জামালপুরের সরিষাবাড়ী পৌরসভা কাগজে কলমে প্রথম শ্রেণির হলেও রাস্তার অবস্থা দেখে তা বুঝার সাধ্য নেই। রাস্তাগুলো দেখলে যে কেউ মনে করতে পারে অজপাড়া গাঁয়ের কোনো মাটির কাঁচা রাস্তা।পৌরসভার আওতাধীন বেশ কিছু রাস্তায় যানবাহন চলাচল তো দূরের কথা সেসব রাস্তা পায়ে হেঁটে চলারও অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
দীর্ঘদিন পৌরসভার পক্ষ থেকে রাস্তাগুলো মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় নি। সংস্কার না করায় চলাচলে অনুপোযোগী হওয়ায় দূভোগে পড়েছে পৌরবাসী ও পথচারী,পৌরবাসীর অভিযোগ, প্রায় প্রতি বছরই পৌরসভার পক্ষ থেকে কয়েকটি সড়ক সংস্কার করা হয়, যা খুবই দায়সারাভাবে। ফলে সংস্কারের কয়েক মাস না যেতেই সড়কগুলো পুরানো চেহারায় ফিরে যায়। আর দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় কিছু সড়কে চলতে কষ্ট পোহায় মানুষ।
বেশির ভাগ সড়কের পাশে কোনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। এতে দিনের পর দিন পানি জমে বেশির ভাগ জায়গায় সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য জলাবদ্ধতা । অধিকাংশ স্থানে পিচ-কংক্রিটের লেশমাত্র নেই। বৃষ্টির পানিতে সব সড়ক ডুবে গেছে। সড়কে জমে থাকা নোংরা পানি ও ময়লার দুর্গন্ধে পরিবেশ নষ্টের পাশাপশি চলাচলে বিড়ম্বনায় সকল শ্রেনীর পথচারীরা। সরেজমিনে শনিবার (৬ জুন ) সকালে পৌরসভার ১, ২, ৩ ও ৪ নং ৪টি ওয়ার্ডের পোস্ট অফিস মোড় থেকে আরামনগর মহিলা কলেজ, আমার নগর বাজার থেকে তালুকদার বাড়ি মোড়, রিয়াজ উদ্দিন তালুকদার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে স্বপ্নীল পার্ক, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মোড় থেকে সরিষাবাড়ী উপজেলা পরিষদ, সামর্থবড়ী মোড় থেকে সরিষাবাড়ী শহর প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত, সামর্থবাড়ী মসজিদ মোড় থেকে ব্যাপারিপাড়া পর্যন্ত, মূলবাড়ী মোর থেকে মূলবাড়ী গোরস্হান প্রজন্ত, সরিষাবাড়ী মাহমুদা সালাম মহিলা কলেজ থেকে ঝালুপাড়া পর্যন্ত, সরিষাবাড়ী থানা রোড থেকে ইস্পাহানী আবাসিক এলাকা রাস্তাগুলোসহ ১২ টি রাস্তা পরিদর্শন করে পৌরবাসীদের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
সায়েম সালেহীন উপজেলার চিলড্রেন্স হোম পাবলিক স্কুলের ৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। সকালে পৌরসভার পোস্ট অফিস মোড় থেকে তার স্কুলে যাচ্ছে। এ সময় কথা হলে সায়েম বলেন, আমি এবং আমার পরিবার ২০১১ সালে এখানে এসেছি। আমি আসার পর থেকেই এই রাস্তাটি এমনই দেখছি। মাঝখানে কিছুদিন আগে রাস্তাটি ঠিক করা হয়েছিল। আবার বৃষ্টি হওয়ায় পর একই রকম হয়ে গেছে। বৃষ্টি হলে রাস্তাটা একেবারে নাজেহাল অবস্থা হয়ে যায়। তখন এই রাস্তা দিয়ে কোন ভ্যান বা অটো যেতে চাই না। তখন আমাদের অনেক ঘুরে যেতে হয়। স্কুলে যেতে দেরি হয়। এই রাস্তাটি দ্রুত সময়ে সংস্কার করা প্রয়োজন। এই রাস্তায় দিয়ে জেলার বড় বাজার আরামনগর বাজার, স্কুল, কলেজ, এই রাস্তা মহিলা কলেজে যাওয়ার রাস্তা। রাস্তাটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
একই স্কুলের একই শ্রেণীর শিক্ষার্থী রাকিন তানবীর রনক। তিনি বলেন, আমি ছোট বেলা থেকেই দেখেছি রাস্তাটি একই রকম। মাঝখানে একবার ঠিক করা হয়েছিল আবার ভেঙে গেছে। এই রাস্তায় স্কুলে যাওয়ার সময় অনেক অসুবিধা হয়। গাড়িতে যেতে অনেক ঝাঁকি লাগে। বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় পায়ে হেঁটে যাওয়া যায় না আরামনগর বাজারের কাপড়ের ব্যবসায়ী সুমন দাস। আরামনগর বাজার থেকে তালুকদার বাড়ি মোড় পর্যন্ত রাস্তা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের এই আরামনগর বাজারের এই রাস্তায় বৃষ্টি হলে এক হাঁটু পানি জমে যায়। রাস্তায় ড্রেন আছে কিন্তু ড্রেনের ময়লা পরিষ্কার করা হয় না। পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা নেই। দোকানের সামনের রাস্তায় পানি জমা থাকে কাস্টমার আসে না।
আরামনগর বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক বলেন, বিগত পাঁচ বছর ধরে এই রাস্তার এই অবস্থা। আমরা বিভিন্ন সময় পৌরসভার অভিযোগ করেছি। অভিযোগ দিয়ে আমরা কোন সুফল পাই না। অভিযোগ করলে দুইজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী আসে। তারা আইসা কোন জায়গায় যদি দুই একটা পলিথিন থাকে তাই নিয়ে যায়। কিন্তু বিগত ১০ বছরে আরামনগর বাজারের এই রাস্তার ড্রেন পরিস্কার হয়েছে বলে আমার জানা নেই।রাস্তার বেহাল দশা নিয়ে পৌর মেয়র মনির উদ্দিনের সাথে কথা বলতে তার কার্যালয়ে গিয়ে পাওয়া যায়নি।
মোঠফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, রাস্তা ট্রেন্ডার প্রক্রিয়ায় আছে। তবে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি নেটওয়ার্ক সমস্যার অজুহাত দেখিয়ে বলেন, আচ্ছা একটু পরে ফোন দেই আপনাকে, কিছু বোঝা যাচ্ছে না। এই কথা বলে ফোনটি কেটে দেন।প্রসঙ্গত, সরিষাবাড়ী ময়মনসিংহ বিভাগের একটি পৌরসভা। ১৯৯০ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২১.১০ বর্গ কিমি আয়তনের পৌরসভার প্রায় ৫০ হাজারের বেশি মানুষ বসবাস করেন। পৌরসভাটি বর্তমানে ২য় শ্রেণী হতে ১ম শ্রেণীতে উন্নীত হয়েছে।