বেশি ভাড়ার আশায় প্রাণ এবং অটোরিকশা দুটোই হারালো স্কুল ছাত্র মাহাফুজ! নাটোরের বাগাতিপাড়ায় অতিরিক্ত ভাড়া দেওয়ার কথা বলে ১৭ বছর বয়সী দিদারুল ইসলাম মাহাফুজ নামে দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে হত্যা করে তার কাছে থেকে একটি অটো রিক্সা ছিনতাই করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। বুধবার (৪ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ফোনে বনপাড়া যাওয়ার কথা বলে রাত সাড়ে ৭টার দিকে ভাড়া করা অটোসহ তাকে ডেকে নেয় দুর্বৃত্তরা।
স্থানীয়রা জানায়, বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) সকালে উপজেলার জামনগর ইউনিয়নের দেবনগর খ্রিষ্টানপাড়া এলাকার একটি আমবাগানে মাহাফুজকে পড়ে থাকতে দেখে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করেন। নিহত দিদারুল ইসলাম মাহাফুজ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের চক গোয়াশ গ্রামের ভ্যান রিক্সা মেকানিক্স মো: দেলোয়ারের ছেলে এবং একই উপজেলার তোকিনগর আইডিয়াল হাইস্কুলের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, সংসারের অভাবের কারণে তার ফুফু একই এলাকার সাবানা বেগমের কাছে থাকতো এবং সংসারের হাল ধরতে লেখাপড়ার পাশাপাশি মাহাফুজ উপজেলা তমালতলা বাজারে ইজিবাইক মেকানিক বাবাকে কাজের সহযোগিতা করতো ও অটোরিক্সা চালিয়ে সংসারের খরচ যোগান দিত।
তার ফুফু সাবানা বেগম বলেন, বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মাহাফুজ প্রাইভেট পড়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়। তবে সে বের হওয়ার আগে মোবাইল ফোনে তার কোন এক বন্ধু একটি অটোরিকশা ভাড়ার কথা বললে সে পড়তে যাবেনা বলে। এ সময় তিনি তাকে বকা দিয়ে পড়তে যেতে বললে সে পড়াতে যাওয়ার জন্য বের হয়ে যায়। পরে রাত সাড়ে ১০টা বেজে গেলে তার ভাতিজা ফিরে না আসায় তার ভাই দেলোয়ারের কাছে মাহাফুজের খবর জানতে চেয়ে কোন খবর পাননি। নিহত মাহাফুজের স্বজনের আহাজারি।
নিহতের বাবা দেলোয়ার এই প্রতিবেদককে বলেন, তার সন্তান প্রায় সারাদিন আমার সাথেই কাজ করছিলো। সন্ধ্যায় তাকে একটি ভাড়ার কথা বলে ইজিবাইক চায়। পরে সে তারই এক আত্মীয়ের কাছ থেকে ১ ঘন্টার জন্য ইজিবাইক নেয়। কিন্তু রাত হলেও ফিরে না আসলে তাকে ফোন দিয়েও ফোন সংযোগে পাননি তারা। অবশেষে বোন ভাগিনাসহ সবাই মাহাফুজকে খোঁজা খুঁজি করেন।
দেবনগর এলাকার মোঃ রনি মণ্ডল বলেন, দেবনগর খ্রিষ্টানপাড়া এলাকার একটি আম বাগানে মাহাফুজকে পড়ে থাকতে দেখে ধোয়া নামের এক ব্যক্তি তাদের জানায়। পরে তারা সেখানে গিয়ে মাহফুজকে তার ঠিকানা জিজ্ঞাসা করলে সে শুধু তার বাবার নাম বলে। এ সময় তারা থানায় ফোন করে খবর দেয়। এরপর স্থানীয়দের সাথে নিয়ে তাকে আশংকাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বাগাতিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মোঃ সোহানুর রহমান বলেন, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। তারা তার বাম কানে, মুখে ও মাথায় আঘাত ও ক্ষতের চিহ্ন পেয়েছেন।
বাগাতিপাড়া মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ শফিকুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মুঠোফোনে জানান, খবর পেয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে সুরাতহাল শেষ করে মরদেহটি উদ্ধার করে এদিন বিকেলে ময়নাতদন্তের জন্য নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়। পুলিশ এই হত্যার রহস্য উদঘাটন এবং এর সাথে জড়িতদের আটকের জন্য কাজ শুরু করেছে বলেও জানান তিনি।