স্ত্রীর নির্যাতনের শিকার স্বামী নারী কর্তৃক উল্টো নির্যাতনের মামলা

মোঃ ইসমাইল ইমন প্রকাশিত: ২৮ অক্টোবর , ২০২৩ ১২:৪৭ আপডেট: ২৮ অক্টোবর , ২০২৩ ১২:৪৭ পিএম
স্ত্রীর নির্যাতনের শিকার স্বামী নারী কর্তৃক উল্টো নির্যাতনের মামলা
স্ত্রীর নির্যাতনের শিকার স্বামী, স্বামী ও শশুর বাড়ির লোকজনকে ফাঁসাতে নারী কর্তৃক উল্টো নির্যাতনের মামলা। পারিবারিক ও বংশীয় ক্ষমতার জোর দেখিয়ে স্বামী ও শশুর বাড়ির লোকজনের সাথে বার বার শারীরিক নির্যাতনের ঘটনায় জড়াচ্ছে চট্টগ্রাম নগরীর ডবলমুরিং থানাধীন মিস্ত্রীপাড়া এলাকার মধুর বাড়ির মৃত সালামত আলীর সন্তান মোঃ ইসলাম মিয়ার স্ত্রী নিগার সুলতানা।

স্ত্রীর নির্যাতনের শিকার স্বামী, স্বামী ও শশুর বাড়ির লোকজনকে ফাঁসাতে নারী কর্তৃক উল্টো নির্যাতনের মামলা। পারিবারিক ও বংশীয় ক্ষমতার জোর দেখিয়ে স্বামী ও শশুর বাড়ির লোকজনের সাথে বার বার শারীরিক নির্যাতনের ঘটনায় জড়াচ্ছে চট্টগ্রাম নগরীর ডবলমুরিং থানাধীন মিস্ত্রীপাড়া এলাকার মধুর বাড়ির মৃত সালামত আলীর সন্তান মোঃ ইসলাম মিয়ার স্ত্রী নিগার সুলতানা।


এই প্রতিবেদকের হাতে আসা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে গৃহবধূ নিগার তার স্বামীকে পর পর একাধিকবার চর থাপ্পড় দিচ্ছে! অন্য আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে একই নারী তার ভাসুরকে জুতা দিয়ে মারছে এবং অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করছে। আরো একটি ভিডিওতে দেখা গেছে ঐ নারী কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে তার ভাসুরের ছেলেকে ধাক্কা দিয়ে সিড়ি থেকে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করছে।

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরের ২৯ তারিখ পারিবারিকভাবে সামাজিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বৈবাহিক দাম্পত্য জীবন শুরু হয় ইসলাম মিয়া ও নিগার সুলতানার। বিয়ের পর থেকেই শশুর বাড়ির খুটিনাটি বিষয় নিয়ে স্বামী ও তার পরিবারের লোকজনের সাথে প্রায়সময়ই বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হতো গৃহবধূ নিগার সুলতানা। নিগার সুলতানার বড় ভাসুর (ইসলাম মিয়ার ভাই) মঞ্জুর আলম জানান, বিয়ের পর থেকে নিগার প্রায়শই আমার ভাই ইসলামের সাথে ছোট খাট বিষয় নিয়ে ঝগড়া করতো। তাছাড়া নিগার চাইতো আমার ভাই যাতে আমাদের অন্যান্য ভাইদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে অন্যথায় সে আমার ভাইকে গালমন্দ করতো।

ইসলাম মিয়ার বড় ভাইয়ের ছেলে তানজু জানান, আমির চাচির কথা কি আর বলবো। গত কিছুদিন আগে উপর থেকে কোন একটি প্লাস্টিকের বোতল বা জুসের প্যাকেট নিচে পড়াকে কেন্দ্র করে আমার চাচি নিগার সুলতানা আমি এবং আমার মাকে গালমন্দ করে। এতে আমরা প্রতিবাদ করলে নিগার সুলতানা হাতে থাকা মোবাইল দিয়ে আমাদের ভিডিও ধারণ করতে থাকে, এ অবস্থায় আমি তার হাতের মোবাইলটি কেড়ে নিয়ে ভিডিও করতে বাধা দিলে সে আমার শরীরের দিকে তেড়ে আসে একপর্যায়ে মোবাইল কেড়ে নিয়ে আমাকে ধাক্কা দিয়ে সিড়ি থেকে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করে, অল্পের জন্য আমি বেঁচে যায়। যা আপনারা সিসিটিভির ভিডিওতে দেখতে পাবেন।

