কুমিল্লার চান্দিনায় ডাকাত আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে এলাকাবাসী। এক রাতে ৭ গ্রামে ডাকাতের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় ডাকাতের প্রতিহত করতে বিভিন্ন গ্রামের মসজিদের মাইকে মাইকিং করে গ্রামবাসী। ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ডাকাত সন্দেহে ২জনকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয় জনতা। শুক্রবার (৭ মার্চ) দিনগত রাত ১২টায় চান্দিনা উপজেলার বরকইট ইউনিয়নের লতিফপুর গ্রামে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ১জনকে এবং ধাওয়া করে পিহর গ্রাম থেকে মাইক্রোবাসসহ ১জনকে আটক করে স্থানীয়রা। একই রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের তীরচর এলাকায় প্রবাসীর গাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। আটককৃত সন্দেহ ভাজন ডাকাত সদস্যরা হলো- কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর দিঘিরপাড় মো. রাসেল (২৫) ও একই ইউনিয়নের ঘোড়ামাড়া কৃষ্ণপুর গ্রামের মো. রিফাত (২২)। ওই রাতে চান্দিনা উপজেলার মাইজখার, মহিচাইল, বসন্তপুর, নবাবপুর ও জিরুআইস গ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে ডাকাতদল হানা দেয় বলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ডাকাতদের প্রতিহত করতে কয়েকটি গ্রামের মসজিদে মাইকিং করা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও স্ট্যাটাস দিতে দেখা যায় এলাকাবাসীকে। এতে পুরো উপজেলা জুড়ে ডাকাত আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে এসব গ্রামে ডাকাতির সংগঠিত হওয়ার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। স্থানীয়রা বলছেন, এলাকাবাসী ডাকাতের উপস্থিতি টের পেয়ে মাইকিং করায় পালিয়ে যায় ডাকাতদল। চান্দিনা উপজেলার লতিফপুর গ্রামের বাসিন্দা মিলন হোসেন জানান, রমজান মাস হিসেবে গ্রামের মানুষ তারাবি নামাজ পড়ে রাতের খাওয়া শেষ করে একটু তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ে। শুক্রবার রাতে আমার বাড়িতে ডাকাতরা হানা দেয়। আমি টের পেয়ে স্থানীয় লোকজনকে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে ডাকাতদের ঘেড়াও করি। এসময় ডাকাতদল পালিয়ে যাওয়ার সময় রাসেল নামে এক ডাকাতকে আটক করি। এ সময় ডাকাতদল ছত্রভঙ্গ হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায় এবং মাইক্রোবাস নিয়ে কয়েকজন ডাকাত পালিয়ে যাওয়ার সময় তাদেরকে ধাওয়া করে এলাকাবাসী। স্থানীয় জনতার ধাওয়ায় ডাকাতদের ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পার্শ্ববর্তী পিহর গ্রামে একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এ সময় রিফাত (২২) নামে অপর এক ডাকাতকে আটক করে স্থানীয় জনতা। পিহর গ্রামের ইউপি সদস্য শহীদুল ইসলাম জানান, ডাকাতদল মাইক্রোবাস নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় পিহর বাজার এলাকায় গাড়িটি গাছের সাথে ধাক্কা লাগে। স্থানীয়রা একজনকে আটক করে এবং তার কাছ থেকে একটি রাম দা উদ্ধার করা হয়। খবর পেয়ে চান্দিনা থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তাদেরকে আটক করে। চান্দিনা থানার উপ-পরিদর্শক (এস.আই) মিথুন সরকার জানান, খবর পেয়ে পৃথক ঘটনাস্থল থেকে ২জনকে আটক করেছি। চান্দিনা উপজেলার আটচাইল গ্রামের মো. আজহার জানান, কয়েক রাত যাবৎ এলাকায় ডাকাতের আনাগোনা টের পাওয়া যায়। শুক্রবার রাতে ভূট্টা ক্ষেত থেকে একজনকে আটক করায় পুরো এলাকায় ডাকাত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে জানা যায় ওই লোকটি মানসিক ভারসাম্যহীন। হাইওয়ে পুলিশ ইলিয়টগঞ্জ ফাঁড়ির ইন-চার্জ (ইন্সপেক্টর) দেওয়ান কৌশিক মহাসড়কের ডাকাতির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন মহাসড়কের ডাকাতি রোধে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ওই ডাকাতদল দাউদকান্দি থেকে পিকআপ যোগে প্রবাসীর মাইক্রো বাসের পিছন নেয়, তীরচর এলাকায় এসে গাড়িকে চাপা দিয়ে ডাকাতি সংগঠিত করে। এদিকে, চান্দিনা থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) নাজমূল হুদা জানান, লতিফপুর গ্রামে ডাকাতি নয়, চুরির ঘটনা ঘটে। আটককৃতদের চুরির ঘটনায় মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এদিকে, শুক্রবার সারা রাত উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ডাকাতি হচ্ছে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ে আমার কাছেও অনেক ফোন আসে। আমাদের একাধিক টিম ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু তদন্তকালে আমরা কোন সত্যতা পাইনি।