যশোর জেলা আইনশঙ্খলা কমিটির সভায় কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা, মাদক ব্যবসা, ছিনতাই, মশার উপদ্রব বৃদ্ধি ও ফুটপাত দখল ও বেওয়ারিশ কুকুর নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
যশোর জেলা আইনশঙ্খলা কমিটির সভায় কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা, মাদক ব্যবসা, ছিনতাই, মশার উপদ্রব বৃদ্ধি ও ফুটপাত দখল ও বেওয়ারিশ কুকুর নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নিষিদ্ধ পলিথিন বিক্রির বিরুদ্ধে অভিযান জরুরি বলে সভায় মতামত দেয়া হয়। বক্তারা বলেছেন সন্ধ্যার পর থেকে মোটরসাইকেলে করে কিশোর গ্যাং ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ করছে। বিভিন্ন এলাকায় মাদকের কারনে এ তৎপরতা বেড়েছে। ইদানিং মশার উপদ্রব বেড়েছে। সেই সাথে শহরের অনেক জায়গা বেদখল হয়ে গেছে। আগামী রমজান মাসে ইফতারীর সময় যানজট সৃষ্টি হতে পারে। এসব বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার প্রস্তাব রাখা হয়। সেই সাথে ফেসবুকে বিভিন্ন পোস্ট করা নিয়েও আলোচনা হয়। রোববার সকালে কালেক্টরেট সভাকক্ষ অমিত্রাক্ষরে এ সভার আয়োজন করা হয়। সভায় সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম বলেন, রমজান মাসে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সংকট সৃষ্টি করে দাম বৃদ্ধি করা যাবে না। দ্রব্যমূল্য সহনশীল রাখার বিষয়ে চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাট্রিজ সভাপতির ভূমিকা রাখতে হবে। কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর এসব গ্যাংয়ের সদস্যদের মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে। মাদকের বিরুদ্ধে সকলকে সচেতন হতে হবে। কোনো প্রতিষ্ঠানের দেয়ালের ধারে দোকান নির্মাণ করা যাবে না। মানব পাচারের মামলা দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। পলিথিনের বিরুদ্ধেও অভিযান পরিচালনা হবে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম ও অপস) আবুল বাশার বলেন, যোগাযোগ মাধ্যমে যারা উস্কানীমূলক পোস্ট করছে তাদের বিষয়ে পুলিশ কাজ করছে। এটা করা হচ্ছে যশোরের বাইরে থেকে। এ বিষয়ে পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করলে আইনের আওতায় আনা হবে। কিশোর গ্যাংয়ের বিভিন্ন অপরাধ দমনে বিকেল পাঁচটা থেকে রাত পর্যন্ত ১২টি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ফুট পেট্রোল চালু করা হয়েছে। দোকানের সামনে পার্কিং না থাকায় ও ভ্রাম্যমাণ দোকান পরিচালনার কারনে শহরে যানজট হচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক ও পৌরপ্রশাসক রফিকুল হাসান বলেন, মাসব্যাপী মশক নিধন অভিযান শুরু করা হবে। শহরের অবৈধ পরিবহন রোধে ও অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে সপ্তাহে দুইদিন অভিযান পরিচালনা করা হয়। হাইকোর্টের রিটের কারনে কুকুর মারা যাচ্ছে না। কুকুর মারলে পরিবেশবাদিরা আন্দোলন করে। এ বিষয়ে পৌর সভা অসহায়। পৌরসভার জলাবদ্ধতা নিরসনে সকল ড্রেন পরিস্কার করা হচ্ছে। মাটি ড্রেনের পাশে রাখা হচ্ছে। এত পরিমান মাটি বের হচ্ছে সেটা পরিস্কার করার যানবাহন নেই। এজন্য পৌরবাসীকে একটু দুর্ভোগ সহ্য করতে হবে। পিপি অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, বিভিন্ন মামলায় জব্দ তথ্য না থাকায় আসামি জামিন পেয়ে যাচ্ছে। সন্ধ্যার পর থেকে রাত পর্যন্ত কিশোর গ্যাং ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ করছে। বিভিন্ন এলাকায় খুচরা মাদক ব্যবসায়ীদের তৎপরতা বেড়েছে। এদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া উচিত। চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাট্রিজের সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, পলিথিন নিষিদ্ধ হোক সবাই চাই। কারো দ্বিমত নেই। এর বিকল্প পাট ও কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করা উচিৎ। তবে ঢাকা থেকে পলিথিন আসার উৎস বন্ধ কররা জরুরী। এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের বলা হয়েছে। তাদের উৎসাহ করতে হবে। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আসলাম হোসেন জানান, জানুয়ারি মাসে মাদকের ৪২ মামলায় ৪১জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ৪জন পলাতক রয়েছে। আট উপজেলায় মাদকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কার্যক্রম অব্যাহত হয়েছে। প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন বলেন, যশোরের মানুষ শান্তিতে আছে। ফ্যাসিবাদ সরকারের কিছু নেতা ফেসবুকে অশ্লীল কথা বার্তা লিখে পোস্ট দিচ্ছে। এতে করে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। এসব উস্কানিমূলক পোস্ট দেয়া বন্ধ করে আইনের আওতায় আনতে হবে। লোক সমাজ পত্রিকার প্রকাশক শান্তনু ইসলাম সুমিত বলেন, আইনশৃঙ্খলা সভায় অপরাধের যে চিত্র তুলে ধরা হয়, তার চেয়ে বেশি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটে। অনেক মানুষ থানায় অভিযোগ করতে ভয় পায়। ফ্যাসিবাদ সরকারের সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন পোস্ট দিচ্ছে। এ বিষয়ে নজরদারি করতে হবে। জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন বলেন, বিভিন্ন দোকানে পলিথিন ব্যবহার করা হচ্ছে। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা হলে দোকানদাররা পলিথিন সরিয়ে ফেলছে। পুলিশি তৎপরতা কম থাকায় বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাং ও মাদকের অপতৎপরতা বেড়েছে। অভিভাবকরা সন্তান নিয়ে আতঙ্কে আছে। এ সময় বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন সভা পরিচালনা করেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কমলেশ মজুমদার।