বান্দরবানের সাঙ্গু ও মাতামুহুরি সংরক্ষিত এলাকায় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন অ্যালায়েন্স (সিসিএ) সদস্যদের ক্যামেরা ট্র্যাপে ধরা পড়েছে পূর্ণবয়স্ক চিতা বাঘ। যা এ অঞ্চলে হারিয়ে যাওয়া বন্যপ্রাণীর বৈচিত্র্য এবং অস্তিত্ব প্রকাশ হয়েছে।
গত বুধবার (২৫ জুন) রাতে সিসিএ তাদের নিজস্ব ফেসবুক পেজে দিনের আলোয় তোলা চিতাবাঘের ২টি ছবি প্রকাশ করে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বনাঞ্চলে ক্যামেরা ফাঁদে ধরা পড়ায় এই রহস্যময় বন্যপ্রাণী নিয়ে নতুন করে আগ্রহ সৃষ্টি হয়। তবে পূর্ণবয়স্ক বাঘটির লিঙ্গ শনাক্ত করা যায়নি বলে জানিয়েছেন সংস্থাটি। এর আগেও বেশ কয়েকবার পার্বত্য চট্টগ্রামে চিতাবাঘ থাকার খবর শোনা গেলেও প্রকাশ্যে কোনো ছবি বা ভিডিও দেখা যায়নি। এক দশক আগেও ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ে একটি চিতাবাঘের ছবি পেয়েছিল সিসিএ।
বাঘ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে হুমকির সম্মুখীন এ প্রাণীটির দেখা পাওয়া পাহাড়ের প্রানী বৈচিত্রে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে। বাঘের এ প্রজাতি সংরক্ষণে উদ্যোগ নেওয়ার ওপর জোর দিচ্ছেন তারা।
ক্যামেরা ট্র্যাপিং প্রকল্পটির দলনেতা সৌরভ চাকমার সাথে কথা হয় পাহাড়বার্তা’র। তিনি জানান, চলতি মাসের ১৫ তারিখে ক্যামেরার এই ট্র্যাপিংগুলো চেক করার জন্য আমিসহ আমার সাথে আরও তিনজন ইতল চাকমা, মেনরোয়া ম্রো, রেংরই ম্রো ঐই অঞ্চলে প্রবেশ করি এবং ২৪ তারিখে আলীকদম সদরে চলে আসি। এরমধ্যে এই চিতাবাঘের ছবিটি ধারণ করা হয়েছে। মূলত সাঙ্গু ও মাতামুহুরি সংরক্ষিত এলাকায় এশীয় কালো ভালুক ও সূর্য ভালুকের উপস্থিতি শনাক্তের জন্য ২০২৪ সাল থেকে আমরা এই ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের কাজটি করছি। আমরা আগে থেকেই জানতাম এই বনে চিতাবাঘ আছে। হয়ত তখন ছবি ধারণ সম্ভব হয়নি। এটা একটা ফটোগ্রাফিক এভিডেন্স বলে জানান তিনি।
তিনি পাহাড়বার্তা’কে আরও জানান সিসিএ মূলত কয়েকটি জায়গায় কাজ করে, সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রামে। সিলেটে মহাবিপন্ন উল্লুক নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবানের সাঙ্গু ও মাতামুহুরি সংরক্ষিত এলাকায় বিপন্ন কচ্ছপ ও ভাল্লুক নিয়ে গবেষণা করছেন তারা। পাহাড় থেকে উদ্ধার হওয়া এখন পর্যন্ত ২০টি কচ্ছপ ২০২১ ও ২০২৪ সালে দুই দফায় ১০টি করে মোট ২০টি কচ্ছপ জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে একটি কচ্ছপ মারা গেছেন বলেও নিশ্চিত করেছেন তিনি।
জানা যায়, ১৮৮০ সালে বান্দরবানের সাঙ্গু ও মাতামুহুরি বনাঞ্চলকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হয় । প্রায় ৭৪ হাজার হেক্টর আয়তনের বনাঞ্চল সরকার ঘোষিত সর্বপ্রথম সংরক্ষিত বনাঞ্চল। বর্তমানে এই বনাঞ্চলে চোরাকারবারি কর্তৃক বৃক্ষ নিধন করে পাচারের ফলে, কমছে বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ। ফলে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্য।
সিসিএ’র সিইও শাহরিয়ার সিজার রহমান পাহাড়বার্তা’কে বলেন, “সম্প্রতি ক্যামেরা ট্র্যাপে যে চিতাবাঘের ছবি উঠেছে সেটি পূর্ণ বয়স্ক এবং মাথা বড় আকারের। কেউ কেউ বলছেন, এটি পুরুষ চিতাবাঘ হতে পারে। তবে এখনও আমরা বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারিনি, আমরা নতুন করে ছবিটি পাওয়ার পর গবেষণা করার চিন্তা করছি।
তিনি পাহাড়বার্তা’কে আরও বলেন, আশাবাদের কথা, এখনও আমাদের দেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের এই বনে চিতাবাঘ আছে। তবে কতটি আছে সে সংখ্যা একনও বলা সম্ভব না। তিনি আরও বলেন, এটা মনে রাখতে হবে যে, চিতাবাঘ হুমকির সম্মুখীন। বাঘের এই প্রজাতি সংরক্ষণে উদ্যোগ নেওয়া দরকার, যাতে চিতাবাঘ বিলুপ্ত হয়ে না যায়।” ২০১৫ সালে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের আরেকটি প্রকল্পে একই বনে আরও একটি চিতাবাঘের ছবি তুলেছিলেন সিসিএ।
প্রসঙ্গত, বান্দরবানের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে চিতা বাঘের দেখা পাওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে আনন্দ প্রকাশ করে দ্রুত বাঘসহ অন্য প্রানী সংরক্ষণে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহনে জোর দাবি জানিয়েছে ।