চট্টগ্রামে ঔষধ ব্যবসায়ির সোজাসুজি জবাব;আমি আমার দরেই বিক্রি করবো

মোঃ ইসমাইল ইমন প্রকাশিত: ১ জুন , ২০২৪ ০৯:৪১ আপডেট: ১ জুন , ২০২৪ ০৯:৪১ এএম
চট্টগ্রামে ঔষধ ব্যবসায়ির সোজাসুজি জবাব;আমি আমার দরেই বিক্রি করবো
এইসব বিষয়ে দোকানের মালিককে প্রশ্ন করা হলে উনি এই প্রতিবেদককে সোজাসুজি জবাব দেন,আমি কোন দামে কোন ঔষধ বিক্রয় করবো এটা আমার ব্যাপার।আপনার দরকার কি?আপনার সারলে নিবেন না সারলে যেখান কমদামে বিক্রয় হয় ঐখান থেকে নেন।আমি আমার দোকানে আমার ইচ্ছে মতো বিক্রয় করবো এটা একান্ত আমার ব্যবসায়িক বিষয়।ঐ দোকান মালিকের ছেলে ১৮/২০ বছর বয়সের তার কাছে জানতে চাইলে একেবারে উচ্চ কন্ঠে দাম্ভিকতা দেখিয়ে বলেন এগুলো আমাদের বিষয়।আপনার এতো দরকার কি?যেখানে সস্তা সেখান থেকেই নিন।আমিতো কাউকে বাধ্য করছিনা?

অতি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের তালিকায় ঔষধের নাম প্রথম সারিতে,কেননা ঔষধ মানুষের জীবন রক্ষাকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ পন্য।খাদ্যপণ্যের মতো প্রতিদিন কোননা কোন ঔষধের প্রয়োজন হয়না এমন পরিবার ব্যক্তি পাওয়া খুবই কঠিন। কমবেশি সকল পরিবারে ঔষধের প্রয়োজন হয় প্রতিদিন।

আবার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের সাথে ঔষধের ব্যবসার সাথে কিছু পার্থক্যও রয়েছে,যেমন ঔষের ব্যবসার করতে লাগে ড্রাগ লাইসেন্স,ফার্মাসিস্টের উপর ডিগ্রী,নিদিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে ট্রেডলাইসেন্স সহ যাবতীয় কাগজপত্র।ঔষধের প্যাকেটের গায়ে খুচরা মূল্য লেখা থাকে সেই অনুযায়ী এর কিছু কমদামে ঔষধ বিক্রি হয় এটাই নিয়ম,আর একই ঔষধের সারা দেশে একই মূল্যে বিক্রি করতে হয়।কারন মূল্যে নির্ধারণ করেন ঔষধ কোম্পানি গুলো।তাই একই ঔষধের একেক দোকানে একের রকম মূল্যে বিক্রয় করা যেমন আইনগত দণ্ডনীয় অপরাধ আবার মেয়াধোত্তীর্ণ, ভেজাল অনুমোদনহীন,নিম্নমানের ঔষধ ক্রয়বিক্রয়ও আইনত দণ্ডনীয়। তারপর ফিজিসিয়ান স্যাম্পল বিক্রয়, সরকারি হাসপাতালের বিক্রয় নিষিদ্ধ ঔষধ ক্রয় বিক্রয় ও আইনত দণ্ডনীয়।

