রাজবাড়ীতে মোটর সাইকেলের সাথে ভ্যানের বডি লাগিয়ে এক আজব গাড়ী(ভ্যান) বানিয়ে চমক দেখিয়েছেন মন্টু মিয়া নামের এক ব্যক্তি
রাজবাড়ীতে মোটর সাইকেলের সাথে ভ্যানের বডি লাগিয়ে এক আজব গাড়ী(ভ্যান) বানিয়ে চমক দেখিয়েছেন মন্টু মিয়া নামের এক ব্যক্তি।
গত পাঁচ বছর ধরে এমন পরিকল্পনা তার। মোটর সাইকেলের শখ, জীবিকা নির্বাহ, ব্যাটারী চালিত ভ্যানের খরচ কমাতে তিনি এই কাজ করেছেন। তিনি এই গাড়িটির নাম দিয়েছেন মন্টু মোটর ভ্যান গাড়ী।
মন্টু মিয়ার বাড়ি রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের ধুঞ্চি গ্রামে। মন্টু মিয়া পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। বিভিন্ন জিনিস বানানোর স্বপ্ন ছিল ছোট বেলা থেকে। কিন্তু অর্থ কষ্টে থমকে যায় তার সকল ইচ্ছা। তবে পাঁচ বছরের চিন্তা শেষে বানিয়েছেন ব্যতিক্রমী এই গাড়ী।
জানাগেছে, বিগত ৫ বছর ধরে স্বপ্ন দেখেন মোটর সাইকেলের সাথে ভ্যানের বডি লাগিয়ে জিনিসপত্র বহন করবেন। কিন্তু অর্থকষ্টে থেমে যায় মন্টুর মিয়ার স্বপ্ন। কিন্তু হাল ছাড়েনি মন্টু। একটি সাইকেল মেকারের দোকানে বলে রাখেন কম দামের মোটর সাইকেল কেনার কথা। এরপর কিস্তি উঠিয়ে ১৬ হাজার টাকা দিয়ে লটারিতে পাওয়া ৮০সিসির একটি মোটর সাইকেল ক্রয় করেন মন্টু। নিজের বুদ্ধি আর পরিকল্পনা কাজে লাগিয়ে তৈরি করেন মোটরসাইকেলের সাথে ভ্যানগাড়ী। খচর ৩০ হাজার টাকা। দিব্যি রাস্তা দিয়ে চলছে তার এই গাড়ী। এই গাড়ী দেখলেই ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন উৎসুক জনতা।
স্থানীয় কয়েকজন এই গাড়ী দেখতে এসে বলেন, নদীতে গোসল করতে যাওয়ার পথে এই গাড়ীটি দেখে দাঁড়ালাম। রাজবাড়ীতে এমন ভ্যান এই প্রথম দেখলাম। মোটর সাইকেলের পিছনের চাক্কা খুলে আর ভ্যানের সামনের চাক্কা খুলে ফিটিং করে গাড়িটি বানানো। মন্টু শেখের মাথায় অনেক বুদ্ধি। আজব এক জিনিস সৃষ্টি করেছেন মন্টু মিয়া।
মন্টু শেখের মা ময়না বলেন, আমার ছেলে কাঠ মিস্ত্রির কাজ করে। তার পাশাপাশি রিক্সা, ভ্যান চালায়। আর যখন কাজ থাকে না তখন সে যে কি করে বোঝা কষ্ট কর। জানতে চাইলে বলে মা আমিই বুঝিনা তোমাদের কি বলবো। পুরাতন রিক্সা কিনে এনে সব খুলে আবার অন্যরকম করে রিক্সা বানায়। এই ভ্যান আর মোটর সাইকেল কিনে সেটা খুলে এমন গাড়ি তৈরি করেছে। আরো কতকিছু বানায় সে।
