চায়ের কাপ থেকে ছেলের ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন
ভান্ডারপুর বাজারের ব্যস্ততা, রোদে পুড়ে যাওয়া এক টুকরো রাস্তায়, রিফা প্লাজার পাশে দাঁড়িয়ে আছে একটি ছোট চায়ের দোকান। দোকানের এক কোণে মুখে ক্লান্তির ছাপ লুকিয়ে হাসিমুখে চা বানাচ্ছেন কাজল কুমার মন্ডল। চা-পানের কাপে কেবল চিনি আর দুধ নয়, মিশে আছে তাঁর স্বপ্ন, মিশে আছে তাঁর ছেলের ভবিষ্যৎ গড়ার অব্যক্ত আকুতি। বলছি আধাইপুর গ্রামের কাজল কুমার মন্ডলের কথা।
জীবনে বড় কিছু চাওয়া হয়নি কাজল মন্ডলের। বাবার রেখে যাওয়া সামান্য ভিটে-মাটি আর কাঁধে সততার উত্তরাধিকার। তবু স্বপ্ন দেখেছেন—তাঁর সন্তান একদিন বইয়ের আলোয় বড় হবে, কলম ধরবে হাতে, নাম লেখাবে সমাজের সম্মানিত কোনো পেশায়। সেই স্বপ্ন পূরণ করতে তিনি চা আর পান বিক্রি করে প্রতিদিন যুদ্ধ করে যাচ্ছেন সময়ের সাথে, অভাবের সাথে।
তাঁর দোকান সকাল থেকে রাত পর্যন্ত খোলা থাকে। এক কাপ চায়ে যিনি হাজারো মানুষের ক্লান্তি দূর করেন, তিনি নিজের ক্লান্তি লুকিয়ে রাখেন সন্তানের মুখের হাসির জন্য। দোকানে বসেই তিনি হিসেব রাখেন ছেলের স্কুল ফি, বইয়ের দাম, পরীক্ষার খরচ। কখনও কখনও রাতের বেলায় দোকান বন্ধ করে ঘরে ফিরে ছেলে পাশে বসে পড়ছে দেখে চোখে পানি আসে—কিন্তু সেটাওলুকিয়ে ফেলেন।
তিনি বলেন,
"আমার ছেলেটা ভালো মানুষ হোক। আমি সারাজীবন চা বিক্রি করলাম, তাতে দুঃখ নেই। কিন্তু ওর যেন এই কষ্ট না হয়।"
এই কথাগুলো এক মাটির মানুষ বললেও, তা যেন হাজারো বাবার মনের কথা। সন্তানকে মানুষ করার লড়াইয়ে তিনিই একজন নিরব বীর।
আজকের সমাজে যেখানে টাকা আর চাকচিক্যের পেছনে ছুটছে মানুষ, সেখানে কাজল কুমার মন্ডলের মতো মানুষরা শিখিয়ে দেন—সত্যিকারের স্বপ্ন শুধু ধনী হলেই দেখা যায় না, দেখা যায় শ্রম, মমতা আর আত্মত্যাগ দিয়েও। তাঁর প্রতিটি চায়ের কাপেই যেন মিশে আছে ভবিষ্যতের সম্ভাবনার সুগন্ধ।