এখন এই বিষয়ে গত একসপ্তাহে ক্রেতা সেজে চট্টগ্রাম শহরের সদরঘাট, নালাপাড়া, মাদারবাড়ী ও আলকরন এলাকায় ঔষধের দাম নিয়ে একটি জরিপ পরিচালনা করেছি প্রায় পঁচিশটি ঔষধের দোকানে।এই জরিপে দেখা যায় একই ঔষধের একেক ফার্মেসিতে শতকরা ৫ /১০ টাকা মূল্যে কমবেশি পাওয়া যায়।কিন্তু সবচেয়ে বেশি কমবেশি পাওয়া যায় সদরঘাট এরিয়ার উত্তর নালাপাড়া "লতা ফার্মেসি"নামের একটি ঔষধের দোকানে। ঐ ফার্মেসীতে দাম বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে ইসোমিপ্রাজল গ্রুপের সারজেল ৪০ এমজি দশটি ঔষধের মূল্য রাখা হচ্ছে ১১০ টাকা,যা অন্যান্য দোকানে ৯০ টাকা,ডমফেরিডন গ্রুপের ডমেরিন হোয়াট হর্স কোম্পানি ১০ট্যাবলেট মূল্য নেওয়া হচ্ছে-৩০ টাকা, যা অন্য দোকানে ১৫-১৮ টাকা।এরোস্টফার্মা কোম্পানি সেটেরেজিন গ্রুপের রাইনিল ১০ ট্যাবলেট এর মূল্য নিচ্ছেন-৩০ টাকা,যা অন্য দোকানে ২২ টাকা,অবাক কর বিষয় হচ্ছে অপসোনিন কোম্পানির বোমানিপাম গ্রুপের বোপাম-৩ ১০টি ট্যাবলেটর মূল্য নিচ্ছেন-৭০ টাকা,যা অন্য দোকানে ১০টি মাত্র-৪৫ টাকা।অন্য দোকানের চেয়ে দশটি ট্যাবলেটের মূল্য ২৫ টাকা বেশি।অথচ এই লতা ফার্মেসীর দশহাত দুরে" মনিকা ফার্মেসী" ঐ দোকানে একটি বোপাম-৩ ট্যাবলেট খুচরা মূল্য পাচঁ টাকা আর লতা ফার্মেসীতে ০৭ টাকা।এই রকম প্রতিটি ঔষধের মূল্য অন্যান্য দোকানের চেয়ে মানুষ বুঝে দ্বিগুণ পর্যন্ত নিয়ে নিচ্ছে। কারন চালডাল তরকারী চিনি সহ নিত্যপণ্যের দাম মানুষের জানা থাকলেও ঔষধের মূল্য সাধারণ খুব কম মানুষের জানা থাকে।এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মানুষের সাথে গলাকাটা ব্যবসা করে যাচ্ছে সদরঘাট উত্তর নালাপাড়ার "লতা ফার্মেসী"শুধুই তাই নয়,ঐলতা ফার্মেসীতে দেখা যায় নকল ভেজাল অনুমোধনহীন ঔষধে সয়লাব। দোকানে এই রকম ঔষধের কালার শিক্ষিত মানুষেরও বুঝার উপায় নেই কোনটি আসল আর কোনটি নকল?এসকেএফ কোম্পানির ওমিওফ্লাজল গ্রুপের লোসেকটিল-২০, ডমফেরিডন গ্রুপের অমিডন ঔষধের কয়েকটি বক্স দেখলাম অবিকল আসলের মতো,শুধুই মধ্যেখানে বানানের একটি গড়মিল। আর পুরো দোকানে চোখ বুলিয়ে দেখলাম অর্ধেকর বেশি ফিজিসিয়ান স্যাম্পল। যা চট্টগ্রাম ঔষধের পাইকারি বাজারে ৬০% ডিসকাউন্ট মূল্যে ৪০% দিয়ে বিক্রি হয়।কেননা এটা সরকারি ভাবে সম্পূর্ণ বিক্রয় নিষিদ্ধ। 

এই" লতা ফার্মেসী" থেকে কেউ ঔষধ ক্রয় করলে ক্যাশ ম্যামো চাইলেও দেননা। উনার কাছে দোকানের সাইনবোর্ড অনুসারে লতা ফার্মেসীর নামে কোন ক্যাশ মেমোও নেই।

এইসব বিষয়ে দোকানের মালিককে প্রশ্ন করা হলে উনি এই প্রতিবেদককে সোজাসুজি জবাব দেন,আমি কোন দামে কোন ঔষধ বিক্রয় করবো এটা আমার ব্যাপার।আপনার দরকার কি?আপনার সারলে নিবেন না সারলে যেখান কমদামে বিক্রয় হয় ঐখান থেকে নেন।আমি আমার দোকানে আমার ইচ্ছে মতো বিক্রয় করবো এটা একান্ত আমার ব্যবসায়িক বিষয়।ঐ দোকান মালিকের ছেলে ১৮/২০ বছর বয়সের তার কাছে জানতে চাইলে একেবারে উচ্চ কন্ঠে দাম্ভিকতা দেখিয়ে বলেন এগুলো আমাদের বিষয়।আপনার এতো দরকার কি?যেখানে সস্তা সেখান থেকেই নিন।আমিতো কাউকে বাধ্য করছিনা?

পরে আশপাশের লোকজনের সাথে কথা বলে জানতে পারি ঐছেলে নিজেকে ডিএমএফ ডাক্তার পরিচয় দিয়ে প্রেসক্রিপশন দেন,চিকিৎসা করেন,ইনজেকশন দেন,স্যালাইন পুশ করেন, প্রেশার , ডায়বেটিস মাপেন,সব চিকিৎসা করেন।আসলে সে কোন ডিএমএফ নয়,এমনকি ফার্মেসি করার জন্য ফার্মাসিস্ট কোর্সও করেননি।

এব্যাপার সদরঘাট এরিয়ার ঔষধ ব্যবসায়ি সমিতির সভাপতি জনাব মোঃ ইলিয়াস সাহেবের কাছে জানতে চাইলে উনি বলেন- আমাদের সমিতি থেকে এই লতা ফার্মেসি ও পাশের মনিকা ফার্মেসিকে অনেকবার সতর্ক করা হয়েছে ঔষধের দামের ব্যাপারে, ভেজাল অনুমোদনহীন ঔষধ বিক্রি না করতে এবং ফিজিসিয়ান স্যাম্পল সহ সব অনিয়মের বিষয়ে।উনারা কারো কথাই শুনেননা।

আপনারা মিডিয়াতে কাজ করেন।এই সব বিষয়ে লিখে প্রচার করে প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে এনে সরকারি ভাবে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন আমরা কোন প্রতিবাদ করবোনা।
এইসব বিষয়ে আমরাও চট্টগ্রাম ঔষধ প্রশাসন, জেলা প্রশাসকসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ভোক্তা অধিকার সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি। আমরা চাইনা ঔষধ ব্যবসায়ীদের দূরনাম হোক গুটিকয়েক ব্যাবসায়ীর কারনে।

এই বিভাগের আরোও খবর

Logo