চান্দিনায় অসামাজিক কাজের অপবাদ দিয়ে গৃহকর্মীকে মারধর বসত ঘর তালা দিয়ে গরু-ছাগল লুটের অভিযোগ

মোঃ সোহেল রানা প্রকাশিত: ১২ এপ্রিল , ২০২৫ ১২:১৭ আপডেট: ১২ এপ্রিল , ২০২৫ ১২:১৭ পিএম
চান্দিনায় অসামাজিক কাজের অপবাদ দিয়ে গৃহকর্মীকে মারধর বসত ঘর তালা দিয়ে গরু-ছাগল লুটের অভিযোগ

কুমিল্লার চান্দিনায় ঘর-বাড়ি দখল করার পাঁয়তারায় গৃহকর্মী রহিমা বেগম নামে (৩৪) নামে এক অসহায় নারীকে অসামাজিক কাজে জড়িত থাকার অপবাদ দিয়ে তাকে ও তার মাকে বেধরক মারধর করে বসত ঘর তালা দিয়ে গরু ও ছাগল লুটের অভিযোগ উঠেছে তার মামাত ভাইয়ের বিরুদ্ধে।

বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) সকালে চান্দিনা উপজেলার বরকরই ইউনিয়নের বরকরই গ্রামের বাদশাহ্র বাড়িতে ওই অমানবিক ঘটনা ঘটে। এসময় তার মা বয়োবৃদ্ধ শ্রীমতি (৬৫) কেও মারধর করে আহত করে ।

সরেজমিনে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়- দীর্ঘদিন ধরে রহিমা বেগমের ঘর-বাড়ি দখল করার পাঁয়তারা করছেন একই বাড়ির মো. শহিদ এর ছেলে খোকন মিয়া। খোকন সম্পর্কে তার মামাত ভাই। পাশের বাড়ির এক পুরুষকে জড়িয়ে অসামাজিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ দিয়ে বৃহস্পতিবার খোকন এর নেতৃত্বে কয়েকজন দুষ্কৃতকারী রহিমা ও তার মাকে মারধর করে। এসময় খোকন তাদের ঘর থেকে ১টি গরু এবং ২টি ছাগল লুট করে নিয়ে যায়। গ্রামবাসী আরও বলেন- স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এর আওতায় দৈনিক মজুরীতে রাস্তায় কাজ করতেন রহিমা বেগম। গত ৭/৮ মাস পূর্বে তার ওই কাজের চাকরি চলে যাওয়ায় পাশের একটি বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করে কোন রকমে জীবন যাপন করে আসছেন সে। রমজান মাসে রহিমা বেগম শারীরিকভাবে হঠাৎ অসুস্থ হলে অসামাজিক কাজে জড়িত আছে গুঞ্জন ছড়িয়ে এলাকাবাসীকে রহিমার বিরুদ্ধে খেপিয়ে তোলে খোকন।

ভক্তভোগী রহিমা বেগম বলেন- ১৫ বছর যাবৎ স্বামী না থাকায় আমি রাস্তার কাজ করে মা ও মেয়ে কোন রকমে জীবন যাপন করছি। গত ৭/৮ মাস ধরে কাজ বন্ধ থাকায় পাশের একটি বাড়িতে রান্না-বান্নার কাজ করি। ঈদের আগে আমি শারীরিকভাবে হঠাৎ অসুস্থ হলে তখন তারা ওই বাড়ির পুরুষকে জড়িয়ে আমাকে অপবাদ দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করে। বৃহস্পতিবার সকালে খোকন আমাকে এবং আমার মাকে মেরে ১টি গরু, ২টি ছাগল নিয়ে যায় এবং বসত ঘরে তালা দিয়ে দেয় খোকনের দাদী আমার মা শ্রীমতি’র নামে এই জায়গা দিয়ে গেছে। জায়গা দেওয়ার পর থেকেই আমার সাথে অনেক অত্যাচার করছে। জায়গাটি দখলে নেওয়ার পাঁয়তারায় বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করে একের পর এক মিথ্যা অভিযোগ করছে।

পার্শ্ববর্তী বাড়ির আলমগীর হোসেন বলেন- তাদেরকে মারধর করার বিষয়টি ‘সকালে রহিমার মা আমাকে জানিয়েছে। এর আগে রহিমার বিষয়ে যে অপবাদ উঠেছে তা আমি শুনেছি। কিন্তু ওই ঘটনার কোন প্রমাণ আমরা পাইনি। ঘটনার পর থেকে খোকন পলাতক রয়েছে। তবে প্রমাণ ছাড়া এমন অভিযোগ তুলে তাদের সাথে এমন আচরণ করা অমানবিক।
এবিষয়ে অভিযুক্ত খোকন এর বাড়িতে গিয়ে জানতে চেষ্টা করেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
খোকনের চাচাতো ভাই সাইফুল রহিমা বেগমের অসুস্থতার বিষয়টি জানিয়ে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করে গরু-ছাগল নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন।

এব্যাপারে পল্লী চিকিৎসক শিশির দেবনাথ বলেন- ‘আমার বাবা পল্লী চিকিৎসক। তিনি আমাকে স্যালাইন ও ইনজেকশন পুষ করতে বলেছিলেন। আমি সেটাই করেছি। পেশেন্টের রক্ত ক্ষরণ হচ্ছিল। জরায়ু ইনফেকশন থেকেও রক্ত ক্ষরণ হতে পারে। এর বেশি কিছু আমার জানা নেই।’ তিনি আরও বলেন- আমি মহিলাকে এমবিবিএস ডাক্তার দেখানোর পরামর্শ দিয়েছিলাম।

এব্যাপারে বরকরই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম মজুমদার শিপন জানান, এব্যাপারে আমি কিছুই জানিনা।

এব্যাপারে চান্দিনা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ শাহিনুল ইসলাম জানান, আমি ওই ঘটনা সম্পর্কে এই প্রথম শুনলাম। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

এই বিভাগের আরোও খবর

Logo