মন্টু শেখের স্ত্রী জুলেখা বলেন, আমরা গবীব মানুষ। দিন এনে দিন খেতে হয়। আমার স্বামী আজাইরা কাজ করে। তবে এবার যা তৈরি করেছে তা অবাক করার বিষয়। মোটরসাইকেল ও ভ্যান কেটে একটা গাড়ী তৈরি করেছে। গাড়ীটি দেখতে প্রতিদিন অনেক লোক আসে। দেখা যায় সে একটা রিক্সা কিনে সেটা ভেঙে আবার অন্য রকম করে সেট করে। টিভি খুলে কি কাজ করে যা দিয়ে ডিস ছাড়া টিভি দেখতে পাচ্ছি। অনেক সময় ভালো জিনিস গুলো নষ্ট করে ফেলে। কিস্তি তুলে এগুলো কিনে। ভালো মোটরসাইকেল আর ভ্যান কেটে এই গাড়ী বানায়ছে।
মন্টু মিয়া বলেন, আমি কাঠ মিস্ত্রি। এছাড়া যখন সময় পাই তখন ভ্যান, রিক্সা চালাই। ভ্যানের ব্যাটারী নষ্ট হয়ে যায়। মাঝে মাঝে চার্জ দিলে চার্জ হয় না, অনেক সময় বিদ্যুৎ থাকে না, তখন বসে থাকতে হয়। আমার খুব শখ ছিল মোটরসাইকেল চালানো। টাকার অভাব কিনতে পারি নাই। একজনকে বলেছিলাম কম দামে কেউ মোটর সাইকেল বিক্রি করলে জানাতে। একজন লটারিতে পাওয়া ৮০সিসি মোটর সাইকেল বিক্রি করবে শুনে কিস্তি তুলে সেটা ১৬ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছি। তবে সংসারও রয়েছে ইনকামও করতে হবে। ৫বছর ধরে পরিকল্পনা করছি অন্য রকম একটা গাড়ি তৈরি করবো। আমি যখন ঘুমাতে যাই তখনও চিন্তা করি গাড়িটি কিভাবে তৈরি করবো। মোটর সাইকেলের পিছনের চাক্কা খুলে আর আমার আগের ভ্যান গাড়ীর সামনের চাক্কা খুলি। এরপর একটি ফ্রেম তৈরি করি ওয়ার্কশপ থেকে। তারপর তৈরি করি এই গাড়ীটি।
তিনি আরও বলেন, এখন আমি ডেকোরেটরের দোকানে কাজ করি। বাঁশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন মালামাল টানি। ১লিটার তেল লাগে না দৈনিক। আগে অনেক অসুবিধায় পড়তে হতো। ভ্যানে চার্জ থাকতো না, ব্যাটারী দূর্বল হয়ে যেতো। এখন কোন চিন্তাই করতে হয় না। অনেকে এই গাড়িটি দেখে বানিয়ে দিতে বলে। তবে অনেক শখের আর কষ্টের অর্থ দিয়ে তৈরি করা গাড়ি নিয়ে অনেকটাই বিপাকে তিনি। পুলিশের হয়রানীর চিন্তা রয়েছে তার মাথায়।
মিজানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান(ভারপ্রাপ্ত) প্লাবন আলী বলেন, মন্টু মিয়ার অনেক মেধা। সে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কিছু তৈরি করেছে। এবার মোটর সাইকেলের পিছনের চাক্কা খুলে আর ভ্যানের সামনের চাক্কা খুলে একটি গাড়ী তৈরি করেছে। সে একজন কাঠ মিস্ত্রি। মিস্ত্রি কাজের পাশাপাশি সে ভ্যান-রিক্সা চালায়। তবে এমন গাড়ী আমিও প্রথম দেখলাম।
ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক মোঃ শফিউল্লাহ বলেন, মোটর সাইকেল দুই চাক্কার হয়, কিন্তু গাড়িটি যখন মডিফাই করবে অর্থাৎ দুই চাক্কা থেকে তিন চাক্কাতে পরিণত করবে তখন বিআরটিএ’তে আবেদন করতে হয়। আর সে যেভাবে গাড়ীটি তৈরি করেছে এটি কন্ট্রোল করা কঠিন। এতে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে।