ভাঙা ব্রিজ, ধ্বংসপ্রায় রাস্তা— উন্নয়ন নেই, আশ্বাসই ভরসা
নরসিংদী সদর উপজেলার নুরালাপুর ইউনিয়নে সড়ক ও সেতুর করুণ দশায় জনজীবন আজ চরম দুর্ভোগে নিমজ্জিত। দীর্ঘদিন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে গ্রামীণ সড়কগুলো পরিণত হয়েছে মৃত্যু ফাঁদে। তার ওপর মাঝপথে বন্ধ হয়ে যাওয়া সেতু নির্মাণ প্রকল্প ও নদীভাঙনের হুমকিতে পড়েছে ঐতিহ্যবাহী নুরালাপুর উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন জনপরিসেবা।
নুরালাপুর ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডেই সড়কের অবস্থা জীর্ণ। বর্ষা এলেই কাদা-পানিতে রাস্তা চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় কৃষক, শিক্ষার্থী, রোগীসহ সকল শ্রেণির মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। জরুরি প্রয়োজনে রোগী বা প্রসূতি নারীকে হাসপাতালে নেওয়াও হয়ে ওঠে দুঃসাধ্য।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গত দেড় দশকে কোনো টেকসই উন্নয়ন হয়নি ইউনিয়নের রাস্তাঘাটে। কিছু রাস্তা নামমাত্র সংস্কার হলেও নিম্নমানের কাজের কারণে কয়েক সপ্তাহেই ফের আগের অবস্থায় ফিরে যায়।
পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ ইউনিয়নটিকে দুটি ভাগে বিভক্ত করেছে। নদীর ওপর একাধিক ব্রিজ ভেঙে যাওয়ায় অন্তত ১৪টি গ্রামের মানুষ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। নুরালাপুর বাজার, ইউনিয়ন পরিষদ কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছাতে প্রতিদিন পোহাতে হচ্ছে সীমাহীন দুর্ভোগ।
নুরালাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশ ঘেঁষে একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণের কাজ ৬ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। তিনবার ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হলেও কেউই কাজ শেষ করেননি। এই ব্রিজের অভাবে বিদ্যালয়ের প্রায় ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে নদী পার হয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে ক্লাসে যেতে হচ্ছে।
সেতু নির্মাণের জন্য বিদ্যালয়ের একটি টিনশেড ভবন ভেঙে ফেলা হয়েছিল। কাজ কিছুদিন চললেও হঠাৎ তা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর চাপে প্রতিবছর বর্ষায় মাটি সরে গিয়ে ভবন ধসে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। সাময়িক মেরামত করা হলেও, বর্তমানে বিদ্যালয়ের দুইতলা ও তিনতলা ভবন মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ ফেরদৌস কামাল বলেন, “প্রতিদিন প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস করছে। বিষয়টি একাধিকবার শিক্ষা বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হলেও এখন পর্যন্ত স্থায়ীভাবে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”
সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। আলগী বাজার ও গদাইরচরের আরও একটি সেতুর পাশে রয়েছে মাদ্রাসা, এতিমখানা ও একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন পারাপার করছে ভঙ্গুর কাঠামোর ওপর দিয়ে।
মাধবদী গদাইরচর হয়ে আলগীবাজার পর্যন্ত সড়কের কাজও থেমে আছে ধীরগতির ফাঁদে। স্থানীয়রা জানান, ঠিকাদার নাজমুল প্রথমে কাজ শুরু করলেও পরে তিনি আর এলাকায় আসছেন না। অথচ এলজিইডি এবং ইউনিয়ন পরিষদ সড়ক সম্প্রসারণ ও পরিমাপসহ প্রয়োজনীয় সব সহায়তা দিয়েছে।
ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোঃ আরিফ হোসেন বলেন, “আমার ইউনিয়নের প্রতিটি রাস্তাই এখন বেহাল। বারবার এলজিইডি ও উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি। ব্রিজের কাজ তিনবার শুরু হয়ে আবার বন্ধ হয়ে গেছে। সম্প্রতি আবার নতুন করে টেন্ডার হয়েছে। আমি সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন—এই ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের দুর্দশা দূর করতে দ্রুত রাস্তাগুলো মেরামত করা হোক।”
নুরালাপুর ইউনিয়নের এই চিত্র বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রার বাস্তবতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। শিক্ষা, যোগাযোগ ও জনস্বাস্থ্যের এমন দুরবস্থা কোনোভাবেই উপেক্ষা করার মতো নয়। স্থানীয়দের দাবি, অবিলম্বে সরকারি হস্তক্ষেপ ও টেকসই পরিকল্পনার মাধ্যমে অবকাঠামো উন্নয়ন নিশ্চিত করা হোক।