ফেনী পৌরসভায় পেয়েছিলেন মধুর হাড়ি। রাজনৈতিক প্রভাবে দুই যুগের বেশি সময় এখানে থেকে গড়ে তুলেছিলেন দুর্নীতি-অনিয়মের সিন্ডিকেট।
ফেনী পৌরসভায় পেয়েছিলেন মধুর হাড়ি। রাজনৈতিক প্রভাবে দুই যুগের বেশি সময় এখানে থেকে গড়ে তুলেছিলেন দুর্নীতি-অনিয়মের সিন্ডিকেট। স্থানীয়দের কাছে পরিচিতি পেয়েছিলেন 'ঘুষখোর' আজিজ হিসেবে। বিভিন্ন সময় বদলির আদেশ হলেও তদ্বির গুণে বারবার সেটি রহিত করেছেন। আবারো তার বদলির আদেশ হয়েছে।
আলোচিত এ ব্যক্তি হলেন ফেনী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো.আজিজুল হক। এবার তাকে চট্টগ্রামের বাঁশখালী পৌরসভায় বদলি করা হয়েছে। গতকাল স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ কবির উদ্দীন স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে তাকে বদলি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয় আগামী ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে মধ্যে বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদান করবেন। অন্যথায় তিনি আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে বর্তমান কর্মস্থল থেকে তাৎক্ষণিক অবমুক্ত (স্ট্যান্ড রিলিজ) বলে গণ্য হবেন। তার বদলির আদেশ শুনে পৌরস- ভার সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং স্থানীয়দের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। আজিজুলের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। মাস্টার রোলে নিয়োগ অবৈধ হলেও প্রশাসনিক কর্মকর্তা শরাফত উল্যা চৌধুরীর যোগসাজশে আজিজুল হক অন্তত ৫০ জনকে নিয়োগ দিয়ে কোটি টাকা হাতিয়েছেন। জ্বালানি তেলের খরচ দেখিয়ে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা লোপাটের ঘটনা সবার জানা। এছাড়াও টেন্ডার-কোটেশন ছাড়াই আজিজুল হক ও শরাফত উল্যা চৌধুরী শতকোটি টাকার কেনাকাটা দেখিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। পৌর এলাকায় সম্প্রসারিত ভবনের জন্য কর প্রদান বাধ্যতামূলক। তবে আজিজুল হককে উৎকোচ দিয়ে বছরের পর বছর কর না দিয়ে থাকা যায়। এভাবে প্রতি বছর ৫-৬ কোটির বেশি ক্ষতি করেছে পৌরসভার। নতুন হোল্ডিং, মিউটেশন, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, ওয়ারিশ ভবনের অনুমোদন, সনদ, নকশা যৌথ জরিপ, ট্রেড লাইসেন্স দিতে ঘুষ নেন। দিনে দিনে তার ঘুষের রেট বেড়েছে। তার অবৈধ আয়ের আরও খাতের মধ্যে আছে হাট-বাজার, ইজারার কোটি কোটি টাকা পৌরসভার তহবিলে জমা না দেওয়া, পৌরসভার ভূমি লিজ-দোকান বরাদ্দ ও মিউটেশনে মোটা অঙ্কের ঘুষ নেওয়া। রিকশা, সিএনজি পৌর টাউন সার্ভিস এসব গাড়ির লাইসেন্স ভাড়া দিয়ে দৈনিক ৫০ ও মাসিক ৫০ হাজার টাকা করে নেন। আবার অবৈধ যানের বিরুদ্ধে অভিযানের নামে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে টাকা আদায় করেন। আজিজুল হক সিন্ডিকেটের লোপাটের অন্য ক্ষেত্রগুলো হলো পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের বেতন দেখিয়ে বছরে অন্তত কোটি টাকা আত্মসাৎ। পাশাপাশি 'সুইপার বিল' নাম দিয়ে মাসে দুই বা ততোধিকবার প্রায় লাখ টাকা করে ১০ বছর ধরে তুলেছে চক্রটি। অর্থাৎ এ খাতে ১৫-২০ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। জাল নথি নামে-বেনামে কোটি টাকা লোপাট করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর নিকটাত্মীয় পরিচয় দিয়ে আজিজুল ধরাকে সরা জ্ঞান করতেন। এ পরিচয়ের সুবাদেই তাকে অন্যত্র বদলি আদেশ বারবার অকার্যকর হয়েছে।