কুমিল্লার মুরাদনগরে নারী ধর্ষণ, লালমনিরহাটে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে নরসুন্দর পিতা-পুত্রকে আটক এবং ঢাকার খিলক্ষেতে দুর্গাপ্রতিমা অসম্মানের প্রতিবাদে যশোর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
সোমবার সকালে প্রেসক্লাব যশোরের সামনে প্রায় ঘন্টাব্যপি এই মানববন্ধন চলে। মানববন্ধনে বিভিন্ন এলাকার দুই শতাধিক সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অংশ নেন।
যশোর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দিপংকর দাস রতনের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন পূজা উদযাপন পরিষদের সহ সভাপতি দুলাল সমাদ্দার, সাধারণ সম্পাদক তপন কুমার ঘোষ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রতন আচার্য, সদর উপজেলার সভাপতি রবিন কুমার পাল, বাঘারপাড়া উপজেলার সদস্য সচিব প্রণয় সরকার, যশোর পৌরসভার সাধারণ সম্পাদক উৎপল সরকার, শার্শা উপজেলার সভাপতি নীল কান্ত সিংহ, ঝিকরগাছার সভাপতি দুলাল অধিকারী, মহিলা পরিষদের নেত্রী সুলতানা রহমান জলি প্রমুখ।
মানববন্ধনে জেলা পূজা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদ তপন কুমার ঘোষ বলেন, কুমিল্লার মুরাদনগরে যারা বোনকে ধর্ষণ করে বিবস্ত্র অবস্থায় ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে দিয়েছে, তাদের সুষ্ঠু তদন্ত করে ফাঁসি দাবি করছি। এছাড়াও সারাদেশে খুন, নারী নির্যাতন, মাদক সন্ত্রাস, দখলবাজি ও চাঁদাবাজির প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তপন কুমার ঘোষ।
সদর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রবিন কুমার পাল বলেন, ঢাকা খিলক্ষেতে সরকারের বুলডোজার দিয়ে মন্দির ও প্রতিমা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এমন ঘটনা বাংলাদেশে আগে কখনো ঘটেনি। আমাদের নিরাপত্তা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা আছে কি? আমরা কার কাছে বিচার চাইব, সরকারের কাছে বিচার চেয়ে কোনো লাভ নাই। তিনি কুমিল্লায় বোনকে বিবস্ত্র করার ঘটনা এবং লালমনিরহাটে ১০ টাকার জন্য নরসুন্দর পিতা-পুত্রকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতারের ঘটনারও বিচার দাবি করেন।
যশোর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সহ সভাপতি দুলাল সমাদ্দার বলেন, গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর শান্তি ফিরে আসার আশা থাকলেও বর্তমানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর অন্যায়, অত্যাচার ও মন্দির ভাঙার ঘটনা বাড়ছে।এই দেশ থেকে আমাদেরকে বিতাড়িত করার চক্রান্ত চলছে। আমরা এই দেশে জন্মেছি এই দেশেই মাথা উঁচু করে বাঁচতে চাই। যশোরের অভয়নগরের মসিহাটি গ্রামে হত্যাকাণ্ডের পর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনারও উল্লেখ করে তিনি সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
বাঘারপাড়া উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব প্রণয় সরকার বলেন, কুমিল্লা মুরাদনগরে ও ঢাকা খিলক্ষেতের ঘটনার অবিলম্বে আইনি প্রতিকার ও সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে। ভবিষ্যতে বিচার না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
যশোর পৌরসভা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক উৎপল সরকার বলেন, যদি এই ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার না হয়, তাহলে সনাতনী সমাজ তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলবে।
মহিলা পরিষদের নেত্রী সুলতানা রহমান জলি বলেন, কুমিল্লার মুরাদনগরে বোনকে বিবস্ত্র করে ধর্ষণের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করছি। এর আগে আমরা এখানে মা-বোনের ধর্ষণের ঘটনায় মানববন্ধন করেছি, কিন্তু কোনো হত্যাকাণ্ডের বিচার পাইনি। তিনি সকল ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। যেন ভবিষ্যতে এমন ঘটনা ঘটানোর সাহস কেউ না পায়।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দিপংকর দাস রতন বলেন, বাংলাদেশে যত বড় সাম্প্রদায়িক শক্তি আসুক না কেন, হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সম্পর্ক নষ্ট করা যাবে না। ধর্মীয় মোড়কে একটি গোষ্ঠী পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা গঠন করার পায়তারা করছে, কিন্তু বাংলাদেশে এটা সম্ভব না।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, কে হিন্দু আর কে মুসলমান, তা দেখার বিষয় নয়, বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হবে। বাঙালি জাতি অসাম্প্রদায়িক এবং এই জাতিকে কোনো সাম্প্রদায়িক হিসেবে চিহ্নিত করা যাবে না। বাঙালি যতদিন আছে, ততদিন বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক থাকবে। খিলক্ষেতে মন্দির ভাঙার আগে সরকারের উচিত ছিল নোটিশ প্রদান করা। কুমিল্লার মুরাদনগরের ঘটনায় স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে ধর্ষকের বিচারের জোর দাবি জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে পূজা উদযাপন পরিষদ সার্বক্ষণিক রাজপথে থাকবে।