কুড়িগ্রাম–১ আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে আজ শনিবার বিকেলে নাগেশ্বরীতে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঘোষিত সম্ভাব্য প্রার্থী আলহাজ্ব সাইফুর রহমান রানা’র পরিবর্তে ডা. মো. ইউনুছ আলীকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে বিকেল ৪টায় নাগেশ্বরী মুক্তমঞ্চ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি পৌর এলাকার প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে পুনরায় মুক্তমঞ্চে ফিরে এসে শেষ হয়।
বিক্ষোভ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিএনপির বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীদের ঢল নামে শহরজুড়ে। দলীয় পতাকা, ব্যানার এবং শ্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো পৌর এলাকা। মাঠের তৃণমূল নেতাকর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে আয়োজিত এ কর্মসূচি স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা দিয়েছে বলে পর্যবেক্ষকদের মন্তব্য।
মুক্তমঞ্চে আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নাগেশ্বরী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নাজির হোসেন, ভুরুঙ্গামারী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আলহাজ্ব আব্দুস সালাম, নাগেশ্বরী উপজেলা বিএনপির সদস্য ইব্রাহিম আলী এবং কচাকাটা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মেম্বার। এছাড়াও বিভিন্ন ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করেন যে ঘোষিত সম্ভাব্য প্রার্থী আলহাজ্ব সাইফুর রহমান রানা মাঠপর্যায়ে গ্রহণযোগ্যতায় পিছিয়ে আছেন। তাদের মতে, রানা’র নেতৃত্বে আসনটি পুনরুদ্ধার করা কঠিন হয়ে পড়বে। বক্তারা বলেন, স্থানীয়ভাবে তার তেমন জনসংযোগ নেই, তৃণমূলে শক্ত ভিত্তিও গড়ে ওঠেনি—এমন অবস্থায় তাকে চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করা হলে তা হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।
বক্তারা আরও বলেন, স্থানীয় পর্যায়ের জরিপ ও গণসংযোগে দেখা গেছে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বড় অংশ ডা. মো. ইউনুছ আলীর ওপর আস্থা রাখছেন। তার সততা, পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি, কর্মগুণ এবং দীর্ঘদিনের চিকিৎসাসেবার অভিজ্ঞতা তাকে এ আসনের জন্য আরও উপযুক্ত করে তুলেছে। তৃণমূলের দাবি, ডা. ইউনুছ আলীকে মনোনয়ন দিলে বিএনপির বিজয়ের সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।
সমাবেশে নেতাকর্মীরা জানান যে ডা. ইউনুছ আলী একজন শিক্ষিত ও মার্জিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। চিকিৎসা পেশায় দীর্ঘদিন মানুষের সেবা করায় তার জনভিত্তি বিস্তৃত। বক্তারা মনে করেন, জনগণের প্রত্যাশা ও বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনা করলে তাকে প্রার্থী করা ছাড়া বিকল্প নেই।
কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উদ্দেশে বক্তারা বলেন, মাঠপর্যায়ের বাস্তবতা উপেক্ষা করে সিদ্ধান্ত নিলে কুড়িগ্রাম–১ আসনটি হারানোর ঝুঁকি তৈরী হবে। তারা কেন্দ্রের প্রতি অনুরোধ জানান যে ঘোষিত সম্ভাব্য প্রার্থীর মনোনয়ন পুনর্বিবেচনা করে তৃণমূলের মতামতকে প্রাধান্য দিতে হবে।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন যে প্রার্থী ঘোষণার ক্ষেত্রে তৃণমূলের মতামত গুরুত্ব পায়নি। তাদের দাবি, গণমানুষের অনুভূতি ও সংগঠনের স্বার্থ রক্ষায় মনোনয়ন প্রশ্নে নতুন করে ভাবা জরুরি।
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সংগঠিতভাবে আয়োজিত এ বিক্ষোভ বিএনপির ভেতরকার মতপার্থক্যকে আরও স্পষ্ট করেছে। পাশাপাশি কোন নেতৃত্বের প্রতি তৃণমূলের আস্থা বেশি—তাও পরিষ্কার হয়ে উঠেছে।
প্রায় এক ঘণ্টার এ গণসমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। পুরো কর্মসূচিতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।







