সরিষাবাড়ীতে লাইসেন্স বিহীন মাতৃছায়া হাসপাতালে সিজারকালে মা ও নবজাতকের মৃত্যু

মোঃ আব্দুর রাজ্জাক প্রকাশিত: ১০ নভেম্বর , ২০২৪ ১৮:২২ আপডেট: ১০ নভেম্বর , ২০২৪ ১৮:২২ পিএম
সরিষাবাড়ীতে লাইসেন্স বিহীন মাতৃছায়া হাসপাতালে সিজারকালে মা ও নবজাতকের মৃত্যু
নেই কোন ডাক্তার ও সার্জিক্যাল যন্ত্রাংশ। তবুও দেদারসে চলছে অপারেশন। কখনো মা, কখনো শিশু, কখনো আবার মা-শিশু উভয়ের ভুল সিজারে হচ্ছে মৃত্যু। এমনই একটি ভুল সিজারের মা ও নবজাতকের মৃত্যু ঘটেছে জামালপুরে সরিষাবাড়ী উপজেলার অনুমতিহীন বেসরকারি মাতৃছায়া নামক হাসপাতালে।

নেই কোন ডাক্তার ও সার্জিক্যাল যন্ত্রাংশ। তবুও দেদারসে চলছে অপারেশন। কখনো মা, কখনো শিশু, কখনো আবার মা-শিশু উভয়ের ভুল সিজারে হচ্ছে মৃত্যু। এমনই একটি ভুল সিজারের মা ও নবজাতকের মৃত্যু ঘটেছে জামালপুরে সরিষাবাড়ী উপজেলার অনুমতিহীন বেসরকারি মাতৃছায়া নামক হাসপাতালে।শুক্রবার (৮ নভেম্বর) সকালে ভুল সিজারে মৃত্যু বরণ করা মা ও নবজাতকের লাশ তড়িঘড়ি করে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। জানা যায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন মেইন রোড়ের পশ্চিম পাশে অবস্থিত মাতৃছায়া হাসপাতালে এ অপারেশনটি করা হয়।মৃত্যুবরণকারী নারী আল্পনা আক্তার (২২)। তিনি সরিষাবাড়ী পৌরসভার মূলবাড়ি গ্রামের দিনমজুর শ্রমিক উজ্জ্বলের স্ত্রী। তাদের ৬ বছরের আরেকটি ছেলে সন্তান রয়েছে। সিজারিয়ান অপারেশনকারী গাইনি সার্জনের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তবে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রাতেই জরিমানা হিসেবে ব্যাংকের একটি চেক ওই নারীর স্বামীর হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।মৃত্যুবরণকারী আল্পনা আক্তারের শ্বশুর আব্দুল মান্নান মণ্ডল জানান, এক সন্তানের জননী আল্পনা। তার ইতোপূর্বেও কিডনিতে পাথর হওয়ায় জেলা শহরের একটি ক্লিনিকে অপারেশন করা হয়েছিল। এরপর দ্বিতীয়বারের মতো তিনি সন্তানসম্ভবা হলে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে প্রসবব্যথা উঠলে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।পরে ওখান থেকে কম খরচে সিজার করিয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে শাবনুর নামে এক দালাল রোগীকে ও তার স্বামীকে সঙ্গে করে মাতৃছায়া হাসপাতালে নিয়ে যায়। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পার্শ্ববর্তী ধনবাড়ি থেকে একজন গাইনি সার্জন এনে কোনোপ্রকার পরীক্ষানিরীক্ষা ও অ্যানেস্থেশিয়া বিশেষজ্ঞ ছাড়াই একই ব্যক্তি অজ্ঞান এবং অপারেশন সম্পন্ন করেন। অপারেশনকালে নবজাতকের মৃত্যু হয়। এর কিছুক্ষণ পর প্রসূতির অবস্থাও অবনতি হলে ময়মনসিংহ স্থানান্তর করলে পথিমধ্যে তিনিও মারা যান।অভিযোগ রয়েছে, আল্পনা আক্তারের পরিবারকে ম্যানেজ ও ঘটনা ধামাচাপা দিতে ওইদিন রাতেই জরিমানা হিসেবে ব্যাংকের একটি চেক তুলে দিয়েছে হাসপাতালের মালিক তারা মিয়া। যার প্রেক্ষিতে শুক্রবার সকালে তড়িঘড়ি করে মুলবাড়ী পৌর গোরস্থানে মা ও নবজাতকের দাফন সম্পন্ন করা হয়।বিভিন্ন সূত্র জানায়, ইতোপূর্বেও একই হাসপাতালে সিজারের সময় প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। সরকারি কোনো অনুমোদন না থাকলেও মাতৃছায়া হাসপাতালে অবৈধভাবে অপারেশন থিয়েটার বসিয়ে চলছে কার্যক্রম। এসব ঘটনার পরেও কেন জানি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নির্বিকার।অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে সরিষাবাড়ী মাতৃছায়া হাসপাতালের সত্ত্বাধিকারী নজরুল ইসলাম তারা বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। এবং বলেন, এখানে তেমন কোনো অপারেশনই হয় না, হলেও হঠাৎ-মটাৎ।এব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকতা ডা. শফিকুল ইসলামের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি দি বাংলা ইন্ডিপেন্ডেন্ট  কে বলেন, সরিষাবাড়ীতে একটি প্রাইভেট হাসপাতালের পূর্ণাঙ্গ অনুমোদন রয়েছে। আর একটির লাইসেন্স নবায়নের জন্য কাগজপত্র জমা দিয়েছে। কিন্তু মাতৃছায়া হাসপাতালের লাইসেন্স বা অপারেশনের কোনো অনুমোদন নেই। অননুমোদিত অপারেশন কিংবা অবহেলাজনিত কারণে রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে তা খতিয়ে দেখা হবে।


এই বিভাগের আরোও খবর

Logo