নাফ নদীতে জেলেদের ভয় ও আতঙ্কের নাম আরকান আর্মি

কামরুল হাসান প্রকাশিত: ২৩ ফেব্রুয়ারী , ২০২৫ ১৪:০৮ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারী , ২০২৫ ১৪:০৮ পিএম
নাফ নদীতে জেলেদের ভয় ও আতঙ্কের নাম আরকান আর্মি
মিয়ানমারের রাখাইনের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি গত এক সপ্তাহে রোহিঙ্গাসহ ২৩ জন বাংলাদেশী জেলেকে জিম্মি করে ধরে নিয়ে গেছে। এতে আতঙ্কে রয়েছেন কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তবর্তী জেলেরা।

মিয়ানমারের রাখাইনের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি গত এক সপ্তাহে রোহিঙ্গাসহ ২৩ জন বাংলাদেশী জেলেকে জিম্মি করে ধরে নিয়ে গেছে। এতে আতঙ্কে রয়েছেন কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তবর্তী জেলেরা। নাফ নদ ও সংলগ্ন সাগরে মাছ শিকারে যেতে ভয় পাচ্ছেন তারা। ঘাটে নৌযান নোঙর করে রেখেছেন অনেকে। দুঃচিন্তা বেড়েছে মাছ শিকারে যেতে না পারা ও জিম্মি জেলে পরিবারের সদস্যদের মাঝে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, একের পর এক জেলে অপহরণের ঘটনায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার নাফ নদ সীমান্ত ঘেঁষা শাহপরীর দ্বীপের জেলেদের মাঝে ভীতি কাজ করছে। অনেকে অপহরণের ভয়ে নাফ নদ ও সাগরে নামছেন না। দ্বীপের জেটি ঘাট, মিস্ত্রিপাড়া ঘাট, দক্ষিণ পাড়া ঘাট ও পশ্চিম পাড়া ঘাটে সারি সারি নৌকা ও ট্রলার নোঙর করে রাখা হয়েছে। এসব ঘাটে ছোট-বড় মিলিয়ে কয়েকশ মাছ ধরার ট্রলার ও নৌকা রয়েছে। অন্যদিকে অপহরণের শিকার পরিবারের সদস্যরা কাঁদছেন। আবার অনেকে প্রিয়জনের জন্য নাফ নদ ও সাগর পাড়ে অপেক্ষা করছেন। শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিকালে শাহপরীর দ্বীপ পশ্চিম পাড়ার বেড়িবাঁধের ব্লকে অপেক্ষা করছিলেন বৃদ্ধ নারী সালেহা বেগম (৫৫) ও আনোয়ারা বেগম (৪০)। তারা দুজনই শাহপরীর দ্বীপের মাঝের পাড়ার বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) অপহৃতদের মধ্যে এই দুই নারীর ছেলে এবং নাতিও রয়েছেন। বেড়িবাঁধে কেন বসে আছেন জানতে চাইলে কান্না ভেজা কণ্ঠে সালেহা বেগম বলেন, ‘আমার ১১ বছরে নাতি এক মাঝির সঙ্গে সাগরে মাছ শিকারে বের হয়। এখনও কোনও খোঁজখবর পাইনি। এখানে বসে তার জন্য অপেক্ষা করছি। এখন শুনেছি, তাদের মিয়ানমারে ধরে নিয়ে গেছে। কী হবে তাদের– কিছু বলতে পারছি না, খুব ভয়ে আছি। চোখের পানি মুছতে মুছতে তিনি বলেন, ‘অনলাইনে কাপড় অর্ডার দিয়েছিল সে। সেটার টাকার জোগাড় করতে সাগরে মাছ শিকারে যায় শ্রমিক হিসেবে। তার খুব শখ ছিল ঈদে অনলাইনের কাপড় পরবে। কিন্তু সে আর ফিরবে কি না? দ্রুত তাদের ফেরত আনার উদ্যোগ নিতে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। আনোয়ারা বেগম বলেন, আমাদের পরিবারের আয়ের প্রধান উৎস আব্দুর রহমান। একদিন পার হয়ে গেছে, মিয়ানমার তাদের এখনও ছেড়ে দেয়নি। প্রায় সময় বাংলাদেশি জেলেদের ধরে নিয়ে যায় মিয়ানমারের আরকান আর্মি। কিন্তু এটির কোনও স্থায়ী সমাধান হয়নি বা হচ্ছে না। আমরা খুব আতঙ্কে আছি সে দেশের আরাকান আর্মি তাদের এখনও ছেড়ে দেয়নি। নৌঘাটের জেলেরা জানান, মাদকের পাশাপাশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধে নাফ নদে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা গত ১৩ ফেব্রুয়ারি তুলে নেওয়া হয়েছে। প্রায় ৮ বছর পর জেলেদের শর্ত দিয়ে তিন মাসের জন্য নাফ নদে মাছ শিকারে অনুমতি দেওয়া হয়। এতে জেলেদের মাঝে আনন্দের জোয়ার দেখা দিয়েছিল। কিন্তু কয়েকদিন যেতে না যেতে আরাকান আর্মি জেলেদের ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় আবার হতাশা দেখা দিয়েছে। শর্ত মেনে জেলেরা মাছ শিকার করছে, এরপরও ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তবে জেলেরা নাফ নদ ও সাগরের জলসীমানা অতিক্রম করার কারণেও এ ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে অনেক মনে করেন।

এই বিভাগের আরোও খবর

Logo