সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘মার্চ ফর গাজা’: ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতিতে জনস্রোত

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ১৩ এপ্রিল , ২০২৫ ১২:৫৯ আপডেট: ১৩ এপ্রিল , ২০২৫ ১২:৫৯ পিএম
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘মার্চ ফর গাজা’: ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতিতে জনস্রোত
ফিলিস্তিনের জনগণের ওপর চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে এবং নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়াতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি

ফিলিস্তিনের জনগণের ওপর চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে এবং নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়াতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি। শনিবার (১২ এপ্রিল) রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান জনস্রোতে মুখর হয়ে ওঠে। নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে এই কর্মসূচি এক গণজাগরণে রূপ নেয়।
যদিও কেন্দ্রীয় সমাবেশের সময় নির্ধারিত ছিল বিকেল ৩টা, তবে সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত এবং আশপাশের জেলা থেকে পায়ে হেঁটে ও যানবাহনে করে মানুষজন উদ্যানের উদ্দেশে রওনা দেন। কাওরান বাজার মোড়, বাংলামোটর, কাকরাইলসহ ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে সকাল থেকেই শুরু হয় মিছিলের ঢল।
দুপুর ১২টার পর থেকে ঢাকার বাইরে থেকে বাস, মাইক্রোবাস, মিনি ট্রাক ও মোটরসাইকেলে করে হাজার হাজার মানুষ রাজধানীতে এসে জড়ো হতে থাকেন। এরপর তাঁরা দলবদ্ধভাবে পায়ে হেঁটে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করেন। চারদিক থেকে আগত এই মানুষের ঢল যেন এক নিরব but দৃঢ় প্রতিবাদের আওয়াজ।
অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া অনেকের হাতে ছিল বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা এবং ফিলিস্তিনের পতাকা। অনেকেই মাথায় কালেমা খচিত ফিতা বেঁধে, স্লোগানে স্লোগানে এগিয়ে যান। তাদের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়— “ইসরায়েল নিপাত যাক”, “গাজা বাঁচাও, মানবতা বাঁচাও”। গোটা নগরীতে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে মানবতার এই জাগরণ।
সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিল নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ— মাদ্রাসা শিক্ষার্থী, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের কর্মী, সাধারণ নাগরিক এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সদস্যরা।
মিরপুর থেকে আসা হাফেজ মোহাম্মদ তায়েব বলেন, “ফিলিস্তিনে মুসলমানদের ওপর যে নির্মম গণহত্যা চলছে, তা মেনে নেওয়া যায় না। মুসলমান হিসেবে আমাদের দায়িত্ব দাঁড়ানো—এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে।সাভার থেকে আসা ব্যবসায়ী মো. মিজানুল ইসলাম জানান, “আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত না। কিন্তু একজন মানুষ হিসেবে ফিলিস্তিনের শিশুদের কান্না আমাকে স্পর্শ করেছে। তাই এসেছি, যেন মানবতার পক্ষে দাঁড়াতে পারি।”
একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সিয়াম ইসলাম বলেন, “ইসরায়েলের বর্বরতার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সমাজকে আরও জোরালোভাবে আওয়াজ তুলতে হবে। সেই আওয়াজের অংশ হিসেবে আমরা আজ এখানে একত্রিত হয়েছি। এত বিশাল জনসমাগম সত্ত্বেও রাজধানীর রাস্তায় যান চলাচল ছিল স্বাভাবিক। কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলা বা অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। নিরাপত্তার স্বার্থে কাকরাইল মোড়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং আশপাশের এলাকায় পুলিশ, র‍্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের টহল ও তল্লাশি জোরদার করা হয়।
বিশেষ নজর ছিল কালো পতাকা, টুপি ও ব্যানারধারীদের ওপর—যাতে কোনো নিষিদ্ধ সংগঠনের প্রচার না ঘটে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অনেককে কালেমা লেখা কালো কাপড় ও পতাকা জব্দ করতেও দেখা গেছে।
কাকরাইল মোড়ে দায়িত্বে থাকা সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (পিএমও) মো. আমজাদ হোসেন বলেন, “পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমরা সতর্ক ছিলাম যাতে কেউ নিষিদ্ধ সংগঠনের ব্যানার বা প্রতীক নিয়ে প্রবেশ করতে না পারে। অংশগ্রহণকারীরাও আমাদের সহায়তা করেছেন।”
‘মার্চ ফর গাজা’ ছিল এক ব্যতিক্রমী মানবিক উদ্যোগ, যেখানে দল-মত নির্বিশেষে লাখো মানুষ একত্রিত হয়ে জানিয়ে দিয়েছেন—বাংলাদেশ কখনোই মানবতা ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াতে পিছপা হয় না।

এই বিভাগের আরোও খবর

Logo