: ৪ মে , ২০২৫ ১১:৩৩ এএম
রাজশাহী-১ আসনে আগাম নির্বাচনি তৎপরতা: বিএনপিতে গ্রুপিং, আওয়ামী লীগ নীরব, সক্রিয় জামায়াত ও জাতীয় পার্টি
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনে রাজনীতির মাঠে আগাম তৎপরতা বেড়েছে

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনে রাজনীতির মাঠে আগাম তৎপরতা বেড়েছে। নির্বাচন কমিশন এখনো নির্বাচনের নির্ধারিত সময়সূচি ঘোষণা না করলেও ডিসেম্বর নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো ইতোমধ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছে। বিশেষ করে বিএনপির মধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীদের আগ্রাসী প্রচার-তৎপরতা ইতোমধ্যেই এলাকায় আলোচনার কেন্দ্রে।
বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, গ্রুপিং এবং পাল্টাপাল্টি অবস্থান রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এ পর্যন্ত ছয়জন নেতার নাম উঠে এসেছে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে। এরা হলেন—অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল শরিফ উদ্দিন, শিল্পপতি ও আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুলতানুল ইসলাম তারেক, ইঞ্জিনিয়ার কে এম জুয়েল, ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলন, সাজেদুর রহমান মার্কনি এবং অধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বিপ্লব।
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) শরিফ উদ্দিন ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সামরিক সচিব। তিনি প্রয়াত ব্যারিস্টার আমিনুল হকের ছোট ভাই। তবে সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সহকর্মীদের কর্মসূচিতে হামলার অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগের কারণে অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা তাঁর বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে অবহিত করেছেন এবং তাঁর মনোনয়ন ঠেকাতে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিয়েছেন। অন্যদিকে, এলাকায় সবচেয়ে বেশি সক্রিয় হিসেবে পরিচিত অ্যাডভোকেট সুলতানুল ইসলাম তারেক। তিনি জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং গোদাগাড়ী উপজেলা বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য। তারেক রহমানের ‘রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা’ প্রচারে তিনি ব্যাপক কার্যক্রম চালিয়েছেন—সভা-সমাবেশ, শীতবস্ত্র বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন। তাঁর দাবি, এই কর্মকাণ্ডে বাধা দেওয়া হয়েছে এবং তিনি ও তাঁর সমর্থকরা একাধিকবার হামলার শিকার হয়েছেন।
ইঞ্জিনিয়ার কে এম জুয়েল বলেন, ২০০৮ সালেও আমি মনোনয়ন চেয়েছিলাম। এবারও ক্লিন ইমেজ ও স্থানীয় তৃণমূলের সমর্থনকে গুরুত্ব দিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছি।” তিনি শরিফ উদ্দিনের অনুসারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগ করেন এবং বলেন, এই ঘটনাগুলো দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। অধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বিপ্লব বলেন, দল এবার পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির প্রার্থী চাইছে। দীর্ঘদিন যারা এলাকায় অনুপস্থিত ছিলেন, তাঁদের মনোনয়ন দিলে তৃণমূল ক্ষুব্ধ হবে। এদিকে, রাজশাহী-১ আসনে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকেও তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। দলের নায়েবে আমির অধ্যাপক মজিবুর রহমান, যিনি ১৯৮৬ সালে এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন, আবারো মাঠে সক্রিয় হয়েছেন। স্থানীয় মসজিদে গিয়ে তিনি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে বক্তব্য দিচ্ছেন এবং সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করছেন। জাতীয় পার্টির রাজশাহী জেলা নেতা সামসুদ্দীন মন্ডল জানিয়েছেন, “দল আমাকে প্রার্থী করতে পারে। আমি সে অনুযায়ী মাঠে কাজ করছি। তবে পরিবেশ দেখে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ ও তার শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির কোনো দৃশ্যমান তৎপরতা এখনো দেখা যায়নি। যদিও গত কয়েকটি নির্বাচনে এই আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী ছিলেন।
সবমিলিয়ে রাজশাহী-১ আসনে বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, জামায়াত ও জাতীয় পার্টির আগ্রহ, এবং আওয়ামী লীগের নীরবতা—সব মিলিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে আসনটি একটি কৌতূহল ও গুরুত্ববহ অবস্থানে পৌঁছেছে। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই জমে উঠছে এই আসনের রাজনীতির হালচাল।

এই বিভাগের আরোও খবর

Logo