ফরিদপুরে জামদানিতে নতুন আশা

বিপ্লব কুমার দাস প্রকাশিত: ৬ এপ্রিল , ২০২৪ ০৭:৫৪ আপডেট: ৬ এপ্রিল , ২০২৪ ০৭:৫৪ এএম
ফরিদপুরে জামদানিতে নতুন আশা
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় ঈদ উপলক্ষে ব্যস্ত সময় পার করছেন জামদানির কারিগররা পোশাকে আভিজাত্য আর রুচিশীলতার বহিঃপ্রকাশে আবহমানকাল ধরেই বাঙালি নারীদের পছন্দের শীর্ষে জামদানি শাড়ি। কারুকাজ সজ্জিত মিহি সুতার বুননে তৈরি ঐতিহ্যের ধারক জামদানি শাড়ি এখন তৈরি হচ্ছে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায়।

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় ঈদ উপলক্ষে ব্যস্ত সময় পার করছেন জামদানির কারিগররা পোশাকে আভিজাত্য আর রুচিশীলতার বহিঃপ্রকাশে আবহমানকাল ধরেই বাঙালি নারীদের পছন্দের শীর্ষে জামদানি শাড়ি। কারুকাজ সজ্জিত মিহি সুতার বুননে তৈরি ঐতিহ্যের ধারক জামদানি শাড়ি এখন তৈরি হচ্ছে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায়।

করোনাকালীন বৈশ্বিক মন্দা ও অস্থিরতার মধ্যে বাড়িতে বেকার সময় পার করা জামদানি শাড়ির কারিগর মোস্তফা রহমান সিদ্ধান্ত নেন নিজ গ্রামেই গড়ে তুলবেন জামদানি তাঁতপল্লী। প্রথমে স্ত্রীকে নিয়ে একটি তাঁত বসিয়ে শুরু করেন জামদানি বোনা। আলফাডাঙ্গার পানাইল গ্রামে ধীরে ধীরে গড়ে তুলেছেন জামদানি শাড়ি তৈরির কারখানা। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ঢাকা তথা সারা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে ধীরে ধীরে এখন ছয়টি তাঁত বসিয়ে এলাকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের আলো ছড়াচ্ছেন তিনি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে নির্ঘুম সময় কাটছে মোস্তফাসহ জামদানি পল্লীর ১২ কারিগরের। চাহিদা মেটাতে বর্তমানে দিন-রাত কর্মব্যস্ত তারা। আলফাডাঙ্গা উপজেলা সদর থেকে আট কিলোমিটার দূরে টগরবন্ধ ইউনিয়নের মধুমতী নদের তীরবর্তী পানাইল গ্রাম। এ গ্রামেই সরকারি বেসরকারি কোনো প্রকার সাহায্য সহযোগিতা ছাড়াই সম্পূর্ণ ব্যক্তি উদ্যোগে রেশমি সুতার জামদানি শাড়ির কারখানা গড়ে তুলেছেন গ্রামটির উদ্যোগী তরুণ মোস্তফা রহমান। শুরুতে নানা প্রতিবন্ধকতা থাকলেও বর্তমানে সম্ভাবনার কথা শোনান মোস্তফা।

তিনি জানান, ‘প্রায় ২০ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের বিভিন্ন তাঁতপল্লীতে কাজ করেছি। ২০২০ সালে করোনাকালে বাড়িতে এসে প্রথমে একটি তাঁত বসিয়ে জামদানি শাড়ি বুনতে শুরু করি। পদ্মা সেতু চালু হলে আমার একসময়কার সহকর্মী কারিগরদের সঙ্গে যোগাযোগ করি ও স্থানীয় কয়েকজনকে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁত বাড়াই, এখন ছয়টি তাঁতে ১২ শ্রমিক কাজ করে।’

মোস্তফা রহমান আরও বলেন, ‘কারখানাটি গড়ে তুলতে খরচ হয়েছে পাঁচ লাখ টাকার মতো। ৬টি তাঁতে মাসে ২০ থেকে ২৫টি জামদানি শাড়ি বোনা যায়। সুতা, কারিগরদের বেতন ও আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে প্রতিমাসে প্রায় আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা খরচ হয়।’ সবকিছু বাদে মাসে ৫০-৬০ হাজার টাকা আয় হয় বলে জানান এ উদ্যোক্তা। 

কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জামদানি শাড়ি তৈরিতে দুজন কারিগরকে একসঙ্গে কাজ করতে হয়। কারিগররা প্রতিটি সুতা হাত দিয়ে ঘুরিয়ে এ শাড়ি বুনন করেন। দুজন কারিগর প্রতিদিন ১২-১৪ ঘণ্টা শ্রম দিলে নকশা ভেদে একটি শাড়ি তৈরি করতে তিন থেকে দশ দিন এমনকি শাড়ির প্রকারভেদে চার মাস পর্যন্ত লাগতে পারে। সুতার মান ও কাজের সুতা বিবেচনায় একটি জামদানি শাড়ির দাম তিন হাজার থেকে এক লাখ টাকাও হতে পারে।

তারা আরও জানান, আমাদের দেশে সাধারণত তিন ধরনের জামদানি শাড়ি বোনা হয়। যদিও মোস্তফা রহমানের এই কারখানায় ‘হাফ-সিল্ক জামদানি’র বেশি বুনন হয়। এ শাড়ির বৈশিষ্ট্য হলো এর আড়াআড়ি সুতাগুলো রেশমের আর লম্বালম্বি সুতাগুলো তুলার। এ ছাড়া রেশম সুতার ‘ফুল-সিল্ক জামদানি’ ও তুলার সুতার ‘ফুল কটন জামদানি’ও তৈরি হয়। এখানে বিভিন্ন ধরনের ও দামের শাড়ি রয়েছে। শাড়িগুলো বুননের পর ঢাকায় বিসিক বিক্রয় কেন্দ্র, তাঁতপল্লী ছাড়াও বিভিন্ন জামদানি মার্কেটে বিক্রি হয়ে থাকে। 

কারখানার শ্রমিক কানাইপুরের ইমন বলেন, এখানে দুই বছর ধরে জামদানি শাড়ি তৈরির কাজ করছি। সামনে ঈদ। বেতন-বোনাস নিয়ে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে যাব। ঈদে যাতে বেশি শাড়ি বুনতে পারি, এ কারণে দিন-রাত মিলিয়ে সমান তালে কাজ করছি।

শেরপুরের বাসিন্দা ও জামদানি শাড়ির কারিগর আতিকুল হোসেন বলেন, দুই-তিন বছর ধরে এখানে কাজ করছি। ঈদের জন্য ব্যস্ততা বেড়েছে।

উদ্যোক্তা মোস্তফা রহমানের স্ত্রী লিপি সুলতানা বলেন, কয়েক বছর আগে আমার স্বামীর কাছ থেকে এই কাজ শিখেছি। এখন আমিও কাজ করি। আমার স্বামী বিভিন্ন কাজে ঢাকা গেলে কারখানাটি আমি দেখাশোনা করি। 

এ বিষয়ে আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমীন ইয়াছমীন বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এখন জানতে পেরেছি। সময় করে অবশ্যই জামদানি শাড়ি তৈরির কারখানায় যাব।

এই বিভাগের আরোও খবর

Logo