রাজশাহীর তানোর উপজেলায় আলু তোলার পর রোপণকৃত বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। এ বছরের অনুকূল আবহাওয়া এবং প্রযুক্তি নির্ভর কৃষিকাজের কারণে ফলন ভালো হয়েছে এবং বাজারমূল্যেও মিলছে ইতিবাচক সাড়া—যার ফলে বেশ খুশি স্থানীয় কৃষকরা।
তানোর উপজেলার তালন্দ ইউপির মোহর গ্রামের আদর্শ কৃষক মিলন ও নাসির জানান, তিনি তার ১৫ বিঘা জমিতে আলু তোলার পর বোরো ধান রোপণ করেন। এর মধ্যে ৭ বিঘা জমির ধান ইতোমধ্যেই মাঠেই বিক্রি করেছেন। বাকি ৮ বিঘার ধান দু’এক দিনের মধ্যে কাটবেন। তিনি বলেন, প্রতি বিঘায় ধানের ফলন হচ্ছে ২৪-২৬ মন (সাড়ে ৩৭ কেজিতে এক মন ধরে)। প্রতি মন ধান বিক্রি হচ্ছে ১,০০০ থেকে ১,০৫০ টাকা দরে, ফলে বিঘাপ্রতি গড়ে ২৬,০০০ থেকে ২৭,০০০ টাকা আয় হচ্ছে। একইসঙ্গে, মেশিন ব্যবহারে প্রতি বিঘায় খরচ হচ্ছে প্রায় ১২,০০০ থেকে ১৩,০০০ টাকা, ফলে এক বিঘা জমি থেকে কৃষকরা লাভ করছেন প্রায় ১২,০০০ থেকে ১৩,০০০ টাকা। জমিতে পানি জমে কাঁদায় রূপ নেয়ায় শ্রমিক দিয়ে ধান কাটা কঠিন হয়ে পড়েছে। শ্রমিক সংকট, উচ্চ মজুরি এবং পরিবহনে সমস্যার কারণে এখন কৃষকরা বেছে নিচ্ছেন কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন। এতে ধান কাটা, মাড়াই ও বস্তাবন্দি—all-in-one প্রক্রিয়ায় মাত্র এক ঘণ্টায় দেড় একর জমির কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে।
উপজেলার কৃষি অফিসার সাইফুল্লাহ আহমেদ জানান, তানোর উপজেলায় বর্তমানে মোট ১৫টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন কৃষকদের মাঝে রয়েছে। এর মধ্যে ১০টি নতুন করে সরবরাহ করা হয়েছে। প্রতিটি মেশিনের মূল্য প্রায় ২৫ লাখ টাকা, যা সরকারিভাবে ভর্তুকির আওতায় সরবরাহ করা হয়েছে। এই মেশিনের ফলে কৃষকদের সময় ও অর্থ—উভয়ই সাশ্রয় হচ্ছে। তানোরের মাঠজুড়ে এখন দোল খাচ্ছে পাঁকা বোরো ধানের শীষ। আলু তোলার পর রোপণকৃত এই ধান এখন পরিপূর্ণভাবে পরিণত হয়েছে। কিন্তু অতিরিক্ত পানি জমে থাকায় অনেক জায়গায় ধান কাটা সম্ভব হচ্ছে না শ্রমিক দিয়ে। এই পরিস্থিতিতে কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে। দুবইল গ্রামের কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন মালিক বিমল জানান, তিনি বিঘাপ্রতি ২,০০০ থেকে ২,৫০০ টাকা নেন। প্রতিদিন ২০-২৫ বিঘা জমির ধান কাটতে সক্ষম হন। তিনি বলেন, “এই মেশিন না থাকলে আলুর জমিতে রোপণকৃত ধান তোলা কৃষকদের জন্য দুঃস্বপ্ন হয়ে যেত।
তিনি আরও বলেন, “চাহিদা এত বেশি যে কৃষকদের সিরিয়াল অনুযায়ী কেটে দিচ্ছি। সরকারিভাবে সহায়তা না থাকলে এত ব্যয়বহুল মেশিন কেনা সম্ভব হতো না। স্থানীয় কৃষিবিদরা বলছেন, ধান কাটা, মাড়াই এবং একসঙ্গে বস্তাবন্দি করার প্রযুক্তি ব্যবহারে কৃষকরা যে সময় ও খরচ সাশ্রয় করছেন, তা আগামী দিনে কৃষি খাতে একটা বিপ্লব ডেকে আনবে। বিশেষ করে শ্রমিক সংকটের সময় আধুনিক প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতাই হবে টেকসই চাষাবাদের ভবিষ্যৎ।
তানোরে আলুর জমিতে রোপণকৃত বোরো ধানের এ বছর ফলন ও দাম দুই-ই ভালো পেয়েছেন কৃষকরা। কম্বাইন্ড হারভেস্টারের মতো প্রযুক্তির ব্যবহার কৃষকদের চাষাবাদে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে কৃষকদের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা অর্জন আরও সহজ হবে বলেই মনে করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।