রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরাল পাগলের কবর নিয়ে সহিংসতা

মোঃমজিবুর রহমান খান জুয়েল প্রকাশিত: ৬ সেপ্টেম্বর , ২০২৫ ১৫:৩৭ আপডেট: ৬ সেপ্টেম্বর , ২০২৫ ১৫:৩৭ পিএম
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরাল পাগলের কবর নিয়ে সহিংসতা
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরাল পাগলের কবর নিয়ে সহিংসতা, লাশ মহাসড়কে পুড়িয়ে দিল তৌহিদী জনতা।

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নিজেকে ইমাম মেহেদী দাবিকারী নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলের কবর নিয়ে দীর্ঘদিনের উত্তেজনা শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) ভয়াবহ সহিংসতায় রূপ নেয়। ক্ষুব্ধ তৌহিদী জনতা প্রথমে তার বাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে, পরে কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে ঢাকা–খুলনা মহাসড়কের ওপর পুড়িয়ে দেয়। এসময় পুলিশ ও প্রশাসনের গাড়ি ভাঙচুরসহ শতাধিক আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী মাঠে নামে।
শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে শহীদ মহিউদ্দিন আনসার ক্লাবে তৌহিদী জনতা জমায়েত হয়ে মিছিল নিয়ে নুরাল পাগলের বাড়ির দিকে অগ্রসর হয়। সেখানে গিয়ে তারা “ভন্ড নুরাল পাগল” স্লোগান দিয়ে বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এরপর কবরের ১২ ফুট উঁচু স্থাপনা থেকে লাশ উত্তোলন করে মহাসড়কের ওপর আগুন ধরিয়ে দেয়।
এসময় বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশের ওপর হামলা চালায় এবং পুলিশের দুইটি গাড়ি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের গাড়ি ভাঙচুর করে। ঘটনায় কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও ইউএনওর ড্রাইভার আহত হন। সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনলেও পরে জনতা আবারও বাড়িতে ভাঙচুর চালায়।
গত ২৩ আগস্ট মৃত্যু হয় নুরাল পাগলের। মৃত্যুর পর তার পরিবার ও ভক্তরা তাকে দরবার শরীফ প্রাঙ্গণে কাবা শরীফের আদলে তৈরি করা ১২ ফুট উঁচু বেদীর ওপর দাফন করে। এতে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে স্থানীয় তৌহিদী জনতার মধ্যে। তাদের অভিযোগ, এটি ইসলামী শরীয়তের পরিপন্থী এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত সৃষ্টি করেছে।
এর আগে গত মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) গোয়ালন্দ মডেল মসজিদে সংবাদ সম্মেলন করে উপজেলা ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি। সেখানে সংগঠনের সভাপতি মো. জালাল উদ্দিন প্রামানিক লিখিত বক্তব্যে বলেন, নুরাল আশির দশক থেকে ভন্ড ইমাম মেহেদী দাবি করে আসছিলেন। তিনি কালেমা ও আযানের শব্দ বিকৃত করেছিলেন, কুরআন অবমাননা করেছিলেন। তার মৃত্যুর পরও পরিবার তাকে শরীয়তবিরোধী কায়দায় দাফন করে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অনুভূতিতে আঘাত করেছে।
তৌহিদী জনতা ও স্থানীয় ইসলামি সংগঠনগুলোর দাবিতে প্রশাসন আলোচনায় বসে কবর নিচে নামানোর বিষয়ে সমঝোতা করার চেষ্টা করেছিল। তবে নুরালের পরিবার বিষয়টি মেনে নেয়নি। এ কারণে উত্তেজনা দিন দিন বাড়তে থাকে।
গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কবর সমান না করার কারণে শুক্রবারের পরই তৌহিদী জনতা বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করে। এরই ধারাবাহিকতায় সহিংস ঘটনা ঘটে।
উল্লেখ্য, আশির দশকের শেষ দিকে নিজেকে ইমাম মেহেদী দাবি করে আলোচনায় আসেন নুরাল পাগল। তীব্র আন্দোলনের মুখে ১৯৯৩ সালের ২৩ মার্চ তিনি মুচলেকা দিয়ে এলাকা ছাড়লেও পরে ফিরে এসে আবার কার্যক্রম শুরু করেন। মৃত্যুর পর তার বিশেষ কবর নিয়ে ফের তীব্র জনরোষ সৃষ্টি হয়।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাহিদুর রহমান বলেন, “এ এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। জনতা আমার গাড়ী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও থানার ওসির গাড়ি ভাঙচুর করেছে। পরে নুরাল পাগলের আস্তানায় হামলা চালিয়ে মরদেহ উত্তোলন ও পুড়িয়ে দিয়েছে। আহতদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি এখন প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
ঘটনার পর পুরো এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। সেনাবাহিনী ও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসন।

এই বিভাগের আরোও খবর

Logo