৭২ কেজি সোনা চোরাচালান মামলায় ৩ জনের ফাঁসি ২ জনের যাবজ্জীবন

এসএম মিরাজুল কবীর টিটো প্রকাশিত: ১৮ নভেম্বর , ২০২৩ ০৯:৪১ আপডেট: ১৮ নভেম্বর , ২০২৩ ০৯:৪১ এএম
৭২ কেজি সোনা চোরাচালান মামলায় ৩ জনের ফাঁসি ২ জনের যাবজ্জীবন
৪ জনকে ১৪ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড যশোরে ৭২ কেজি সোনা চোরাচালান মামলায় ৩ জনের ফাঁসি, ২ জনের যাবজ্জীবন।

যশোরের বহুলালোচিত ৭২ কেজি সাড়ে ৪শ’ গ্রাম সোনা চোরাচালান মামলায় এক ভারতীয় নাগরিকসহ ৩ জনকে ফাঁসি, ২ জনকে যাবজ্জীবন ও ৪ জনকে ১৪ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডের আদেশ দিয়েছে একটি আদালত। একই সাথে রায়ে উদ্ধার হওয়া সোনার বার রাষ্ট্রের অনুকুলে বাজেয়াপ্তের আদেশ দেয়া হয়েছে । বৃহস্পতিবার অতিরিক্তি জেলা ও দায়রা জজ ৩য় আদালতের বিচারক মো. তাজুল ইসলাম এক রায়ে এ আদেশ দিয়েছেন।

ফাঁসির আদেশ প্রাপ্তরা হলো, শার্শার শিকারপুর গ্রামের পশ্চিমপাড়ার তোফাজ্জেল হোসেন তরফদারের ছেলে মহিউদ্দিন তরফদার শান্তি, জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে জাহিদুল ইসলাম ও নারিকেলবাড়িয়া গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে মুজিবুর রহমান। যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড প্রাপ্তরা হলো, শার্শার গোকর্ন গ্রামের মাঝেরপাড়ার আলী হোসেন সরদারের ছেলে মাসুদ রানা ও ভারতের ২৪ পরগনা জেলার বাগদা থানার গাংগুলিয়া গ্রামের নুর জালাল মন্ডল ওরফে মেছের আলীর ছেলে এবং যশোরের শার্শার কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা শফিকুল মন্ডল ওরফে মোল্যা ওরফে নিধু ওরফে লিদু।১৪ বছর সশ্রম কারাদণ্ড প্রাপ্ত আসামিরা হলো, শার্শার দূর্গাপুর গ্রামের মৃত আবুল মোড়লের ছেলে সফি, আব্দুল মোমিনের ছেলে ইমরান হোসেন, আব্দুল কাদেরের ছেলে রুবেল হোসেন, রামচন্দ্রপুর গ্রামের নওসাদ আলীর ছেলে কবির হোসেন। দণ্ডপ্রাপ্ত মহিউদ্দিন তরফদার শান্তি, মুজিবুর রহমান, মাসুদ রানা, শফি, কবির হোসেন ও শফিকুল মন্ডলকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। একই সাথে পলাতক অপর তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

এবিষয় নিশ্চিত করে অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট  আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলায় সাক্ষীদের মাধ্যমে আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে  সক্ষম হয়েছে। ফলে বিচারক আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা দিয়েছেন। আসামি পক্ষের আইনজীবী আরিফুল ইসলাম শান্তি জানিয়েছেন, আসামিরা ন্যায় বিচারক থেকে বঞ্চিত হয়েছে। উচ্চ আদালতে আপিলের মাধ্যমে আমরা ন্যায় বিচার পাবো বলে আশাবাদী।  মামলার অভিযোগে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৯ আগস্ট রাতে শার্শার শিকারপুর বিজিবি ক্যাম্পের সদস্য হাবিলদার মুকুল হোসেন ও তার দল নিয়মিত টহলের সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নারিকেল বাড়িয়া গ্রামের সীমান্ত পিলারের পাশে অবস্থান নেন। রাত ১০ টার দিকে কয়েকজন লোক নারিকেলবাড়িয়া মাঠের মধ্য দিয়ে ভারতের দিকে যাওয়ার সময় তাদের চ্যালেঞ্জ করে বিজিবি। এ সময় মহিউদ্দিন নামে একজনকে আটক ও দুইজন ব্যাগ ফেলে পালিয়ে যায়। মহিউদ্দিনের কাছে থাকা ব্যাগ থেকে ২২৪ পিস সোনার বার ও ফেলে যাওয়া দুইটি ব্যাগ থেকে ৪০০ পিস সোনার বার উদ্ধার করা হয়। যার ওজন ৭২ কেজি সাড়ে ৪শ’ গ্রাম। দাম ৩১ কোটি ৮৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা। পরদিন শিকারপুর বিওপি বিজিবির হাবিলদার মুকুল হোসেন বাদী হয়ে তিনজনের নামউল্লেখসহ অপরিচিত ব্যক্তিদের আসামি করে চোরাচালান দমন আইনে শার্শা থানায় মামলা করেন।

মামলাটি প্রথমে থানা পুলিশ পরে সিআইডি পুলিশ তদন্তের দায়িত্ব পায়। এ মামলার তদন্তকালে আটক আসামিদের দেয়া তথ্য ও সাক্ষীদের বক্তব্যে সোনা চোরাচালানের সাথে জড়িত থাকায় ওই ৯ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ঢাকা সিআইডি পুলিশের এসআই কোরবান আলী সরকার। দীর্ঘ সাক্ষী গ্রহণ শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আসামি মহিউদ্দিন তরফদার শান্তি, জাহিদুল ইসলাম ও মুজিবুর রহমানকে ফাঁসির আদেশ ও ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। আসামি মাসুদ রানা ও শফিকুল মন্ডলকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাস করে কারাদÐ এবং আসামি সফি, ইমরান হোসেন, রুবেল হোসেন, কবির হোসেনকে ১৪ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাস করে কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক।

এই বিভাগের আরোও খবর

Logo