ভোলায় রাসেল ভাইপার আতঙ্ক, এক সপ্তাহে উদ্ধার-১৩

শরীফ হোসাইন প্রকাশিত: ২৩ জুন , ২০২৪ ১৩:৪২ আপডেট: ২৩ জুন , ২০২৪ ১৩:৪২ পিএম
ভোলায় রাসেল ভাইপার আতঙ্ক, এক সপ্তাহে উদ্ধার-১৩
এছাড়াও গত বুধবার (১৯ জুন) তজুমউদ্দিন উপজেলার চৌমুহনী এলাকায় খেলার মাঠ, মঙ্গলবার (১৮ জুন) সদর উপজেলার পূর্ব ইলিশায় ইউপির পাকার মাথা এলাকায় বসতবাড়ির পাশের জালের সঙ্গে প্যাঁচানো অবস্থায় একটি রাসেল ভাইপার উদ্ধার করা হয়। গত মঙ্গলবার রাতে দৌলতখান উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের জালু মাঝির বসতঘর, রোববার (১৬ জুন) লালমোহনের লর্ড হার্ডিঞ্জ ইউপির সৈয়দাবাদ এলাকায় একটি বাড়ির বাথরুমে, বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরা ও সাগর উপকূল উপজেলা চরফ্যাশনের বিভিন্ন ইউনিয়নে আরো ৫টি রাসেলস ভাইপার সাপ দেখা যায়। পরে স্থানীয়রা আতঙ্কিত হয়ে সাপগুলোকে মেরে ফেলেন। এর মধ্যে তজুমউদ্দিন উপজেলায় পাওয়া একটি সাপ বনবিভাগের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে জেলাজুড়ে সর্বসাধারণের মাঝে রাসেলস ভাইপার আতঙ্ক বিরাজ করছে।

ভোলায় রাসেল ভাইপার আতঙ্ক দিনদিন বাড়ছে। গত এক সপ্তাহে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৩টি এই সাপ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১২টি সাপ মেরে ফেলেছেন স্থানীয়রা। আর একটি সাপ বনবিভাগের কাছে হস্তান্তর করেছেন তারা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার সদর, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, তজুমদ্দিন,চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলাসহ চরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়ি ও খেলার মাঠে একের পর এক রাসেলস ভাইপার সাপের দেখা মিলছে। সাপটি দেখার সঙ্গে সঙ্গেই এলাকাবাসী মেরে ফেলছেন। একের পর এক এই সাপ উদ্ধারে জনসাধারণের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, ভোলায় বিষাক্ত রাসেল ভাইপারের দংশনের শিকার হয়েছেন এক কৃষক।শুক্রবার (২১ জুন) বিকাল ৫টার দিকে সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। তার নাম মোঃ আফিজল বয়াতি। বর্তমানে ওই কৃষককে ভোলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের কৃষক মোঃ আফিজল বয়াতি শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে মাঠে গিয়েছিলেন ঘাস কাটতে। এসময় বিষাক্ত রাসেল ভাইর তাকে দংশন করে। এ সময় তার চিৎকারে স্থানীয় লোকজন ছুটে এসে সাপটিকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলে এবং আফিজলকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ভোলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক এরশাদ।এ বিষয়ে ভোলা সদর হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক ডা: আবু আহমেদ জানান, সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী থেকে এক লোক এসেছেন তাকে কিছু একটায় কামরিয়েছে।

তবে সাপে দংশন করেছে এমন লক্ষণ এখন পর্যন্ত প্রকাশ পায়নি। আমরা তাকে পর্যবেক্ষণে রেখেছি। তিনি আরো বলেন, ভোলা যেহেতু নদীমাতৃক এলাকা, তাই সকলকে সচেতন থাকতে হবে।আরো জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকালে ভোলা সদর উপজেলার শিবপুরের ইউনিয়নের শান্তির হাট ‘গরিবের ডুবাই নামে খ্যাত’ চায়না ইপিজেড বালুর মাঠে একটি,বোরহানউদ্দিন উপজেলার টবগী ইউনিয়নের জসিম হাওলাদারের বাড়িতে একটি ও তজুমদ্দিন উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের একটি বসতবাড়ির সামনে একটি রাসেল ভাইপার পাওয়া যায়।

