নতুন নেতৃত্বের হাতে যশোর বিএনপি।
যশোর জেলা বিএনপির সম্মেলনে সভাপতি পদে অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু ৭৪৮ ভোট ও সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। সভাপতি পদে মিজানুর রহমান খান ৬৬৩ ভোট ও মারুফুল ইসলাম ৭৩ ভোট পেয়ে পরাজিত হয়েছেন। শনিবার যশোর টাউন হল ময়দানের রওশন আলী মঞ্চে সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে কাউন্সিলরদের ভোট অনুষ্ঠিত হয় । এছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল ইসলাম ১৩৪১ ভোট, মনির আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চু ৮৪৫ ভোট ও শহিদুল বারী রবু ৭২০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। অপরপ্রার্থী কাজী আজম ৭১২ ভোট পেয়েছেন। রাত সাড়ে আটটার দিকে জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দদের সাথে নিয়ে এ ফলাফল ঘোষণা করেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান। ফলাফল ঘোষণার আগে আমান উল্লাহ আমান নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘ফলাফলে কে নির্বাচিত হলো, কার ভোটে কে নির্বাচিত হলো সেটা দেখা যাবে না। একমাত্র বিএনপিই গণতান্ত্রিক পন্থায় বিশ্বাস করে বলেই আজ নির্বাচনের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করলো। কার ভোটে কে নির্বাচিত হলো, কে কাকে ভোট দিলো সেটা ভুলে যেতে হবে। সবাইকে মনে রাখতে সবাই জিয়ার সৈনিক। সবাই ঐক্যবন্ধ থেকে দলের জন্য কাজ করতে হবে। বিগত আন্দোলনে যেভাবে সবাই এক ছিলাম।’
এ সময় বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সহসাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এর আগে, দীর্ঘ ১৬ বছর পর শনিবার বেলা সাড়ে ১০ টার দিকে স্থানীয় কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন শেষে বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, এখন অনেকেই সংস্কারের কথা বলছেন। কিন্তু একমাত্র বিএনপি স্বৈরাচারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আড়াই বছর আগে দেশ পুনর্গঠনের কথা বলেছে, ৩১ দফা ঘোষণা করেছে । বিএনপির রাজনীতির মূললক্ষ্য জনগণ ও দেশ। তাই ভেঙে পড়া রাষ্ট্রকে গঠন বিএনপির পক্ষে সম্ভব। বিএনপি দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে সবার আগে দেশ পুনর্গঠন করবে। তিনি আরও বলেন, জনগনের সমর্থন নেই এমন কোনো কাজ বিএনপি করে না। বিভ্রান্ত হয়ে অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়া নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তাই বিএনপির বিরুদ্ধে কারো অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না। বিএনপি একমাত্র প্রমাণ করেছে অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করে না। দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী দেশ পুনর্গঠনে দ্রুততম সময়ে স্বচ্ছ্ব নির্বাচন দেয়া জরুরি। প্রধান অতিথির বক্তব্যের পর বেলা দুইটা থেকে শহরের টাউন হল ময়দানের আলমগীর সিদ্দিকী হলে কাউন্সিলরদের গোপন ভোটের আয়োজন করেন কেন্দ্রীয় ঘোষিত নির্বাচন কমিশন। সেখানে আট উপজেলার ১৬ টি ইউনিটে ১ হাজার ৬১৬ ভোটার ভোটারের মধ্যে ১৪৮৫ জন ভোট প্রদান করেন। দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ যশোর জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৯ সালে। সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের ১০ বছর পর ২০১৯ সালের ২০ এপ্রিল যশোর জেলা বিএনপির কমিটি ভেঙে আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত তরিকুল ইসলামের সহধর্মিণী অধ্যাপক নার্গিস বেগম আহ্বায়ক এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু সদস্যসচিব হন। ওই কমিটিকে তিন মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে বলা হলেও পেরিয়ে যায় ৬ বছর। শীর্ষ নেতারা বলছেন, এর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার একদলীয় শাসনব্যবস্থা চালু করার কারণে আন্দোলন ও কমিটি গঠন ঝিমিয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনকে ঘিরে দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে। যশোরে বিএনপির রাজনীতিতে এই সম্মেলন নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। একই সাথে দলকে সুসংগঠিত করে আগামি সংসদ নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী করতে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করে তৃর্ণমূলের নেতাকর্মীরা।