নিগার সুলতানার ননস (ইসলাম মিয়ার বড় বোন) রোকেয়া বেগম জানান, আমার ভাইয়ের স্ত্রী নিগার সুলতানা পরকিয়ায় আসক্ত ছিলো। যখনই বাপের বাড়ি যেতাম, নিগারকে মোবাইলে চ্যাটিং নিয়ে ব্যস্ত দেখতাম, বাড়িতে কাজ না করার জন্য সে বুয়া রেখে নিজে ব্যস্ত থাকতো মোবাইল নিয়ে। আমরা বোনেরা বাপের বাড়ি যাওয়া সে পছন্দ করতো না। গেলেও সে আমার ভাইকে ভুলভাল বুঝিয়ে আমাদের থেকে আলাদা রাখার চেষ্টা করতো। এগুলো নিয়ে আমার ভাইয়ের সাথে ঝগড়া লাগতো তার। শুধু তাই নয়, আমার ভাইয়ের বাসায় মা মরা দুজন ভাগ্নি থাকতো, তাদের লেখাপড়া ও দেখাশোনা আমরা ভাই বোনেরা মিলে করতাম। তাতেও আমার ভাইয়ের স্ত্রীর সহ্য হয়না। তারা নাকি নানার বাড়িতে থাকতে পারবেনা। তাদের দিয়ে ঘরের বিভিন্ন কাজ করিয়ে খাওয়া দাওয়া দিয়ে তাদের কষ্ট দিতো। 

তিনি আরো জানান, আমার ভাইদের ভবনটি আমার ভাইয়ের নামে ব্যাংক লোনে নির্মিত। তবে ভাইয়েরা সকলে মিলে এই লোন পরিশোধ করছে।কিন্তু আমার ভাইয়ের স্ত্রী চাই পুরো ভবনটি তার নামে লিখে দিতে। এসব নিয়েই তার সাথে আমার ভাইয়ের ঝগড়া চলতো। একটা সময় আমার ভাইয়ের গায়েও হাত তুলতো নিগার। যা আপনারা ভিডিও দেখলে বুঝতে পারবেন। সবশেষে ঝগড়া ঝাটির বিভিন্ন অযুহাতকে কেন্দ্র করে আমার ভাইসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের ফাঁসাতে যৌতুকের দায়ে মারধরের নাটক সাজিয়ে ডবলমুরিং থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন নিগার সুলতানা। রোকেয়া আরো জানান, আমার ভাইরা এ মামলা থেকে জামিন নিতে হাইকোর্টে গিয়েছেন। তারা জামিন নিয়ে আসলে তাদের মুখ থেকে আরো ঘটনা জানতে পারবেন। 

পরিবারের সদস্যদের দাবি যৌতুকের বিষয় নিয়ে এমন কোন ঘটনাই ঘটেনি। উল্টো ঐ নারী বিভিন্ন অজুহাতে পরিবারের সদস্যদের সাথে খারাপ আচরণ করতো এবং কথায় কথায় তার ভাই ও বহিরাগতদের এনে তাদের শাসিয়ে যেত। পাশ্ববর্তী প্রতিবেশীদের সাথে কথা বললে তারা ঐ নারীর বিষয়ে মুখ খুলতে ভয় পান। বলেন, আমরা সত্য কথা বলতে গেলে তার ভাইকে দিয়ে আমাদের হামলা করতে পারে। 

এদিকে ভুক্তভোগী ইসলাম মিয়া তার স্ত্রীর নির্যাতনের শিকার হয়ে গত ১৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্ত্রী নিগার সুলতানা সহ মোট ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে (সিআর মামলা নং: ১৭০০/২০২৩) আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে স্থানীয় থানায় তদন্তের আদেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন তাদের আইনজীবী মো: মুন্না। মামলায় অভিযুক্তরা হলেন, ১/ নিগার সুলতানা, ২/ নুরুল হুদা মিটু ( নিগার সুলতানার ভাই), ৩/ সাজ্জাদ হোসেন বিজয় ( নিগার সুলতানার ভগ্নিপতি) ও ৪/সাবরিনা সুলতানা তানিয়া ( নিগার সুলতানার বোন)।

মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ১৬/১০/২০২৩ ইং রাত আনুঃ ১০.০০ ঘটিকা হইতে ১২.০০ ঘটিকার সময় ১নং আসামী নিগার সুলতানা অপরাপর আসামীগণকে মোবাইল মারফত ডাকিয়া নিয়া আসেন এবং ১নং আসামীর দেনমোহরের পরিশোধ স্বরূপ বাদীর পৈত্রিক সম্পত্তির একটি ফ্ল্যাট রেজিষ্টার্ড কবলা মূলে লিখে দেওয়ার জন্য চাপ প্রদান সহ ভয়ভীতি, হুমকি ও গালিগালাজ করতে থাকে। উক্ত বিষয় বাদী ইসলাম মিয়া আপত্তি করিলে তৎক্ষণাৎ ১নং আসামী নিগার সুলতানা উত্তেজিত হইয়ে বাদীকে চড়- থাপ্পর কিল, ঘুষি মারতে থাকে এবং ২-৪নং আসামী পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বাদীর গৃহে অনধিকার প্রবেশ করতঃ কাঠের বাটাম দিয়া বাদী ইসলাম মিয়াকে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে। বাদী মাটিতে পড়িয়া গেলে ২-৪নং আসামীর নির্দেশে ১নং আসামী বাদীর বুকের উপর উঠিয়া হত্যার উদ্দেশ্যে দুই হাত দিয়া গলা চাপিয়া ধরে এবং অপরাপর আসামীগণ বাদীর হাত ও পা চাপিয়া ধরে। তৎক্ষণাৎ বাদী গোংরানী দিয়া বহুকষ্টে ধাক্কাদিয়ে ১নং আসামীকে সরাইয়া দিয়া চিৎকার শুরু করে। পরবর্তীতে ১নং আসামী বাদীর আলমারী হইতে ২২ ক্যারেটের ১২ ভরি স্বর্ণালংকার, যাহার অনুমানিক মূল্য ১২,০০,০০০/- টাকা, (বিল্ডিং নির্মাণের জন্য ব্যাংক হইতে লোনকৃত) নগদ ৫,০০,০০০/- টাকা, বাদীর হেফাজতে থাকা ১টি হোয়াই নোভা আই-৩, রেডমি-১০-এ ব্র্যান্ডের মোবাইল সেট, যাহার আনুমানিক মূল্য-৪০,০০০/-টাকা সহ প্রয়োজনীয় দলিলপত্রাদি নিয়া ২-৪নং আসামীকে বুঝাইয়া দিতে গেলে বাদী দৌড়াইয়া গিয়া স্বর্ণ, টাকা, দলিলপত্রাদি আটকাইতে গেলে ২-৪নং আসামী বাদীকে লাথি ও ঘাড় ধাক্কা দিয়া সরাইয়া দেয়। নাবালক সন্তান উক্ত ঘটনা দেখিয়া কান্নাকাটি শুরু করিয়া পিতা বাদীকে জড়াইয়া ধরিলে ১-৪নং আসামী নাবালক ছেলেটিকে ধাক্কা দিয়া সরাইয়া বাদীকে আবারও এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে। পিতা ও পুত্রের শোর- চিৎকারে বাদীর অন্যান্য পরিবারের সদস্যরা দৌড়াইয়া আসিলে আসামীগণ বাদীকে বলে যে, বেশী বাড়াবাড়ি করিলে নীচে রাখা সিলেন্ডার গ্যাসের বোতল আনিয়া আগুন দিয়া ঘর জ্বালাইয়া দিবে এবং পিতা ও পুত্রকে এক সঙ্গে জ্বালাইয়া দিবে এবং প্রয়োজনে বাদী ও সন্তানকে হত্যা করিয়া লাশ গুম করিয়া কর্ণফুলী নদীতে ফেলিয়া দিবে ইত্যাদি ভয়ভীতি হুমকি মূলক কথাবার্তা বলিয়া চলিয়া যায় এবং যাওয়ার সময় বাদীর ফ্ল্যাটে রক্ষিত সিসি ক্যামরা ডিভিআর রেকর্ড সিস্টেম চুরি করিয়া নিয়া যায়। 

এ বিষয়ে নিগার সুলতানার সাথে মামলার এজাহারে দেয়া মুঠোফোন নাম্বারে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। জানা গেছে, এর আগে নিগার সুলতানা ও তার পরিবারের বক্তব্য নিতে কয়েকজন সংবাদকর্মী তার পৈতৃক বাড়িতে গেলে মামলার ২ নং আসামি নিগার সুলতানার ভাই নুরুল হুদা মিটু ও তার দলবলের রোষানলে পড়ে সংবাদকর্মীরা। একপর্যায়ে তাদের ক্যামেরা ছিনিয়ে ভেঙ্গে ফেলার চেষ্টা করে পরে ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ ডিলিট করে দেয় তারা। যদিও অনুমতি সাপেক্ষে তাদের বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছিলো।

এই বিভাগের আরোও খবর

Logo