তানোরে ক্ষুদ্র নৃ-জনগোষ্ঠীর মাঝে রুগ্ন গরু বিতরণ দুর্নীতির অভিযোগে তোলপাড়

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ১৪ মে , ২০২৫ ১৬:৩৬ আপডেট: ১৪ মে , ২০২৫ ১৬:৩৬ পিএম
তানোরে ক্ষুদ্র নৃ-জনগোষ্ঠীর মাঝে রুগ্ন গরু বিতরণ দুর্নীতির অভিযোগে তোলপাড়

রাজশাহীর তানোর উপজেলায় সমতল ভূমিতে বসবাসরত অনগ্রসর ক্ষুদ্র নৃ-জনগোষ্ঠীর মাঝে সরকারি সহায়তা হিসেবে বিতরণকৃত গরুর মান নিয়ে উঠেছে গুরুতর অভিযোগ। অভিযোগ রয়েছে, সরকার নির্ধারিত মান ও টেন্ডার সিডিউল অনুযায়ী গরু সরবরাহ না করে নিম্নমানের, রুগ্ন ও রোগাক্রান্ত গরু সরবরাহ করে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে। এই অনিয়মে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগও উঠেছে। সূত্র জানায়, গত ১৩ মে (মঙ্গলবার) তানোর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেনারি হাসপাতাল প্রাঙ্গণে ‘সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের’ আওতায় ৮০ জন উপকারভোগীর মাঝে ৮০টি বকনা গরু, ১০০ কেজি গো-খাদ্য ও একটি করে ফ্লোর ম্যাট বিতরণ করা হয়। গরুগুলো সরবরাহ করে ‘জিনটেক এন্টারপ্রাইজ’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বিতরণ অনুষ্ঠানে গরুগুলোর বয়স ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে অসংখ্য অভিযোগ উঠলেও তা উপেক্ষা করে দ্রুত বিতরণ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়।
উপকারভোগীদের দাবি, টেন্ডার অনুযায়ী প্রতিটি গরুর বয়স দেড় বছর ও ওজন কমপক্ষে ১০০ কেজি হওয়ার কথা থাকলেও বিতরণকৃত অধিকাংশ গরুর বয়স এক বছরের নিচে এবং ওজন মাত্র ৫০ থেকে ৬০ কেজির মধ্যে। গরুগুলোর অনেকগুলোর শরীরে লামিস্কীন (চর্মরোগ), দুর্বলতা ও অন্যান্য রোগের লক্ষণ বিদ্যমান। এতে উপকারভোগীরা বঞ্চিত হয়েছেন তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে। কেউ কেউ একে 'লুটপাট প্রকল্প' বলেও অভিহিত করেছেন। একাধিক উপকারভোগী অভিযোগ করেন, “এটা কোনো উন্নয়ন প্রকল্প নয়, এটা গরিবের হক মেরে টাকা আত্মসাতের প্রকল্প। এর আগেও এমন অনিয়ম হয়েছে। সরেজমিন তদন্ত করলে সব প্রমাণ মিলবে।
স্থানীয়রা জানান, গরুগুলোর মান নিয়ে আগে থেকেই সন্দেহ থাকলেও গণমাধ্যমকে কিছু না জানিয়ে দ্রুততার সঙ্গে বিতরণ সম্পন্ন করে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। সাংবাদিকরা উপস্থিত হলে জিনটেক এন্টারপ্রাইজের পক্ষ থেকে পাঠানো লোকজন কৌশলে স্থান ত্যাগ করেন।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিনটেক এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী দাস বাবুর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। প্রতিষ্ঠানটির হয়ে গরু সরবরাহকারী শাহিন নামের এক ব্যক্তি জানান, দাস বাবু গরুগুলো ওমর ফারুক নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে কিনে সরবরাহ করেছেন। তবে দায়িত্ব এড়িয়ে গিয়ে বিস্তারিত বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি। তানোর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ওয়াজেদ আলী বলেন, “অভিযোগ পুরোপুরি সত্য নয়। গরুগুলোর ওজন টেন্ডার অনুযায়ীই ছিল। তবে কিছু গরুর স্বাস্থ্য একটু দুর্বল ছিল এবং একটি গরুর লামিস্কীন রোগ ছিল।” তিনি আরও বলেন, “সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য বা কাগজপত্র ছাড়া মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে স্থানীয় সচেতন মহল বলছেন, শুধু দায়িত্ব এড়িয়ে নয়, এ ঘটনায় প্রকৃত তদন্ত ও দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে। ইতোমধ্যে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নজরে আনার জন্য লিখিত অভিযোগ প্রস্তুত করছেন বলেও জানা গেছে।
এ অনিয়মে ক্ষুব্ধ স্থানীয় জনগণ ও সচেতন মহল। তারা বলছেন, এ ধরনের দুর্নীতি শুধু সরকারি অর্থ নয়, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বিশ্বাস ও উন্নয়নপ্রক্রিয়াকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে। অবিলম্বে তদন্ত কমিটি গঠন ও জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান তারা।

এই বিভাগের আরোও খবর

Logo