মাদক, জুয়া ও চাঁদাবাজি নিয়ে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা।রাজবাড়ী জেলায় গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে ছাত্রদল কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে ফারুক সরদার (২৮) নামে ছাত্রদলের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। শনিবার (১২ অক্টোবর) দিবাগত রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ফারুক দৌলতদিয়া ইউনিয়নের সোহরাব মণ্ডলপাড়ার পল্লী চিকিৎসক শহিদ সরদারের ছেলে। তিনি দৌলতদিয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের কর্মী ছিলেন বলে ছাত্রদলের স্হানীয় নেতারা দাবি করেন। ফারুক বিবাহিত এবং এক বছর বয়সী এক কন্যা সন্তানের জনক।
হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন ফারুকের বন্ধু আলামিন (২১) নামে আরেক যুবক। সে দৌলতদিয়া শামসু মাষ্টার পাড়ার আব্দুস সালামের ছেলে। খবর পেয়ে রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) শরীফ আল রাজীব, গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি রাকিবুল ইসলাম সহ পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেন।
নিহত ফারুকের ভাই মনিরুজ্জামান দাবি করে জানান, দুর্গাপূজা উপলক্ষে পূজা শুরুর দিন থেকে দৌলতদিয়া রেলস্টেশনের পাশে মেলা বসেছে। ওই মেলায় জুয়ার আসর বসায় স্থানীয় রিপন ও তার সহযোগীরা। মেলার বিভিন্ন দোকান থেকে প্রতিদিন চাঁদাও তুলছিল তারা। তাদের জুয়ার আসর বসানোর ও চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করে আসছিল ফারুক। শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে রিপনের মুদি দোকানে গিয়ে আবারও রিপনকে চাঁদাবাজি ও জুয়ার আসর বন্ধ করতে বলে ফারুক। এ সময় রিপন ও তার সহযোগীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে ফারুকের মাথা, পিঠ, দুই পা ও বাম হাতে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মারাত্মক জখম করেন।
দ্রুত তাকে উদ্ধার করে প্রথমে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। কিন্তু অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে রাত ১১ টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক ফারুককে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে প্রত্যক্ষদর্শীসহ স্থানীয় কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, যৌন পল্লীর অভ্যন্তরে ও দুর্গা পূজার মেলায় জুয়া ও চাঁদার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে ফারুক ও রিপনের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। এছাড়া শুষ্ক মৌসুমে চর এলাকার মাটি ও বালু ব্যবসার নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে পূর্ব থেকেই দ্বন্দ্ব চলে আসছিল এ সকল দ্বন্দ্বের জেরে দুদিন আগে দু'গ্রুপের মধ্যে মারামারি হয়। শনিবার রাতে ফারুক ৪/৫ জন বন্ধু মিলে দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর ১ নং গেট দিয়ে যৌন পল্লীর ভেতরে রিপনকে (৩০) খুঁজতে ছুটে যায়। এসময় ফারুকের বাবা তাকে আটকানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পল্লীর ভেতরে ফারুক রিপনের দোকানে গিয়ে তার উপর চড়াও হন। এক পর্যায় রিপন পাশে থাকা ডাব কাটার ধারালো দা দিয়ে ফারুকের উপর পাল্টা হামলা করে এবং এলোপাথাড়ি কুপিয়ে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে পালিয়ে যায়। পরে স্হানীয় কয়েকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়। নিহত ফারুক ও হামলাকারী রিপন উভয়ই মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিল।
পুলিশ ফারুক হত্যার ঘটনায় হুমায়ুন (২৫) নামের এক যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। রিপন দৌলতদিয়া ইউনিয়নের আইনদ্দিন বেপারি পাড়ার রমজান ফকিরের ছেলে।