এছাড়াও গত বুধবার (১৯ জুন) তজুমউদ্দিন উপজেলার চৌমুহনী এলাকায় খেলার মাঠ, মঙ্গলবার (১৮ জুন) সদর উপজেলার পূর্ব ইলিশায় ইউপির পাকার মাথা এলাকায় বসতবাড়ির পাশের জালের সঙ্গে প্যাঁচানো অবস্থায় একটি রাসেল ভাইপার উদ্ধার করা হয়। গত মঙ্গলবার রাতে দৌলতখান উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের জালু মাঝির বসতঘর, রোববার (১৬ জুন) লালমোহনের লর্ড হার্ডিঞ্জ ইউপির সৈয়দাবাদ এলাকায় একটি বাড়ির বাথরুমে, বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরা ও সাগর উপকূল উপজেলা চরফ্যাশনের বিভিন্ন ইউনিয়নে আরো ৫টি রাসেলস ভাইপার সাপ দেখা যায়। পরে স্থানীয়রা আতঙ্কিত হয়ে সাপগুলোকে মেরে ফেলেন। এর মধ্যে তজুমউদ্দিন উপজেলায় পাওয়া একটি সাপ বনবিভাগের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে জেলাজুড়ে সর্বসাধারণের মাঝে রাসেলস ভাইপার আতঙ্ক বিরাজ করছে।

সচেতন মহল মনে করছেন, সতর্কতার পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে হাসপাতালগুলোতেও সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসা ও ভ্যাকসিন রাখতে হবে। সুশীল সমাজের প্রতিনিধি মোবাশ্বির উল্যাহ চৌধুরী বলেন, রাসেল ভাইপার নিয়ন্ত্রণে সরকারের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। স্কুল শিক্ষক মনিরুল ইসলাম বলেন, জনসচেতনতা বাড়াতে হবে,অন্যথায় সাপের দংশনে প্রাণহানি ঘটতে পারে।এদিকে হঠাৎ করেই লোকালয়ে বিষধর এ সাপ ছড়িয়ে পড়ায় জেলার মানুষ অনেকটা আতঙ্কিত। এমন অবস্থায় রাসেল ভাইপার বংশবিস্তার ঠেকাতে এসব সাপের অবমুক্ত না করে মেরে ফেলার পরামর্শ দিয়েছেন বিষেজ্ঞদের কেউ কেউ। ভোলা সরকারি কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহবুব রহমান বলেন, পরিবেশের ভারসম্য রক্ষায় সাধারণত বিরল প্রজাতির জীবজন্তু বনে অবমুক্ত করা হয়। কিন্তু যেসব প্রাণী পরিবেশ ও মানুষের জন্য হুমকি স্বরূপ, সেগুলো মেরে ফেলাই ভালো। কারণ, রাসেল ভাইপার অত্যন্ত বিপজ্জনক সাপ।

জোলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম খান বলেন, রাসেল ভাইপার বিপজ্জনক ও বিষাক্ত সাপ। এটি সকল প্রাণির জন্য হুমকি স্বরূপ। তাই এ সাপকে মেরে ফেলা উচিত। ভয়াবহ বিষাক্ত রাসেল ভাইপার গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর কেউ কেউ সাপটি সম্পর্কে জানলেও প্রত্যান্ত এলাকার মানুষ কিছুই জানেন না। বিদেশি এ সাপটি উপকূলীয় জেলায় ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে। তাই জনসচেতনতা বাড়ানো পাশাপাশি সাপটি নিয়ন্ত্রণে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান সচেতন মহলের। একই সঙ্গে হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন রাখার দাবি তাদের।

এ ব্যাপারে উপকূলীয় বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. মো. জহিরুল হক বলেন,ঘূর্ণিঝড় রিমালের পর সাপগুলো তাদের আবাসস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই এরা লোকালয়ে চলে এসছে বলে আমরা খবর পাচ্ছি। কিন্তু সাপগুলো মেরে ফেলা সমাধান নয়, এ সাপ থেকে রক্ষায় বসতঘরের আশেপাশে কার্বোলিড এসিড ছিটিয়ে দিতে হবে। সাপটি লোকালয়ে কমই দেখা যায়। বাচ্চা দেওয়ার কারণে হয়তো লোকালয়ে আসে। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে এবং সাপ দেখলেই বনবিভাগে খবর দিতে হবে।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. এ কে এম শফিকুজ্জামান, এই সাপ সবচেয়ে বিষাক্ত ও এর অসহিষ্ণু ব্যবহার। সাপটি লম্বা বহির্গামী বিষদাঁতের জন্য অনেক বেশি লোক দংশিত হন।বিষক্রিয়ায় রক্ত জমাট বেঁধে যায়। ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে দীর্ঘ যন্ত্রণার পর মৃত্যু হয়।তিনি আরো বলেন, সাপে কাটা রোগীদের জন্য ভোলা হাসপাতালসহ উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত ‘এন্টি স্নেক ভেনিম’ ভ্যকসিন সরবরাহ রয়েছে। কোনো রোগী পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে শনাক্ত করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা এ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে পরামর্শ দিচ্ছে।বিষধর রাসেল ভাইপার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় কথা স্বীকার করে ভোলার জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান বলেন, মানুষকে সচেতন করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এই বিভাগের আরোও খবর

Logo