বিজয়ের মাসেই মনে নেই জাতীয় পতাকার কথা

মোহাম্মদ এরশাদ আলী প্রকাশিত: ১৪ ডিসেম্বর , ২০২৩ ১২:২১ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর , ২০২৩ ১২:২১ পিএম
বিজয়ের মাসেই মনে নেই জাতীয় পতাকার কথা
বিজয়ের মাসেও জাতীয় পতাকার কথা মনে না থাকায় দায়িত্ব জ্ঞানহীনের পরিচয় বলে মনে করছেন সচেতনরা। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন সার্বভৌমত্বের প্রতীক জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগ ওই ইউনিয়র পরিষদের সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে।

চলছে বিজয়ের মাস। ঘড়ির কাটায় রাত সাড়ে দশটা। তখনও জাতীয় পতাকা টানানো। ভিজে গেছে শিশিরে। কিছু উৎসুক জনতা বিষয়টি দেখতে পেয়ে করছিল কানাঘুষা। ঠিক সেই মূহুর্তে জাতীয় পতাকা নামাতে আসলেন রিমন নামের একজন ট্যাক্স কালেক্টর। তাকে জিজ্ঞেস করতেই সোজা সাপটা উত্তর, ভাই কাজের চাপে মনে ছিল না। আর সেই জন্য দেশের লাল সবুজের জাতীয় পতাকা অবহেলায় টানানো ছিলো রাতের বেলাতেও। এমই জাতীয় পতাকার অবমাননার ঘটনা ঘটেছে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার ইউনিয়র পরিষদে। বিজয়ের মাসেও জাতীয় পতাকার কথা মনে না থাকায় দায়িত্ব জ্ঞানহীনের পরিচয় বলে মনে করছেন সচেতনরা। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন সার্বভৌমত্বের প্রতীক জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগ ওই ইউনিয়র পরিষদের সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। আর ইউনিয়ন পরিষদের কর্তব্যরতদের বিভিন্ন দায়িত্ব পালনে অবহেলার প্রতিকার চেয়ে একাধিকবার সতর্ক করেছেন চেয়ারম্যান নাহিদ সুলতানা তৃপ্তি। সর্বশেষ তিনি এর স্থায়ী প্রতিকার চেয়ে গত মঙ্গলবার ১২ ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

জানা যায়, রাষ্ট্রের প্রতীক জাতীয় পতাকা, মুক্তিযোদ্ধের চেতনার ধারক ও বাহক বলা হয় জাতীয় পতাকাকে। একটি রাষ্ট্রের পরিচয় জাতীয় পতাকা, সাধারণত সর্বত্র সবসময় প্রদর্শণ করা যায় না। জাতীয় পতাকা প্রদর্শণের একটা নিয়ম রয়েছে। আবার ইচ্ছে করলেই যে কেউ জাতীয় পতাকা ব্যবহার করতে পারেন না। বাংলাদেশের সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সময় এবং কিছু নির্ধারিত ভবনসমূহে সব কর্মদিবসে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হয়। এসব ক্ষেত্রে শুধু সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত পর্যন্ত পতাকা উত্তোলিত রাখতে হবে। তবে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রমও আছে। কিন্তু গত ১৩ই ডিসেম্বর বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাত সাড়ে ১০টায় সান্তাহার ইউনিয়ন পরিষদের বাহিরে জাতীয় পতাকা উড়তে দেখা যায়। অর্থাৎ সকাল ৯টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় এবং কাজ সমাপ্তির পর নামিয়ে ফেলার নিয়ম থাকলেও সান্তাহার ইউনিয়র পরিষদে এসব নিয়ম মানা হয় নি। যার জন্য রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত পতাকা উড়তে দেখা গেছে। শিশিরে ভিজছে বিজয়ের প্রতীক এই লাল সবুজ রংয়ের জাতীয় পতাকা।

