রাজাপুরে কৃষি প্রণোদনায় দুর্নীতির অভিযোগ, সরকারি বীজ-সার থেকে বঞ্চিত প্রান্তিক চাষিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ২৬ জুন , ২০২৫ ১৮:১৬ আপডেট: ২৬ জুন , ২০২৫ ১৮:১৬ পিএম
রাজাপুরে কৃষি প্রণোদনায় দুর্নীতির অভিযোগ, সরকারি বীজ-সার থেকে বঞ্চিত প্রান্তিক চাষিরা

ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির বরাদ্দ থাকলেও তা মাঠপর্যায়ে সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন প্রান্তিক কৃষকরা। সরকারি সহায়তা কাগজে থাকলেও অনেকেই তা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছে কৃষক সমাজ।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে রাজাপুরে ৪২০ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মধ্যে উফশী আমন ধানের বীজ ও সার, ১২০ জনকে গ্রীষ্মকালীন শাকসবজির বীজ, ১৮০ জনকে লেবুর চারা, ১৩০ জনকে আমের চারা এবং ৫০০ কৃষক ও ১২০টি প্রতিষ্ঠানে নারিকেল চারা বিতরণের জন্য প্রণোদনার বরাদ্দ দেওয়া হয়। এছাড়াও ৬৪টি কৃষক সংগঠন ও ১ হাজার ৭৫০ জন শিক্ষার্থীর জন্য ফলদ গাছের চারা বরাদ্দ ছিল।
উপজেলা কৃষি অফিসের এ ঘোষিত বরাদ্দ মাঠে কৃষকদের হাতে পৌঁছায়নি বলেই অভিযোগ। একাধিকবার অফিসে গিয়েও কোনো সহায়তা পাননি বলে দাবি করেছেন অনেক কৃষক।
প্রান্তিক কৃষক সাইদুর রহমান, কামাল হোসেন, সোহরাব হোসেন ও মোকসেদ আলী হাওলাদার বলেন, “প্রতি বছর শুনি সরকার প্রণোদনা দিচ্ছে। কিন্তু আমাদের ভাগ্যে কিছুই জোটে না। কৃষি অফিসে গেলেও বলে তালিকায় নেই কিংবা কোটার বাইরে।” তারা আরও জানান, ৫-৮ বিঘা জমিতে তারা আমন ধান ছাড়াও শাকসবজি, ডাল, ঢেঁড়স, তরমুজসহ নানা ফসল চাষ করেন। কিন্তু কৃষি অফিসের কোনো কর্মকর্তা তাদের পরিদর্শনে আসেন না বা পরামর্শও দেন না।
বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোসা. শাহিদা শারমিন আফরোজ কোনো ভিডিও বা মৌখিক বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তার এই নীরবতা ও এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা স্থানীয়দের মধ্যে আরও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। 
স্থানীয় কৃষকরা দাবি করেন, প্রকৃত কৃষকদের বাদ দিয়ে রাজনৈতিক পরিচয়ধারী ও প্রভাবশালীদের মধ্যে এসব প্রণোদনা বণ্টন করা হচ্ছে। অনেকে আবার কৃষক না হয়েও প্রণোদনার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করে সুবিধা নিচ্ছেন। আর যারা বাস্তবিক অর্থেই মাঠে কাজ করেন, তারা বীজ-সার না পেয়ে চাষাবাদে ক্ষতির মুখে পড়ছেন।
কৃষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন “সরকার যদি সত্যি আমাদের জন্য প্রণোদনা দেয়, তাহলে আমরা সেটা কোথায় পাচ্ছি না? এটা কি মধ্যপথে ভাগ হয়ে যাচ্ছে, না কি নেতা-কমিদের পকেটে ঢুকছে?”
স্থানীয় সচেতন মহল মনে করছেন, কৃষি প্রণোদনা সঠিকভাবে বিতরণে তালিকা তৈরি, উপকারভোগী যাচাই এবং যথাযথ মনিটরিং নিশ্চিত না হলে প্রকৃত কৃষকরা কখনোই উপকৃত হবেন না। এতে সরকারের উদ্দেশ্য ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি কৃষি খাতও ক্ষতির মুখে পড়বে।
প্রান্তিক কৃষকরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আমরা দিনের পর দিন মাঠে কাজ করি, কিন্তু আমাদের প্রাপ্যটুকু পাই না। এই দুর্নীতির সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”

এই বিভাগের আরোও খবর

Logo