ফেসবুকে পোষ্ট করে মামলা খেলেন শিক্ষক

মো: জাহিদুল ইসলাম (জাহিদ) প্রকাশিত: ৭ জুলাই , ২০২৪ ১৪:২৮ আপডেট: ৭ জুলাই , ২০২৪ ১৪:২৮ পিএম
ফেসবুকে পোষ্ট করে মামলা খেলেন শিক্ষক
ফেসবুকে শিক্ষকদের ন্যায্য দাবির কথা তুলে ধরার কারণে তিনি বারবার বিভাগীয় মামলার শিকার হচ্ছেন।জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ২৩ জুন, জয়পুরহাট জেলা শিক্ষা অফিসার মো. আমিনুল ইসলামের সাক্ষরিত একটি অভিযোগনামা ও বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয় যার স্মারক নং জেপ্রাশিঅ/জয়;বি:মা:/৪১৩।

জয়পুরহাটের কালাই পৌরসভার কলেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা মু. মাহবুবর রহমান।যিনি ক্ষেতলাল উপজেলার হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এবং সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড বাস্তবায়ন সমন্বয় পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ফেসবুকে শিক্ষকদের ন্যায্য দাবির কথা তুলে ধরার কারণে তিনি বারবার বিভাগীয় মামলার শিকার হচ্ছেন।জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ২৩ জুন, জয়পুরহাট জেলা শিক্ষা অফিসার মো. আমিনুল ইসলামের সাক্ষরিত একটি অভিযোগনামা ও বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয় যার স্মারক নং জেপ্রাশিঅ/জয়;বি:মা:/৪১৩।

অভিযোগে বলা হয়, মু. মাহবুবর রহমান গত ৩১ মে তারিখে ফেসবুকে তার ব্যক্তিগত আইডি থেকে "প্রাথমিক শিক্ষার মূল চালিকা শক্তি সহকারী শিক্ষকদের ২০০৯ সাল থেকে পদোন্নতি বন্ধ, কেহ কেহ চাকরি জীবন শেষ করে অবসরে" এই মর্মে পোস্ট করেন, যা বাস্তবতাবর্জিত ও অসত্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বিভিন্ন শিক্ষক বিদ্রুপ মন্তব্য করেছেন, যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা তথা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে।

বিভাগীয় মামলার নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, এই ধরনের পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা-২০১৯ (পরিমার্জিত সংস্করণ) এবং সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা, ২০১৮ এর পরিপন্থী। এছাড়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা, নেতিবাচক, ডিপার্টমেন্ট বিরোধী মন্তব্য করা সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৩ (খ) অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।ভুক্তভোগী শিক্ষক নেতা মু. মাহবুবর রহমানকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কেঁদে কেঁদে শুধু বলেছেন, তিনি কোনো অন্যায় করেননি।

সারা বাংলাদেশের প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, মু. মাহবুবর রহমান একজন মানবিক, সৃষ্টিশীল শিক্ষক। বিদ্যালয়ের জন্য নিবেদিত প্রাণ এবং দায়িত্বে কখনো গাফিলতি করেননি। বরং তিনি শিক্ষকদের মনের কথা লেখেন এবং ন্যায়সংগত অধিকারের কথা তুলে ধরেন। সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতি ও ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নে যেন আলোর মুখ না দেখে সেজন্য তাঁকে বারবার হেনস্থা করা হচ্ছে এবং তাঁর মুখ বন্ধ রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। তারা প্রশ্ন করেন,"পদোন্নতি বন্ধ থাকা সত্য! আর এই সত্য কথা বলার জন্য কি বিভাগীয় মামলা দিতে হবে?"

শিক্ষকনেতা মু. মাহবুবর রহমানের বিরুদ্ধে বিভাগের মামলা রুজু করার বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আমিনুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, "সরকারি কর্মচারী হিসেবে মু. মাহবুবর রহমানের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ধরনের পোস্ট করা শৃঙ্খলা ভঙ্গের শামিল। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছি এবং তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।"

উল্লেখ্য, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মামলা জটিলতার কারণে প্রায় ১৪ বছর যাবৎ পদোন্নতি বন্ধ থাকার পর ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে কিছু উপজেলায় পদোন্নতি চালু হয়। দেশের ৫০৭ উপজেলার মধ্যে মাত্র ১৮/১৯ টি উপজেলায় পদোন্নতি দেওয়ার পর আবারও শিক্ষকদের পদোন্নতি বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ সময় পদোন্নতি বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষক তাঁদের চাকরি জীবন শেষ করে অবসরে গেছেন, কিন্তু তাঁদের পদোন্নতি হয়নি।


এই বিভাগের আরোও খবর

Logo