সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে মেঘনা নদীতে নির্বিচারে চলছে জাটকা ইলিশ নিধন। একশ্রেণির অসাধু জেলে চক্র নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবৈধ জাল দিয়ে জাটকা ইলিশ শিকার করছে। এসব জাটকা ইলিশ দেদার বিক্রি হচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে।
কোস্ট গার্ডের অভিযানে জাল ও মাছ জব্দ করা হলেও বন্ধ হচ্ছে না জাটকা নিধন। এতে জাটকা সংরক্ষণে সরকারের কর্মসূচি ভেস্তে যেতে বসেছে।রায়পুর উপজেলার মেঘনা নদীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়,জেলেরা নির্বিঘ্নে মাছ শিকার করছে। এসব মাছ প্রকাশ্যে বিক্রি করা হচ্ছে হাটবাজার ও আড়তে। সংরক্ষণ করে পাঠানো হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্নস্থানে। চলতি মাসে কোস্ট গার্ড ও মৎস বিভাগ তিন দফা অভিযান চালিয়ে জাটকা আটক, জেলেদের জেল জরিমানা, জাল পোড়ায়। মেঘনা নদীতে অভিযান চালিয়ে কয়েক টন জাটকা জব্দ করেছে পরে জব্দকৃত জাটকা স্থানীয় এতিমখানায় বিতরণ হয়। এছাড়াও চলতি মাসে মৎস্য বিভাগ ও কোস্ট গার্ড নদীতে পৃথক অভিযান চালিয়ে আরও কয়েক মণ জাটকা জব্দ করা হয়।এলাকার জেলে মো. নজরুল ও পলাশ মিয়া তিন দিন ধরে মেঘনা নদীর কাটাখালী এলাকায় কারেন্ট জাল দিয়ে জাটকা ইলিশ শিকার করছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রায়পুর পৌর শহর সংলগ্ন গ্রামীন এলাকায় জাকটাগুলো বিক্রির জন্য আনা হয়। এ সময় তারা বলেন, নদীতে এখন জাটকা ইলিশ ধরা পড়ে বেশি। প্রশাসনের লোকজন ধরলে তদবির করে ছাড়িয়ে নেওয়া হয়। না হলে চালান করে দেয়।চরবংশী এলাকার জেলে হোসেন গাজী বলেন, আড়ত থেকে দাদনে নেওয়া টাকা পরিশোধ করতে হবে। তাই বাধ্য হয়ে বেশি মাছ পাওয়ার আশায় মেঘনা নদীর বিভিন্ন জায়গা জাল ফেলছি। তবে এ বছর জাটকা শিকারের মাত্রা অনেক বেড়ে গেছে। রাতের আঁধারে নদীতে প্রতিদিন আমার মতো অনেক জেলেই জাটকা ধরছে। এসব মাছ আড়ত থেকে রাতে ট্রলার, পিকআপ ভ্যান, বাসসহ বিভিন্ন পরিবহনে ঢাকার মোকামে যাচ্ছে।এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এমদাদুল হক বলেন, মেঘনার অভয়াশ্রমে মাছ ধরা বন্ধ রাখার জন্য জেলেপল্লীসহ মাছঘাট এবং নদীর তীরবর্তী এলাকায় বিভিন্ন হাটবাজারে সচেতনতামূলক সভা, লিফলেট, পোস্টার, ব্যানার ও মাইকিং করার মাধ্যমে এলাকায় ব্যাপক প্রচার-প্রচারণাও চালানো হচে্ছ। ইলিশের প্রজনন মৌসুমকে নিরাপদ করতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
তারপরও কিছু অসাধু জেলে জাটকা-শিকারের চেষ্টা করছেন। জাটকা শিকারিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত থাকবে।জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছর মার্চ ও এপ্রিল দুই মাস উল্লিখিত অভয়াশ্রমে ইলিশসহ সব ধরণের মাছ আহরণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকে। এসময় ইলিশের অভয়াশ্রমসমূহে ইলিশসহ সব প্রকার মাছ ধরা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। মৎস্য সুরক্ষা ও আইন ১৯৫০ এর ধারা ৩ এর উপধারা-৫ আইন অমান্যকারীকে কমপক্ষে এক বছর থেকে সর্বোচ্চ দুই বছরের সশ্রম কারাদন্ড অথবা ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দন্ডেদন্ডিত হবেন।প্রসঙ্গত, ২০০৬ সাল থেকে ইলিশের অভয়াশ্রম ঘোষণা করে চাঁদপুরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের চর আলেক্সান্ডার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার নদীতে দুই মাস জাটকা রক্ষা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। এ জন্য মৎস্য ও পশু সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় স্থানীয় প্রশাসন ১ মার্চ থেকে মেঘনায় সব ধরনের জাল ফেলা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু এ বছর এর চিত্র ভিন্ন। যে যার মতো করেই নদীতে মাছ ধরছেন জেলেরা।