এই পতাকা অর্জনের জন্য বহু আন্দোলন-সংগ্রাম, আত্মদানের ঘটনা ঘটেছে। ১৯৭১ সালে ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে লাল-সবুজ পতাকার অধিকার লাভ করেছে। রাতের বেলা জাতীয় পতাকা উড়িয়ে পতাকার অবমাননা করার অর্থ হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করা। স্বাধীন বাংলাদেশকে অস্বীকার করা। বিজয়ের মাসে জাতীয় পতাকাকে অবমাননা বা অসম্মানকে কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। তাই প্রশাসনের কাছে সচেতনদের অনুরোধ, জাতীয় পতাকার অবমাননা ও অপব্যবহার রোধে তারা যেন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
 
জাতীয় পতাকা নামাতে আসা ইউনিয়ন পরিষদের ট্যাক্স কালেক্টর রিমন বলেন, আজকে অতিরিক্ত কাজের চাপ, তাই পতাকাটি নামাতে মনে ছিল না। তবে জাতীয় পতাকা বিকেলে নামানোর নিয়ম বলে স্বীকার করেন তিনি। এছাড়া তিনি কর্তৃপক্ষের গাফিলাতির দোষ না দিয়ে, নিজেদের ভূলের কথা অনায়াসে স্বীকার করলেন। পাশাপাশি এই পতাকা টানানো ও নামানো তারাই করে থাকেন বলে জানান তিনি।

একইভাবে বললেন ইউনিয়ন পরিষদের দফাদার আকরাম। তিনি জানালেন, এই পতাকা নামানোর দায়িত্বটা বেশিরভাগ আমারই। গতদিন আমার ছেলের বউয়ের অপারেশন ছিল। তাই আমি দুপুর ১২টার দিকে চলে গিয়েছিলাম। তবে যাবার সময় আমি কয়েকজনকে বলে গিয়েছিলাম পতাকাটি নামানোর জন্য। তবে চেয়ারম্যান নাহিদ সুলতানা তৃপ্তি তাকেসহ অন্যদের তিন বার সতর্ক করেছেন বলে অনায়াসে স্বীকার করলেন তিনি।

এ ব্যপারে ওই ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এরশাদুল হক টুলু বলেন, জাতীয় পতাকা আমাদের অহংকার। এই পতাকা উত্তোলন করা ও নামানোর একটা নিয়ম আছে। তাই এটির যথাযথ মর্যাদা রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। আজকে দেখলাম আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের সামনে জাতীয় পতাকা রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত টানানো ছিল। যেটা আমাদের কাম্য নয়। এটা একটা দায়িত্বের অবহেলা ছাড়া আর কিছুই না।

একইভাবে অভিযোগের সুরে সেখানে উপস্থিত আরও কয়েকজন বলেন, রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত জাতীয় পতাকা গুরুত্বপূর্ণ ইউনিয়র পষিদের সামনে টানানো, যা মোটেও কাম্য নয়। তাও আবার বিজয়ের মাসে জাতীয় পতাকার অবমাননা।

রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত কেন জাতীয় পতাকা উড়ছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে অসহায়ের সুরে সান্তাহার ইউনিয়ন পষিদের চেয়ারম্যান নাহিদ সুলতানা তৃপ্তি বলেন, জাতীয় পতাকাটি নামানোর দায়িত্বটা কি আমার? আমি এর জন্য আমার ইউনিয়ন পরিষদে কর্তব্যরতদের যে কতোবার বলেছি, তার কোনো হিসেব নেই। গত মঙ্গলবারও আমি তাদের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর কান্ডজ্ঞানহীন দায়িত্বের প্রতিকার চেয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্যই মূলত কেউ কেউ উদ্দেশ্য প্রনোদিত হয়ে এসব দায়িত্বহীন কাজ করছে। আমিও চাই এর একটা স্থায়ী সমাধান হোক।

এ ব্যপারে আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোমানা আফরোজ বলেন, জাতীয় পতাকা রাত পর্যন্ত টানানোর বিষয়টি আমার জানা নেই। এছাড়া তৃপ্তির অভিযোগের বিষয়েও আমার জানা নেই। তবে বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবশ্যই চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে দেখবো।

এই বিভাগের আরোও খবর

Logo