১১ মাস আগে ১০ লাখ টাকা খরচ করে সৌদি আরব যান রাজবাড়ী সদর উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের জালদিয়া গ্রামের আপন চাচাতো দুই ভাই।
স্বজনদের দাবি, সেখানে গিয়ে কাজ না পেয়ে উল্টো দালালের নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তারা। তিন মাস ধরে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ নেই বলেও দাবি স্বজনদের।
এদিকে দুই দালালের বিরুদ্ধে মানবপাচার প্রতিরোধ আইনে মামলা করেছেন ভুক্তভোগীর পরিবার। এ ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ।
ভুক্তভোগী দুই যুবক হলেন- জালদিয়া গ্রামের কামাল মোল্লার ছেলে সোহেল মোল্লা ও মৃত ইয়াছিন মোল্লার ছেলে ইকবল মোল্লা। তারা সম্পর্কে আপন চাচাতো ভাই।
কামাল মোল্লা জানান, তার ছেলে সোহেল ও ভাতিজা ইকবলকে সৌদি আরবে ভালো চাকরির প্রলোভন দেখান প্রতিবেশী মনিরদ্দিন মোল্লা ও তার শ্যালক মামুন মোল্লা। ভাগ্য ফেরাতে মনিরদ্দিন ও মামুনকে ১০ লাখ টাকা দিয়ে গত বছরের ৯ই জুন সৌদি আরবে পাড়ি জমায় সোহেল ও ইকবল। সেখানে গিয়ে কাজ না পেয়ে উল্টো দালাল চক্রের নির্যাতনের শিকার হয় তারা। কাজ দেয়ার আশ্বাসে চলতি বছরের ৭ই ফেব্রুয়ারী তাদের(পরিবারের লোকদের) কাছ থেকে আরও দুই লাখ টাকা নেয় দালাল মনিরদ্দিন ও মামুন। কিন্তু এরপর থেকেই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সোহেল ও ইকবলের। তিন মাস ধরে তাদের খোঁজ না মেলায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে পরিবারটির। দুই দালালের বিরুদ্ধে গত ২৭শে এপ্রিল রাজবাড়ীর মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা করেছে সোহেলের স্ত্রী রিনা আক্তার।
রিনা আক্তার বলেন, তিন মাস ধরে আমার স্বামী ও দেবরের কোন খোঁজখবর নেই। দালাল মনিরদ্দিন ও মামুন বলছেন তাদের আরও ১০ লাখ টাকা দিলে তারা আমার স্বামী ও দেবরকে এনে দিবেন। আমরা তাদেরকে এ পর্যন্ত ১২ লাখ টাকা দিয়েছি। এখন আমরা আরও ১০ লাখ টাকা কোথায় পাবো। তাই আমরা আইনের আশ্রয় নিয়েছি।
ইকবল মোল্লার স্ত্রী সেলিনা খাতুন বলেন, আমার স্বামী ও ভাসুর বেঁচে আছি নাকি মারা গেছে আমরা জানিনা। তিন মাস ধরে তাদের সাথে আমাদের কোন যোগাযোগ নেই। আমার ছোট দুই মেয়ে, আমার ভাসুরের ছোট এক মেয়ে। ছোট বাচ্চারা সবসময় তাদের বাবাদের সাথে কথা বলতে চায়, কান্নাকাটি করে। আমরা দুটি পরিবার খুব কষ্টে দিন পার করছি। আমরা আইনের আশ্রয় নিয়েছি। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, আমার স্বামী ও ভাসুরকে দেশে ফেরত এনে দিক।
সোহেলের মা সুফিয়া বেগম বলেন, আমাদের ছেলে দুটিকে আমরা ফেরত চাই। আর এই দুই দালালের কঠিন শাস্তি চাই। যাতে এদের খপ্পড়ে পড়ে আমাদের মতো অন্য কোন পরিবার সর্বস্বান্ত না হয়।
এ বিষয়ে মনিরদ্দিন মোল্লা বলেন, সোহেল ও ইকবলকে আমার শ্যালক মামুন বিদেশে পাঠিয়েছে। তবে এ বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। সবকিছু মামুন জানে।
মামুন মোল্লা বলেন, সোহেল ও ইকবলকে যে কোম্পানিতে কাজ দিয়েছিলাম। সেখানে তারা কাজ না করে পাসপোর্ট ফেরত চায়। পরে এজেন্সির মাধ্যমে ওই কোম্পানির কাছ থেকে তাদের পাসপোর্ট ফেরত নিয়ে দিয়েছি। এখন আর তাদের বিষয়ে আমার কোন দায়ভার নেই।
এদিকে রিনা আক্তারের দায়ের করা মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন(পিবিআই) ফরিদপুর কার্যালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মামলাটি সঠিকভাবে তদন্তের আশ্বাস দিয়ে এ কার্যালয়ের পুলিশ সুপারের মোঃ রবিউল ইসলাম বলেন, মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম আমরা শুরু করবো। পিবিআই সব সময় নির্মোহ জায়গা থেকে তদন্ত করে প্রকৃত সত্যকে সামনে আনার এবং প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় চেষ্টা করে। এ মামলাটিও আমরা সঠিকভাবেই তদন্ত করবো।
বিদেশ গমনইচ্ছুদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যারা কর্মসংস্থানের জন্য প্রবাসে যাবেন তাদেরকে আরও সচেতন হতে হবে। দালালদের মাধ্যমে বিদেশে না গিয়ে জনশক্তি রপ্তানি ব্যুরো ও বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে প্রচলিত নিয়ম মেনে বৈধভাবে বিদেশে যেতে হবে। এতে বিদেশে গিয়ে বিপদে পড়ার মতো ঘটনা অনেক কমে আসবে।