কটিয়াদীতে অনলাইন জুয়ায় ধ্বংসের পথে যুব সমাজ

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ১ মে , ২০২৫ ১১:৪৭ আপডেট: ১ মে , ২০২৫ ১১:৪৭ এএম
কটিয়াদীতে অনলাইন জুয়ায় ধ্বংসের পথে যুব সমাজ
কটিয়াদীতে অনলাইন জুয়ায় কিশোর ও যুবসমাজ আসক্ত হয়ে পড়ছে। স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে হাজারো যুবক এ খেলায় মেতে উঠে

কটিয়াদীতে অনলাইন জুয়ায় কিশোর ও যুবসমাজ আসক্ত হয়ে পড়ছে। স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে হাজারো যুবক এ খেলায় মেতে উঠে। এতে দেশীয় অর্থ পাচারের পাশাপাশি পরিবার ও সমাজে নানা অপরাধমূলক ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলছে। এতে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা। কিছুতেই যেন এ আসক্ত থেকে ফিরিয়ে নিতে পারছে না তাদের সন্তানদের।

সকাল থেকে রাত পর্যন্ত উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের বিভিন্ন পাড়া মহল্লার অলি-গলিতে চায়ের দোকান, খেলাধুলার মাঠ, স্কুলের মাঠ, বাসস্ট্যান্ড সহ বিভিন্ন মোড়ে এমনকি রাস্তার পাশের ফাঁকা জায়গাও গরম থাকে এ জুয়ায়। এলাকার উঠতি বয়সের যুবকেরা জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ায় অভিভাবকরা আছেন উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায়। কারণ, জুয়ার টাকা জোগাতে অনেকে পরিবারের পকেট কাটছে, আবার অনেকে চুরিসহ সমাজে বিভিন্ন অপরাধমূলক ঘটনার সাথে জড়িয়ে পড়ছে। অনেক সময় জুয়ার টাকা জোগাড় করতে খুন-খারাপির পথও অনায়াসে বেছে নিচ্ছে তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কটিয়াদী জালালপুর ইউনিয়নের একাধিক যুবক বলেন, এই জুয়া খেলতে প্রথমে লাগে অ্যাপস। অ্যাপস ইনস্টল করার পর লাগে টাকা। এই টাকা রিচার্জ করতে মধ্যস্বত্ব্বভোগী এজেন্টের কাছে যেতে হয়। এতে করে লাভবান হচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগী এজেন্টরা। এরকম এজেন্ট রয়েছে প্রতিটি পাড়া মহল্লায়। এই এজেন্টদের কারণেই ধ্বংস হচ্ছে কিশোর ও যুবসমাজ। এজেন্টের যত অ্যাকাউন্ট হবে তত বেশি লাভ। কারণ এই টাকা রিচার্জ করতে কাটা হয় কমিশন।

কটিয়াদী উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নে চরঝাকালিয়া গ্রামের এক যুবক বলেন, অনলাইনের এই জুয়া খেলাটা একটা নেশা জাতীয় খেলা। অনেক সময় এক থেকে দুইবার খেলায় জিতে গেলে সামান্য কিছু টাকা লাভ হয়। এই লাভের আশায় বেশি টাকা রিচার্জ করে, তখন বেশি লাভের আশায় হেরে গিয়ে সর্বস্ব হারাতেই হয়। পরবর্তীতে রিচার্জের টাকা জোগাড় করতে গিয়ে সমাজে বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যকলাপের সাথে জড়িয়ে পড়ে। তারপরও অনেকেই রাতারাতি বড়লোক হওয়ার আশায় বড়ো অঙ্কের টাকা বাজি ধরে।
এতেও ভালো মুনাফা অর্জন করা সম্ভব হয়না। 

কটিয়াদীর বিভিন্ন মার্কেটের চিপা-চাপায়, দোকানে, খেলার মাঠে উঠতি বয়সের ছেলেরা মোবাইল ফোনে লুডু খেলছে; কেউ গেইম খেলছে। এটা সাধারণভাবে দেখলে বুঝার উপায় নেই যে তারা লুডু-এর নামে জুয়া খেলছে। আসলে এটাই প্রকৃত অর্থে জুয়া। যারা খেলে তারাও জানে না যে কারা এই অ্যাপসগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে। টাকা কখন আসছে, কখন যাচ্ছে। হারলে মনে হচ্ছে, পরের দানেই পাবো। জিতলে মনে হয়, আরেকবার ধরে দেখি, বাধতেও তো পারে। সব মিলিয়ে একটা ঘোরের মধ্যে সময় চলে যায়। অনলাইনে জুয়া খেলার সাইটগুলো নেট দুনিয়ায় ‘বেটিং সাইট’ নামে পরিচিত। সাইটগুলোতে অ্যাকাউন্ট খুলে নিবন্ধিত হয়ে ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে চিপস, বিট কয়েন বা অনলাইন মুদ্রা (ডিজিটাল কারেন্সি) কিনতে হয়। এরপর নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা দিয়ে জুয়া খেলায় অংশ নিতে হয়। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ ব্যাপারে কথা হয় এক যুবকের সাথে। তিনি বলেন, আমার বর্তমানে কোন কাজ নেই। আমি গেম খেলে প্রতিদিন 
৫০০ থেকে ১০০০ টাকা ইনকাম করি। কিন্তু এই খেলায় জিতার চেয়ে হারতে হয় বেশি। তারপরও যখন হারি তখন পরবর্তীতে বেশি পাওয়ার আশায় আবারও খেলি। এভাবেই লাভ- লোকসানের মধ্য দিয়েই কেটে যায় দিনের পর দিন।
সমাজের বিশিষ্টজনদের মতে, এটি হচ্ছে একটি সামাজিক ব্যাধি । এটি প্রতিরোধে সরকারি প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, দেশের প্রতিটি জেলা উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিসহ সমাজের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং রাজনৈতিক গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের আন্তরিক সহযোগিতা ছাড়া এই ব্যাধি কখনোই সমাজ থেকে নির্মূল করা কখনোই সম্ভব নয়।
এব্যাপারে সমাজের বিশিষ্টজনরা বিভিন্ন মত প্রকাশ করে তারা বলেন, কটিয়াদী থেকে জুয়া নামক ব্যাধি থেকে যুবসমাজকে অন্ধকারের পথ থেকে আলোর পথে ফিরিয়ে আনা সম্ভব, তবে সেটা হতে হবে আইন শৃংখলাবাহিনী ও প্রতিটি জেলা- উপজেলা প্রশাসনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও ফলপ্রসূ কিছু পদক্ষেপের মাধ্যমে। প্রশাসনের উচিৎ প্রতিটি গ্রাম, পাড়া-মহল্লার বিশিষ্ট জনদের এবং প্রতিটি ওয়ার্ড, ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের সাথে প্রতি তিন মাস পর পর সমাজের বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ বিষয়ক আলোচনা ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করা। যুবসমাজকে এই পথ থেকে দূরে রাখার জন্য বিভিন্ন খেলাধুলা ও জনকল্যাণমূলক কাজে অংশগ্রহণে তাদের উদ্বুদ্ধ করা। বিশিষ্টজনরা মনে করেন, অনলাইন জুয়া যদি অবিলম্বে নিয়ন্ত্রণ করা না হয়, তা হলে এটি দেশের একটি বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠীকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবে। তাই যত দ্রুত সম্ভব, কঠোর আইন প্রয়োগ, প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা, পারিবারিক সচেতনতা এবং সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে এই সমস্যা দমন করতে হবে।

এই বিভাগের আরোও খবর

Logo