রাজশাহী জেলার তানোর পৌরসভার সিন্দুকা গাইনপাড়া গ্রামের মো: রজব আলী — একজন সাদাসিধে মনের মানুষ, জীবনের সব জটিলতা থেকে অনেকটা দূরে থাকা এক অসাধারণ চরিত্র। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন হলেও তার হৃদয়ে আছে অসীম ভালোবাসা আর সুরের মাধুর্য। ছোট থেকে গানই তার নেশা, আনন্দ আর জীবনের মূল শক্তি। রজব আলীর জীবনে নেই আড়ম্বর কিংবা বড় কোনো চাহিদা। তার একমাত্র আনন্দ — মানুষকে গান শুনিয়ে খুশি করা। কেউ যদি তাকে বসিয়ে গান শুনতে বলে, তিনি বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে মনের আনন্দে গান শুরু করে দেন। তার কণ্ঠে ভেসে আসে লোকগান, পুরনো দিনের গান কিংবা তাৎক্ষণিকভাবে বানানো সুর, যা শুনে আশেপাশের মানুষও আনন্দে ভরে ওঠে।
রজব আলীর সংসারে স্ত্রী, দুই মেয়ে এবং এক ছেলে রয়েছে। পরিবারের প্রতি ভালোবাসা থাকলেও, তার ব্যক্তিগত চাহিদা একেবারেই নগণ্য। এক কাপ চা অথবা একটি বিড়ি পেলেই তিনি খুব খুশি হয়ে যান। প্রায়ই তাকে গ্রামের রাস্তা, মাঠ কিংবা হাট-বাজারে একাকী ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় — মুখে কোনো গান গুনগুন করতে করতে। মনের ভুলে হারিয়ে যাওয়া
তবে এই সহজ-সরল জীবনের মাঝেও একদিন ঘটে যায় এক অদ্ভুত ঘটনা। মনের ভুলে এবং অজান্তেই রজব আলী একদিন এলাকা ছেড়ে চলে যান। পরিবারের সদস্যরা অনেক খোঁজাখুঁজি করেও প্রথমে তার কোনো সন্ধান পাননি। কয়েক মাস পরে, অবশেষে খবর আসে যে তিনি নাচোল ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পরিবার দ্রুত সেখানে গিয়ে তাকে নিয়ে আসে বাড়িতে। এই ঘটনার পরও রজব আলীর জীবনযাত্রায় তেমন পরিবর্তন আসেনি। এখনও তিনি গ্রামের মানুষদের মাঝে গান শুনিয়ে আনন্দ বিলিয়ে দেন। কখনও হাটে, কখনও পাড়ায় কিংবা কখনও একেবারে নির্জন মাঠে — তার সুর ভেসে যায় বাতাসে।
গ্রামের অনেকেই বলেন, “রজব আলী ভাই আমাদের গ্রামের প্রাণ। তিনি না থাকলে সবার মন খারাপ হয়ে যায়। তার গান আর হাসিমুখই আমাদের আনন্দ দেয়।”
রজব আলীর গল্প প্রমাণ করে — জীবন সুখী হতে বড় কোনো শর্ত লাগে না। কখনও কখনও এক টুকরো হাসি, এক কাপ চা, আর ভালোবাসা-ভরা কিছু গানই যথেষ্ট মানুষের মন জয় করার জন্য।