নানা আয়োজনে পালিত হলো বাকৃবির ৬৫তম প্রতিষ্টাবার্ষিকী

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ১৮ আগস্ট , ২০২৫ ১৭:৫১ আপডেট: ১৮ আগস্ট , ২০২৫ ১৭:৫১ পিএম
নানা আয়োজনে পালিত হলো বাকৃবির ৬৫তম প্রতিষ্টাবার্ষিকী
বর্নাঢ্য আয়োজনে বাকৃবির ৬৫তম জন্মদিন পালিত / নানা আয়োজনে পালিত হলো বাকৃবির ৬৫তম প্রতিষ্টাবার্ষিকী

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ৬৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আয়োজনমুখর পরিবেশে উদযাপিত হয়েছে।

সোমবার (১৮ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্যালীপ্যাড প্রাঙ্গণে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়ার উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দিবসটির কর্মসূচি শুরু হয়। এ সময় জাতীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় পতাকা উত্তোলন, শান্তির প্রতীক কবুতর উন্মুক্তকরণ এবং বর্ণাঢ্য আনন্দ র‍্যালি অনুষ্ঠিত হয়।হ্যালীপ্যাডের পাশে বৃক্ষরোপণের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের লেক ও উপাচার্যের বাসভবনের পাশে ব্রহ্মপুত্র নদে মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়। পরে সকাল সাড়ে ১০টায় সৈয়দ নজরুল ইসলাম সম্মেলন কক্ষে “গৌরবের ৬৪ বছর: অর্জন ও সম্ভাবনা” শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাউরেস-এর পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. হাম্মাদুর রহমান। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতেও বৃক্ষরোপণ করা হয়। দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি কামনায় সকল মসজিদ ও উপাসনালয়ে মোনাজাত ও বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়।ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, “আমি গ্রাম থেকে এসেছি। ছোটবেলায় গরু-ছাগল অসুস্থ হলে আমরা ভেবেছি, যদি কেউ সাহায্য করত! আজ সেই স্বপ্ন নিয়েই আমি বাকৃবিতে পড়ছি। এখানে দাঁড়িয়ে মনে হয় আমি শুধু ডাক্তার হচ্ছি না, আমি কৃষকের ভরসা হয়ে উঠছি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জনগুলো দেখলে বুঝি, আমি সঠিক জায়গায় এসেছি। এ জায়গার প্রতি আমার ভালোবাসা আজীবন বহন করব।”প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী নিয়ে কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থী তানজিলা হক বলেন, “বাকৃবি আমার কাছে কেবল একটা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, এটা আমার দ্বিতীয় বাড়ি। প্রতিটি গাছ, প্রতিটি লেক, প্রতিটি গবেষণাগারে আমি যেন নিজের স্বপ্নকে বেড়ে উঠতে দেখি। যখন শুনি আমাদের উদ্ভাবিত নতুন ধান বা সবজির জাত কৃষকের মাঠে ফলছে, তখন বুক ভরে যায় গর্বে। আমি মনে করি এই মাটির সঙ্গে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমার আত্মার যোগ রয়েছে।”মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান বলেন, “আমাদের গ্রামে মাছ ধরা মানেই ছিল জীবনযুদ্ধ। বাকৃবিতে এসে দেখলাম মাছ শুধু খাবার নয়, এটা এক বিশাল সম্ভাবনা। যখন শুনি দেশি মাছের প্রজনন বা খাঁচায় মাছ চাষের প্রযুক্তি এখান থেকে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে, তখন চোখে পানি চলে আসে। মনে হয় আমার বিশ্ববিদ্যালয় শুধু আমাকে গড়ে তুলছে না, পুরো বাংলাদেশকে গড়ে তুলছে।”কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের শিক্ষার্থী শিহাব উদ্দিন বলেন, “প্রথম দিন যখন এই ক্যাম্পাসে পা রাখি, মনে হয়েছিল আমি স্বপ্নের ভেতর ঢুকে গেছি। চারদিকে সবুজ, গবেষণাগারে নতুন প্রযুক্তি, শিক্ষকদের স্নেহ -সব মিলিয়ে এটা যেন আলোকিত পৃথিবী। আমি বিশ্বাস করি, বাকৃবি শুধু জ্ঞান দেয় না, দায়িত্বও শেখায়। এখানকার প্রতিটি মুহূর্ত আমাকে মনে করিয়ে দেয় আমি এমন এক পরিবারের অংশ, যারা কৃষি আর কৃষকের ভবিষ্যৎ বদলে দিচ্ছে।”

বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সম্পর্কে বলেন, বিশ্বমানের পাঠ্যসূচি, অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি এবং আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-সহযোগিতার মাধ্যমে বাকৃবির শিক্ষার্থীরা আজ অর্জন করছে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেওয়া ডিগ্রিসমূহ অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং এর চাহিদা রয়েছে বিশ্বব্যাপী। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণ গ্র্যাজুয়েটদের সরাসরি দেশের সেবায় নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। মাতৃসম এ বিশ্ববিদ্যালয় হতে উত্তীর্ণ কৃষিবিজ্ঞানীদের অনেকেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পুরস্কৃত হয়েছেন এবং একই সাথে পেশাগত পূর্ণতায় বিকশিত হয়ে দেশের কৃষি-সংস্কৃতির পরিমণ্ডলকে করেছেন সমৃদ্ধ ও আলোকিত। তিনি আরো বলেন, দেশ আজ ক্রমবর্ধিষ্ণু জনসংখ্যার জন্য খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জনে অসামান্য সাফল্য লাভ করতে পেরেছে। কৃষিক্ষেত্রে দৃশ্যমান এ সাফল্যগুলোর কৃতিত্ব এ দেশের কৃষক এবং এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটদের - এটি আজ সর্বজন স্বীকৃত। বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের এই পরম লগ্নে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, তাদের অভিভাবক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই, জেলা প্রশাসন, শুভাকাঙ্ক্ষী ও প্রতিবেশীসহ সকল স্তরের জনগণকে জানাই আমার আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।


এই বিভাগের আরোও খবর

Logo