হতদরিদ্র নারীদের কর্মসংস্থান দিচ্ছে উলিপুরের হস্তশিল্প কারখানা

মোঃ রেজাউল ইসলাম প্রকাশিত: ১৮ ফেব্রুয়ারী , ২০২৫ ১৭:৩৩ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারী , ২০২৫ ১৭:৩৩ পিএম
হতদরিদ্র নারীদের কর্মসংস্থান দিচ্ছে উলিপুরের হস্তশিল্প কারখানা
উলিপুরের প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকায় নদী রিসার্স এন্ড ট্রেইনিং সেন্টার নামে একটি হস্তশিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে, যা অসহায় ও দরিদ্র নারী শ্রমিকদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে।

উলিপুরের প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকায় নদী রিসার্স এন্ড ট্রেইনিং সেন্টার নামে একটি হস্তশিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে, যা অসহায় ও দরিদ্র নারী শ্রমিকদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। ঢাকার গুলশানের বাসিন্দা জাকিয়া শাহারুদ খান রুনা এই কারখানাটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি নিরাশির পাতার নামক এলাকায় নিজস্ব জায়গায় কারখানাটি গড়ে তোলেন, যেখানে ২০২০ সাল থেকে অর্ধশতাধিক নারী শ্রমিক কাজ করছেন। এই কারখানায় অদক্ষ নারী শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলা হয় এবং তাদের জন্য কাজের সুযোগ তৈরি করা হয়। বিশেষ করে প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকার হতদরিদ্র ও অসহায় বিধবা নারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ দেওয়া হয়। এই কারখানায় নারী শ্রমিকরা বিভিন্ন ডিজাইনের শাড়ি, বেনারশি, সিল্ক, হাফসিল্ক, ওড়না, গামছা ও থান কাপড় তৈরি করেন। তাদের তৈরি পোশাক জেলার গণ্ডি পেরিয়ে দেশ-বিদেশের নামিদামি শোরুমে পৌঁছেছে। কারখানার মালিক জাকিয়া শাহারুদ খান রুনা শুধু এই কারখানাই নয়, ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে জাহাজের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত লাইফবয় ফ্রেন্ডশিপ ও এমিরাত ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালেও দরিদ্র মানুষের চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছেন। তিনি গরিব ও স্বামী পরিত্যক্ত বিধবা নারীদের আত্মসামাজিক উন্নয়ন ও আয়বর্ধনমূলক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছেন।সরেজমিনে তবকপুর ইউনিয়নের উত্তর সাদুল্যাপুর নিরাশির পাতার এলাকায় নদী রিসার্স এন্ড ট্রেইনিং সেন্টার কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, আধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে দক্ষ নারী শ্রমিকরা উইভিং, ড্রাইং, প্রিন্টিং, টেইলারিং ও হাতের কাজের মাধ্যমে শাড়ি, বেনারশি, সিল্ক, হাফসিল্ক, ওড়না, নেপকিন, ডাষ্টার, গামছা, থান কাপড়, কুশন কভার, থ্রিপিচ এবং টেইলারিংয়ের মাধ্যমে মাক্স, এ্যপরোন, শার্ট, প্যন্ট, রানার, প্লেসমেট ও ব্যাগ তৈরি করছেন। তৈরি পোশাকের উপর হাতের নকশা করা হয়, যা নারী শ্রমিকদের দক্ষতা ও পরিশ্রমের প্রতীক। কারখানায় কর্মরত নারী শ্রমিকরা তাদের কাজে সাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন এবং তাদের উপার্জিত আয় দিয়ে স্বচ্ছলভাবে সংসার চালাচ্ছেন। কারখানায় কর্মরত রোকছানা পারভীন (২৪), মোসলেমা বেগম (৩০) ও শিরিনা বেগম (৪০) সহ অন্যান্য নারী শ্রমিকরা জানান, তারা সবাই স্বামী পরিত্যক্ত বিধবা। বাইরে কাজ করে খাওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না, কিন্তু এই কারখানায় প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করে তারা মাসে ৩ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করছেন, যা দিয়ে তারা সংসার চালাচ্ছেন। তারা প্রত্যন্ত গ্রামে এই হস্তশিল্প কারখানা গড়ে উঠায় আনন্দিত ও গর্বিত। কারখানার সিনিয়র ম্যানেজার মোখলেছুর রহমান জানান, এই কারখানায় তৈরি পোশাক ঢাকার বনানী ও ধানমন্ডি এলাকার শোরুমে বিক্রি হয়। এছাড়া সীমিত আকারে লুকজেমবার্গ, নেদারল্যান্ড, ইতালি ও জার্মানিতে রপ্তানি করা হয়। তিনি আরও বলেন, এই কারখানায় নারী শ্রমিকদের দক্ষ করে তোলার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে, যা তাদের আত্মনির্ভরশীল করে তুলছে। তবকপুর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান বলেন, এই হস্তশিল্প কারখানা গড়ে উঠায় ইউনিয়নবাসী গর্বিত। এই কারখানার মাধ্যমে হতদরিদ্র ও বিধবা নারীরা সাবলম্বী হচ্ছেন এবং তাদের সন্তানদের পড়াশোনার খরচ চালাতে পারছেন। তিনি এই ধরনের হস্তশিল্প কারখানার প্রসার কামনা করেন।

এই বিভাগের আরোও খবর

Logo