উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে গত ১২ দিন ধরে দেখা নেই সূর্যের। এতে জেলার অধিকাংশ আলুক্ষেতে দেখা দিয়েছে মড়ক রোখ। শিগগিরই সূর্যের দেখা না মিললে এ রোগ ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পাড়ার শঙ্কায় রয়েছেন চাষিরা।
কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলার ২৬ হাজার ১৬৮ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত চাষ হয়েছে ২৭ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে।
জানা গেছে, আলুর লেটব্লাইট বা মড়ক রোগ বিশ্বজুড়ে অন্যতম একটি ক্ষতিকারক রোগ। এক ধরনের ছত্রাকের আক্রমণে এই রোগ হয়ে থাকে। বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা বেশি থাকলে ২-৩ দিনের মধ্যে জমির অধিকাংশ ফসল আক্রান্ত হয়ে পড়ে মড়ক রোগে।
বাংলাদেশের আলু উৎপাদনের প্রধান অন্তরায় এই রোগ। প্রতিবছর মড়ক রোগের কারণে আলুর ফলন শতকরা ৩০ ভাগ হ্রাস পায়। প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা না গ্রহণ করলে এই রোগে ফলন সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট হতে পারে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, টানা শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশার কারণে গত ১২ দিন ধরে জেলায় সূর্যের দেখা নেই বললেই চলে। যে কারণে অধিকাংশ আলুক্ষেতে এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে।
বুধবার (১৭ জানুয়ারি) সরেজমিনে দেখা যায়, মড়ক রোগের কারণে পাতায় কালো ফোসকা পড়ে আলু গাছ মরে যাচ্ছে। বেশিরভাগ আলুক্ষেতে মড়ক রোগের লক্ষণ দেখা দিয়েছে।
চাষিরা জানান, টানা শৈত্যপ্রবাহে সূর্যের দেখা না পাওয়ায় মোড়ক রোগ দেখা দিয়েছে। এই রোগ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়লে উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
রবিউল ইসলাম নামের এক আলু চাষি বলেন, গত বছর বিঘাপ্রতি জমিতে আলু আবাদে ৩০ হাজার টাকা খরচ হলেও এবার সার ও কীটনাশকের দাম বেশি হওয়ায় অন্তত ১০ হাজার টাকা খরচ বেড়েছে। এর মধ্যে, মড়ক রোগে চাষিদের দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে।
মালেক নামে আরেক আলু চাষি বলেন, চলতি বছর আলুর আবাদ মোটামুটি ভালো। ফসল রক্ষায় সব ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কোনো ভাইরাস আক্রমণ না করলে ভালো ফলনের প্রত্যাশা করছি।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঠাণ্ডা আবহাওয়া আলু চাষের জন্য উপকারী। কিন্তু ঘন কুয়াশা ও টানা শৈত্যপ্রবাহ এই ফসলের জন্য ক্ষতিকর।
তিনি আরও বলেন, ঘন কুয়াশা থাকলে আলুক্ষেত ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হয়। এ ব্যাপারে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আশা করছি, এতে ফলনে কোনো প্রভাব পড়বে না।